সরকারের দুর্বল মাদকনীতির পরিবর্তন নেই
- ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০৫
মাদক নিয়ে বাংলাদেশের গৃহীত নীতি ও কৌশলের মধ্যে গলদ রয়েছে। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে মাদকের বিরুদ্ধে উপর্যুপরি বিপুল অভিযান চালানো হয়েছে। যৌথবাহিনী গঠন করে সরকারি কোষাগারের বড় অঙ্কের অর্থ খরচ করা হয়েছে। এই সময় মাদক কারবারি সন্দেহে কয়েক শত বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটে। এর শেষ পর্যায়ে কক্সবাজারে ১০১ ইয়াবা কারবারিকে আত্মসমর্পণের এক অভিনব আয়োজন আমরা দেখেছি। এত তোড়জোড়ের প্রায় তিন বছর পর জানা যাচ্ছে, মাদক কারবারিদের প্রভাব প্রতিপত্তি বেড়েছে। আগে তারা কিছুটা আড়ালে আবডালে থাকলেও এখন তারা অনেকটা প্রকাশ্যে অনেক কিছু করতে পারছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই সময়ে আগের চেয়ে মাদক চোরাচালান বেড়েছে। এই অবস্থায় আমাদের মাদকবিষয়ক নীতিকৌশল যে ব্যর্থ তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
সহযোগী একটি দৈনিক স্থানীয় প্রতিনিধির বরাতে জানাচ্ছে, ইয়াবার নতুন রুট চট্টগ্রামের আনোয়ারা। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে এক অনুসন্ধানে তা উঠে এসেছে। তাদের দেয়া তথ্য মতে, মিয়ানমারের শান রাজ্য থেকে নদীপথে কয়েক দফা হাত বদল হয়ে তা চট্টগ্রামের উপকূলীয় উপজেলা আনোয়ারায় আসে। সেখান থেকে গহিরার রায়পুর ও প্যারাবন এবং বরুমচড়ার ভরাচর ও জুঁইদণ্ডীসহ উপজেলার দশটি পয়েন্ট দিয়ে তা প্রবেশ করে। পার্শ্ববর্তী উপজেলা বাঁশখালীর স্থলপথ হয়েও চোরাচালান হয়। এরপর চট্টগ্রাম এসে শহরের কোন কোন পয়েন্ট হয়ে ইয়াবা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে পত্রিকাটি তা উল্লেখ করেছে। প্রকাশিত খবর বলছে, আনোয়ারাকে ইয়াবার ট্রানজিট পয়েন্ট বানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ১০ মাদক কারবারি। এরা কেউ কেউ টেকনাফের বাসিন্দা। এ কাজে সহযোগী হয়ে কাজ করছেন উপজেলার কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা।
মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চলার মধ্যে ইয়াবা চোরাচালান বেড়েছে। ২০১৮ সালে এক কোটি ১৮ লাখ ইয়াবা বড়ি উদ্ধার হয়। ২০১৯ সালে ১৬ ফেব্রুয়ারি ইয়াবা কারবারিদের একটি অংশ আত্মসমর্পণ করে। দেখা গেল, ওই বছর এক কোটি ৭৭ লাখ ইয়াবা উদ্ধার হয়। ২০২০ সালে তা আরো বেশ বেড়ে দুই কোটি ৩৯ লাখ হলো। ২০২১ সালে দুই কোটি ৫৯ লাখের বেশি। চলতি বছরের প্রথম দশ মাসে তিন কোটি ২০ লাখ ইয়াবা ও ১৯২ কেজির বেশি আইস উদ্ধার হয়। মাদকবিরোধী অভিযান সফল না হলেও সরকারের নীতির কোনো পরিবর্তন নেই, ঘাপলা কোথায় রয়েছে সেটা নিয়ে আত্মসমালোচনা নেই। ওই সময় আত্মসমর্পণকারী মাদক কারবারিদের দেড় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। এর বিনিময়ে তাদের এক প্রকারের স্বাধীন জীবন যাপন করতে দেয়া হয়েছে। অন্ততপক্ষে বিচারবহির্ভূত হত্যার শঙ্কা থেকে তারা মুক্তি পেয়েছিল। কিন্তু সেটা যে, তারা একটি রক্ষাকবচ হিসেবে নিয়েছে মাদক কারবার বেড়ে যাওয়ার ফলে তা প্রমাণ হচ্ছে। তবে এখানে রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নমনীয়তা প্রদর্শনের ঘটনা ঘটেছিল। আত্মসমর্পণকারী চোরাকারবারিদের ৮৩ জন তখন পলাতক হলেও তারাও একই লঘুদণ্ড পেয়েছিল। আসামির মধ্যে চোরাচালানের সাথে মোটাদাগে অভিযুক্ত সরকারি দলের সংসদ সদস্য বদির আপন চার ভাইসহ ১২ নিকটাত্মীয় ছিল।
মাদকের মধ্যে ইয়াবা ও আইস সবচেয়ে ক্ষতিকর। এর মধ্যে ইয়াবা মহামারী আকারে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। শেষ করে দিচ্ছে আমাদের যুবসমাজকে। এর সাথে অন্যান্য মাদকের পথও রুদ্ধ হয়নি। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও মাদক নিয়ন্ত্রণে নিযুক্ত বিভিন্ন বাহিনী দাবি করে, তাদের সতর্ক পাহারার কারণে মাদক চোরাকারবারি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অথচ আটক মাদকের পরিসংখ্যান বলছে, মাদকের বিস্তার বহু বেড়েছে। এর অর্থ, মাদকের কারবার কমছে না বরং বাড়ছে। চোরাচালান বন্ধ বা সীমিত হলে আটকের পরিমাণও কম হবে। এ অবস্থায় সরকারের মাদকবিরোধী নীতি অর্থবহ হয়নি বলতে হবে। খবরে বলা হচ্ছে, টেকনাফ থেকে ইয়াবার চোরাচালানের রুট পরিবর্তন হয়ে এখন পার্শ্ববর্তী আনোয়ারায় চলে গেছে। কিন্তু এর বিস্তৃতি বেড়েছে। বহালতবিয়তে রয়েছে আগের চোরাকারবারিরা। এর সহযোগী আবার ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক বিভিন্ন শাখা উপশাখা। সুতরাং সরকারকে আগে স্বচ্ছনীতি গ্রহণ করতে হবে। মাদক কারবারি যেই হোক তার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিতে হবে। তাহলেই কেবল এ থেকে নিস্তার মিলতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা