জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি
- ১৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
শীত ঋতু শুরু হতে না হতেই রাজধানী ঢাকার বাতাসে দূষিত বস্তুকণার পরিমাণ এত বেড়েছে যে, তা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। বিশ্বের বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার ভিজুয়ালের তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে ঢাকার বাতাস ছিল বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে দূষণের দিক দিয়ে শীর্ষে। ওই দিন সকাল সোয়া ১০টায় রাজধানীর বায়ুর মানের সূচক ছিল ৩৩৭, যা অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। আর বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরের মধ্যে ঢাকা ছিল দুই থেকে চারের মধ্যে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে ২ দশমিক ৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসের বস্তুকণার পরিমাণ (পিপিএম) যদি শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকে, তাহলে ওই বাতাস বায়ুমানের সূচকে (একিউআই) ভালো বলা হয়। এ মাত্রা ৫১-১০০ হলে বাতাস ‘মধ্যম’ মানের এবং ১০১-১৫০ হলে ‘বিপদসীমায়’ আছে বলে ধরা হয়। পিপিএম ১৫১-২০০ হলে বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১-৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ ও ৩০১-৫০০ হলে ‘বিপজ্জনক ’ বলা হয়। এ হিসেবে ঢাকার বাতাস কেমন বিপজ্জনক তা সহজেই অনুমেয়।
বায়ুদূষণ রোগবালাইয়ের অন্যতম উৎস। সংক্রমণ-অসংক্রামক দুই ধরনের রোগই এতে বেড়ে যায়। অপরিকল্পিত উন্নয়নে ঢাকায় বায়ুদূষণ অনেক বেশি। ফলে মানুষের অনেক রকমের অসুখ-বিসুখ হচ্ছে। নগরায়ণ এত হচ্ছে যে, গাছ থাকছে না। ঢাকা শহরে বসবাসকারী দেড় কোটি বাসিন্দাকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্যহানিকর পরিবেশে থাকতে হয়। তবু ঢাকার বাতাসের মান স্বাস্থ্যকর করতে সরকারের তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। লক্ষণীয়, ভারতের দিল্লি, মুম্বাই, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, চীনের বেইজিং শহরে বায়ুর মান খুব অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় পৌঁছে গেলে সেসব দেশের সরকার বিশেষ স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা জারি করে। নাগরিকদের বায়ুদূষণ থেকে রক্ষা পেতে নানা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু বাংলাদেশে এ নিয়ে কোনো প্রচার-প্রচারণা নেই। যার কারণে বায়ুদূষণ ঢাকার জনস্বাস্থ্যকে মারাত্মক হুমকিতে ফেলেছে। এটি বিভিন্ন পরিসংখ্যান দেখলে টের পাওয়া যায়। গত ৭ এপ্রিল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি বর্ধন জং রানা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে বছরে বায়ুদূষণে প্রতি এক লাখে ১৪৯ জন (মোট মৃত্যু দুই লাখ ৪০ হাজার) মারা যায়। অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, বায়ুদূষণজনিত নানা রোগবালাইয়ে প্রতি বছর এক লাখ ৮৬ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। মৃত্যুর জন্য ৬৩ শতাংশ ক্ষেত্রে দায়ী ঘরের বাইরের বায়ুদূষণ। আর ৩৭ শতাংশ ক্ষেত্রে দায়ী ঘরের ভেতরের দূষিত বায়ু।
দেশে এখন চলছে শুষ্ক মৌসুম। ফলে নির্মাণকাজ ও মানুষের তৎপরতা বেড়েছে। ধুলা ও ধোঁয়া বেড়েছে। যার কারণে প্রতি বছর নভেম্বর থেকে রাজধানীসহ দেশের প্রধান প্রধান শহরে বায়ুদূষণ বেড়ে যায়। দেশে বায়ুদূষণের জন্য প্রধানত দায়ী নির্মাণকাজের ধুলা, শিল্পকারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া। এগুলো বায়ুদূষণের সবচেয়ে বড় উৎস। আরো আছে, রান্না করার জন্য চুলায় জীবাশ্ম জ্বালানির (কাঠ, খড়, গোবর ও পাতা পোড়ানো) ব্যবহারও।
আমরা মনে করি, অপরিকল্পিত উন্নয়নে ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা ভয়াবহ হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তাই অপরিকল্পিত নগরায়ণ বন্ধ করতে হবে। শীতকালে ধুলা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে পানি ছিটানোর যে যানবাহন আছে; সেগুলো ধুলাদূষণ নিয়ন্ত্রণে কাজে লাগাতে হবে। নির্মাণকাজ ও যানবাহনের ধুলা নিয়ন্ত্রণে আরো কঠোর হতে হবে। একই সাথে অবশ্যই ঢাকার আশপাশে গড়ে ওঠা অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে হবে। তা হলে হয়তো রাজধানীর বাতাস একটু নির্মল হতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা