ছড়িয়ে দিতে হবে দেশব্যাপী
- ১৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
খাদ্য তালিকায় দিন দিন সবজির কদর এবং গুরুত্ব দুই-ই বেড়েছে। মাছে-ভাতে বাঙালি কথাটি এখন আর আগের মতো উচ্চারিত না হওয়ার বহু কারণ হাজির হয়েছে। প্রাকৃতিক উৎস থেকে আগের মতো আর মাছ পাওয়া যায় না। তাই চাহিদা মেটাতে দেশে মাছ চাষ বেড়েছে। তবে চাষের মাছে তৃপ্তি মেলে কম। মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও দ্রুত বৃদ্ধির কারণে এর গুণগত মান ও স্বাদ বহুলাংশে কমে গেছে। ধান উৎপাদনেও একই ধরনের বিবর্তন দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। তার ওপর বর্তমানে এমন সব অসুখ-বিসুখ দেখা যাচ্ছে, মানুষকে স্বাস্থ্যের বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন হতে হচ্ছে। খাদ্যাভ্যাসেও আনতে হ্েচছ ব্যাপক পরিবর্তন। মানুষ এখন ভাত-মাছের পাশাপাশি দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় সবজি খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়েছে। কিন্তু সেখানেও বিষমুক্ত সবজি পাওয়া দুষ্কর।
দেশে সবজি উৎপাদন ব্যাপকভাবে বেড়েছে। নতুন নতুন জমিতে সবজি আবাদ হচ্ছে। এগুলোতে আগে প্রধানত ধান চাষ হতো। আবার পতিত জমি এমনকি সারা বছর পানি থাকে-সেখানেও আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ হচ্ছে। তাই হাট-বাজারে এর বাড়তি সরবরাহও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সবজি নিয়ে ভাত-মাছের মতো প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ এর মধ্যে রাসায়নিকের ব্যবহার স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এর উৎপাদনে মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশকের পাশাপাশি তাজা রাখতে এটি ব্যবহৃত হয়। বিকল্প হিসেবে বাড়তি সবজি খাওয়ার বিষয়েও এক ধরনের দ্বিধা-সংশয় তৈরি হয়েছে জনমনে। এ জন্য বিশেষজ্ঞরা রাসায়নিকমুক্ত সবজি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের কথা বলছেন। দুর্ভাগ্য, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বড় ধরনের উদ্যোগ নেই বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে। তবে বিচ্ছিন্ন কিছু উদ্যোগ সারা দেশে দেখা যাচ্ছে। এগুলো আশা জাগাচ্ছে, হয়তো এক সময় ব্যাপকভাবে এর প্রচলন ঘটবে।
সহযোগী একটি দৈনিকে রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী কেরানীগঞ্জে এ ধরনের উদ্যোগের খবর দিয়েছে। উপজেলার হজরতপুর ও কলাতিয়া ইউনিয়নে একটি বিশেষ কৌশলে কীটনাশক ব্যবহার ছাড়া কৃষকরা শীতকালীন সবজি উৎপাদন করছেন। শিম, টমেটো, পালংশাক, লালশাক, ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করছেন তারা। এ পদ্ধতিতে চাষিরা সবজি বাগানের ওপরে একটি মাচা তৈরি করছেন। সেখানে স্থাপন করছেন হলুদ রঙের জার। ক্ষতিকর কীট সেগুলোর সংস্পর্শে এসে বিনাশ হচ্ছে। পাশাপাশি সবজিচাষিরা জৈবসার প্রয়োগ করছেন। এতে ফলনও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। আবার খাদ্য হিসেবে রাসায়নিকমুক্ত হওয়ায় নিরাপদও বটে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উদ্যোগে এ প্রকল্প নেয়া হয়েছে। পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ মডেল ফসল উৎপাদনের এ পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থা। এতে শতাধিক কৃষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পক্ষ থেকে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা এর উপকারিতা নিয়ে কৃষকের মধ্যে প্রচার চালিয়েছেন। তাদের বোঝানো হয়েছে- এতে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো যায়। এখন তারই সুফল মিলছে।
সারা দেশে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অফিস রয়েছে। কেরানীগঞ্জের মতো সরকারি এ উদ্যোগ বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় হচ্ছে। একেবারে ব্যক্তি উদ্যোগেও এমন বিষমুক্ত কৃষি প্রকল্প প্রচলনের খবর দেশের আনাচে-কানাচে থেকে পাওয়া যাচ্ছে। গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি ও মাছসহ সবজি উৎপাদনের প্রকল্পও দেখা গেছে। তার পরও সারা দেশের চাহিদার তুলনায় এটি একেবারেই অপ্রতুল। কেরানীগঞ্জের ক্ষুদ্র উদ্যোগটির অভিজ্ঞতা বলছে, সারা দেশে এমন সমন্বিত বালাই দমনব্যবস্থার প্রচলন করা যায়; সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে বড় ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যক্তি উদ্যোগের পাশেও প্রয়োজনীয় সাহায্য নিয়ে দাঁড়াতে পারে সরকার। এ ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণের টেকসই মডেল উদ্ভাবন। সেটি আমাদের দেশে একেবারেই অনুপস্থিত। সরকার এ ব্যাপারে নীতিসহায়তা দিয়ে এগিয়ে আসতে পারে, যাতে কৃষকরা পণ্য বেচার একটি সহজ ও টেকসই বাজার পান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা