ঋণ পরিশোধে গতি আসবে কি
- ২০ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০৫
গণমাধ্যমের খবর থেকে এ তথ্য এখন সবার জানা, দেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ব্যাংক থেকে ঋণের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। নামে-বেনামে এ ঋণ নিয়ে তা কোথায় বিনিয়োগ করা হয়েছে কোনো হদিস নেই। নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা আমাদের জানা নেই।
এমন প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ীদের জন্য ফের বড় ধরনের ছাড় দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ব্যবসায়ীদের দাবির এক সপ্তাহ পার না হতেই বাংলাদেশ ব্যাংক গত রোববার ঋণ পরিশোধে বড় ধরনের ছাড় দিয়ে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে। গত ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে এক বৈঠকে দেশে চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কট বিবেচনায় আগামী বছরের জুন পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের খেলাপি না করার দাবি জানায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সংগঠনটির সভাপতি মো: জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কোভিড-পরবর্তী ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। সার্বিক প্রভাবে রফতানির কাঁচামালের দাম বাড়ায় খরচও বেড়েছে। এ জন্য এফবিসিসিআই সদস্যরা জানিয়েছেন যে তাদের ঋণ পরিশোধের বিশেষ সুবিধাটি আগামী ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত দেয়া হোক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জারি করা নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ব্যাংকঋণ পরিশোধে ব্যবসায়ীদের এ ছাড় দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, বহির্বিশ্বে যুদ্ধাবস্থা প্রলম্বিত হওয়ায় তার দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাবে শিল্পের উৎপাদনব্যয় বেড়েছে। ঋণগ্রহীতাদের প্রকৃত আয় কমে গেছে। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল রাখা এবং ঋণগ্রহীতাদের ঋণের কিস্তি পরিশোধ সহজ করতে মেয়াদি ঋণের বিপরীতে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কিস্তির ন্যূনতম ৭৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫০ শতাংশ ডিসেম্বরের শেষ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করা হলে ওই ঋণগুলো খেলাপি করা যাবে না। নতুন নির্দেশনায় বকেয়া কিস্তির অর্ধেক পরিশোধ করলে খেলাপি থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন ঋণগ্রহীতারা।
অনেক ব্যাংকার মনে করছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বড় এ ছাড়ে একদিকে প্রকৃত ঋণ আদায় না করে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ কম দেখানোর সুযোগ পাবে। অন্যদিকে বর্ধিত হারে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে হবে না। এ সুবাদে ব্যাংকের কৃত্রিম আয় বেড়ে যাবে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও অর্ধেক কিস্তি পরিশোধ করে খেলাপি থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। এতে নতুন ঋণ নিতে তাদের আর কোনো অসুবিধা থাকবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান, ব্যাংক খাতে এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের মোট ঋণ ১৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। খেলাপি ঋণের এই যখন অবস্থা; তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনায় ঋণের মেয়াদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে আরো এক বছর বেড়ে যাবে। সহজে অনুমেয়, খেলাপি ঋণ সেভাবে বাড়বে না। কারণ, অর্ধেক কিস্তি দিলে খেলাপি থেকে বাইরে থাকা যাবে।
এমন এক সময়ে ব্যবসায়ীদের এ ছাড় দেয়া হলো, যখন নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ব্যাংক খাতে আমানতকারীরা এক ব্যাংক থেকে টাকা তুলে অন্য ব্যাংকে জমা রাখছেন। ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকা মজুদের পরিমাণও বাড়ছে। সঙ্গত কারণে বলা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনার ফলে ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপনায় চাপ তৈরি হবে। কারণ, লক্ষ্য অনুযায়ী ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হবে সব ব্যাংক। তাই একথা বলা অযৌক্তিক নয় যে, নতুন এ নির্দেশনা শুধু বড় ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেয়ার জন্য। এতে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে কতটুকু গতি আনবে তা প্রশ্নসাপেক্ষই থেকে যায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা