২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
মেট্রোরেলে ভাড়ার হার

পুনর্বিবেচনা জরুরি

-

রাজধানীতে মেট্রোরেল চালু হবে এ মাসে। এটি দ্রুত যোগাযোগের ব্যবস্থা। বিশে^ দ্রুত যোগাযোগব্যবস্থা হিসেবে মেট্রোরেল প্রথম চালু হয় ১৮৬৩ সালে লন্ডনে। সেটি ছিল ভূগর্ভেস্থর রেল বা পাতাল রেল। এর প্রায় ১৬০ বছর পর আমরা এ সর্বাধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা পেতে যাচ্ছি। ছয় বছর ধরে নির্মাণের পর আগামী ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পের একাংশে মেট্রোরেল চলাচল উদ্বোধন করবেন। পরদিন ২৯ ডিসেম্বর থেকে যাত্রী পরিবহন শুরু হবে। এটি একটি বড় অর্জন তাতে সন্দেহ নেই।
কিন্তু শুরুতে কথা উঠেছে এর ভাড়ার পরিমাণ নিয়ে। সরকার যে ভাড়া নির্ধারণ করেছে তাকে অযৌক্তিক, এমনকি গণবিরোধী বলছেন কেউ কেউ। ঢাকার প্রথম এ মেট্রোরেলে সর্বনিম্ন ভাড়া ধরা হয়েছে ২০ টাকা। আর উত্তরা থেকে মতিঝিল স্টেশন পর্যন্ত ভ্রমণে ভাড়া গুনতে হবে ১০০ টাকা। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ধরা হয়েছে পাঁচ টাকা। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির নেতারা বলেছেন, ভাড়ার এ হার অযৌক্তিক ও গণবিরোধী। কেন তারা এমন মন্তব্য করছেন তার পক্ষে যুক্তিও তুলে ধরেছেন এক সংবাদ সম্মেলনে।
দৃষ্টান্ত উল্লেøখ করা হয়েছে, প্রতিবেশী দেশগুলোতে মেট্রোরেলের ভাড়ার হার। বলা হয়েছে, ঢাকা ও ভারতের কলকাতা শহরের আর্থসামাজিক অবস্থা, মাথাপিছু আয় ও গড় জিডিপি আয় বিবেচনায় নিলে প্রায় সব সূচকে দুই শহরের অবস্থান প্রায় সমান। কলকাতার মেট্রোরেলের ভাড়া ঢাকায় নির্ধারিত ভাড়ার অর্ধেক। অর্থাৎ ঢাকায় কিলোমিটার প্রতি ভাড়া দ্বিগুণ ধরা হয়েছে। এটি শুধু কলকাতার বাস্তবতা নয়, দিল্লিø, লাহোরসহ প্রতিবেশী সব দেশের মেট্রোর ভাড়ার চেয়ে বাংলাদেশের নির্ধারিত হার গড়ে দ্বিগুণের কাছাকাছি।
কর্তৃপক্ষের অবশ্য পাল্টা যুক্তির অভাব নেই। মেট্রোরেল স্থাপন ও এর পরিচালনায় বিপুল ব্যয়ের উল্লেøখ করে তারা বলেন, ভাড়ার নির্ধারিত হার ঠিকই আছে; কিন্তু কর্তৃপক্ষকে এ কথা জিজ্ঞাসা করার মতো কে আছে যে, মেট্রোরেল তো শুধু বাংলাদেশ একাই নির্মাণ করেনি। আশপাশের অনেক দেশই আমাদের আগে সেটি করেছে। তাদের ব্যয়ের চেয়ে কোন যুক্তিতে বাংলাদেশকে দ্বিগুণ এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে চারগুণ বেশি অর্থ ব্যয় করতে হলো। সেই বাড়তি ব্যয়ের বোঝা কেন যাত্রীসাধারণকে বহন করতে হবে?
প্রতিবেশী দেশগুলোর মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় জানা কোনো কঠিন বিষয় নয়। আমরা দেখেছি, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় মেট্রোরেল স্থাপনে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে সাত কোটি ৫০ লাখ ডলার, ভিয়েতনামের হ্যানয়ে ছয় কোটি ৫০ লাখ ডলার, ভারতের দিল্লিতে পাঁচ কোটি ছয় লাখ ডলার, পাকিস্তানের লাহোরে ছয় কোটি ৬১ লাখ ডলার। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এগুলোর কোনোটাই ১০-২০ বছর আগের কথা নয়। বাংলাদেশ যখন মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ঠিক সেই সময়েই ওই সব দেশের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যয় কেন অন্য সব দেশের চেয়ে তিন-চারগুণ বেশি হলো সেই ব্যাখ্যা কি জনগণ জানতে চাইতে পারে?
সুতরাং ভাড়া নির্ধারণে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অসার। রেলের ভাড়া কখনোই বাসের চেয়ে বেশি হতে পারে না। সেটি হলে তা হবে মেট্রোরেলকে শুরুতেই অসম প্রতিযোগিতার মুখে ঠেলে দেয়ার নামান্তর। এতে রেলযাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, অনেক যাত্রী রেল ভ্রমণে নিরুৎসাহিত হবেন, বেসরকারি বাস কোম্পানিগুলো একচেটিয়া লাভবান হবে। সবচেয়ে বড় কথা, মেট্রোরেল কার্যত অলাভজনক আরেকটি শ্বেতহস্তী হয়ে পড়তে পারে।
যাত্রীকল্যাণ সমিতি ভাড়া ৫০ শতাংশ কমানোর দাবি জানিয়েছে। সরকার গঠিত ভাড়া নির্ধারণ কমিটি প্রথমে যে ভাড়ার হার প্রস্তাব করেছিল এ দাবি তার সাথে সামঞ্জস্যশীল। আমরাও জনস্বার্থে মেট্রোর ভাড়ার হার পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাই।


আরো সংবাদ



premium cement