এ দিকে নজর দিন
- ২১ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০৫
নয়া দিগন্তের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি এক প্রতিবেদনে জানান, বিশ্ববাজারে দরপতনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে দেশের সাদা সোনা খ্যাত রফতানিমুখী হিমায়িত চিংড়িশিল্প। দুর্দিন যেন কাটছে না সাতক্ষীরার চিংড়িচাষি ও ব্যবসায়ীদের। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিশ্ববাজারে চিংড়ির চাহিদা কমে যাওয়ায় দেশীয় বাজারে এই সাদা সোনা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে চিংড়িচাষিরা। এতে উৎপাদন খরচের সাথে বিক্রয়মূল্যের তাল মেলাতে না পেরে অনেকেই সর্বস্বান্ত হতে বসেছে।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অধিদফতর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ২০ মের ঘূর্ণিঝড় আমফানে সাতক্ষীরায় মাছের ক্ষতি হয় ১৭৬ কোটি টাকা। এরপর ২০২১ সালের ২৬ মের ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে মাছের ক্ষতি ১৬ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত ২৭ জুলাই অতিবৃষ্টিতে এ জেলার চিংড়িচাষিদের ক্ষতি হয় ৫৩ কোটি টাকা।
সূত্র আরো জানায়, সাতক্ষীরায় ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত দেড় লাখ টনের বেশি রফতানিজাত চিংড়ি উৎপাদন হয়েছিল, যার রফতানি মূল্য সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে করোনা মহামারী ও বিশ্ববাজারে চিংড়ির দরপতনের কারণে গত দুই বছরে রফতানিযোগ্য এসব চিংড়ির বড় অংশই দেশীয় বাজারে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই জেলার প্রান্তিক চিংড়িচাষিরা।
জেলা মৎস্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, এ জেলায় বছরে প্রায় ৬০ হাজার নিবন্ধিত ঘেরে চিংড়ি চাষ করা হয়। এসব ঘেরে গত পাঁচ বছরে রফতানিজাত চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ৫২ হাজার ১৪৬ টন। এর মধ্যে বাগদা চিংড়ি এক লাখ ১৮ হাজার ৩০৮ টন ও গলদা চিংড়ির পরিমাণ প্রায় ৩৩ হাজার ৮৩৭ টন। উৎপাদিত এসব চিংড়ির রফতানিমূল্য সাত হাজার ৬০৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার বিছট এলাকার চিংড়ি উৎপাদনকারী নুরুল আলম বলেন, প্রায় দেড় যুগ ধরে চিংড়ি চাষ করে আসছি। প্রায় ২৮০ বিঘা জমি নিয়ে মাছের ঘের রয়েছে আমার। এসব ঘেরে উৎপাদিত চিংড়ি ৮০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। পোনার মূল্য আগের মতো থাকলেও এখন এক কেজি চিংড়ি সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। ডিপোমালিকরা মাছ কেনা কমিয়ে দেয়ায় বাধ্য হয়ে স্থানীয় বাজারে চিংড়ি বিক্রি করতে হচ্ছে। সে কারণে উৎপাদন খরচের সাথে বিক্রয়মূল্যের তাল মেলানো যাচ্ছে না। নুরুল আলম বলেন, গত দুই বছর ধরে শুধু লোকসানই গুনতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে চিংড়ি চাষ বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না।
একই কথা বলেন সদর উপজেলার সাইফুল ইসলাম বাবু। তিনি বলেন, বিগত পাঁচ-ছয় বছরের মতো চলতি মৌসুমেও আমি ৬৫ বিঘা জমির একটি ঘেরে চিংড়ি চাষ করেছি। তবে গত দুই-তিন বছর ধরে চিংড়ির ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও করোনা মহামারীর পাশাপাশি চিংড়িতে ভাইরাস রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। এ কারণে চিংড়ি চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ঘেরের মাছ স্থানীয় খোলাবাজারে বিক্রি করতে হলে উৎপাদন খরচই ওঠে না।
এ দিকে রফতানিজাত চিংড়িসহ অন্যান্য মাছ উৎপাদনেও সাতক্ষীরা খুবই সম্ভাবনাময় একটি জেলা। এ কথা জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, এখানকার মাটি, পানি ও আবহাওয়া চিংড়ি চাষের উপযোগী। প্রতি বছর এ জেলায় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার চিংড়ি উৎপাদন করা হয়। চিংড়ির পাশাপাশি ‘সাদা’ মাছেরও চাষ হচ্ছে এখানে। সূত্র জানায়, এ জেলায় এক লাখ টনেরও বেশি সাদা মাছ উৎপাদন হয়, যা এ জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। মাছ চাষের সাথে সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ সরাসরি সম্পৃক্ত।
সাতক্ষীরার চিংড়ি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান দীপা সি-ফুড লিমিটেডে ব্যবস্থাপনা পরিচালক দীনবন্ধু মিত্র বলেন, ‘ভারতে ব্যাপকভাবে ভেনামি জাতের চিংড়ি চাষ হচ্ছে। এই জাতের চিংড়ি প্রতি কেজির দাম প্রায় ৪০০ টাকা। দাম কম থাকায় ইউরোপের দেশগুলোতে ভেনামি চিংড়ির চাহিদা ব্যাপক। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে এ দেশেও ভেনামি চিংড়ি চাষের উদ্যোগ নিতে হবে।’
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, যেকোনো মাছ উৎপাদনে সাতক্ষীরার সুনাম রয়েছে। চিংড়িচাষিরা যাতে আগামীতে লাভবান হতে পারে সে জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে। বিশেষ করে প্রান্তিক পর্যায়ের মৎস্যচাষিদের প্রণোদনা দেয়ার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা