২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
আশ্রয়ণের ১৪ ঘরের অর্ধেকই বিক্রি

কেন এ অবস্থা হলো?

-

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৪টি ঘরের ৭টিই বিক্রি করার অভিযোগ এসেছে। সহযোগী একটি জাতীয় দৈনিকের সেখানকার প্রতিনিধি জানান, এই প্রকল্পের ১৪টি ঘর ভূমিহীনদের মাঝে হস্তান্তর করা হলেও সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগীদের সাতটি পরিবার নিজেদের ঘরগুলো স্ট্যাম্পের মাধ্যমে বিক্রি করে অন্য জায়গায় চলে গেছে। এসব ঘরে বর্তমানে ক্রেতার পরিবার বসবাস করছে। ফলে এক দিকে আশ্রয়ণের ভূমিহীনদের তালিকা তৈরি করা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠছে। অন্য দিকে, প্রকল্পটির কমিটিকে এ বিষয়ে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থাই নেননি।
সরেজমিন আলোচ্য গাড়াদহ দক্ষিণপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা ঘুরে জানা যায়, প্রথম পর্বে সরকারের খাস জায়গায় ১৪টি ঘর নির্মিত হয়েছে প্রতিটি এক লাখ ৭১ হাজার টাকা খরচে। যথাসময়ে যথারীতি এগুলো হস্তান্তরিতও হয়েছে। কিন্তু সাতটি ঘরের সুবিধাভোগীরা তাদের ঘর বেচে দিয়েছেন। অর্থাৎ আশ্রয়ণ প্রকল্পের এ ঘরের দরকার তাদের নেই। প্রকল্পটিতে বসবাসরত পরিবারগুলোর মাধ্যমে জানা যায়, ১৪নং ঘরটি সস্ত্রীক আবদুছ ছালামের নামে বরাদ্দ হলেও তিনি এক লাখ টাকায় এটা বিক্রি করেছেন সিরিনা ও তার পরিবারকে। এখন তারাই ক্রয়সূত্রে বাস করছেন এখানে। ১৩নং ঘরের বেল্লাল ও স্ত্রী সারা দম্পতির কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকায় কিনে বাস করছেন আবু-সাবিনা দম্পতি। ৮নং ঘরটি বরাদ্দ পেয়েছিল রশিদের পরিবার। কিন্তু বাস করছে সপরিবারে শাহিনূর। ৯নং ঘরে ঠাণ্ডু দম্পতি থাকার কথা, তবে ওরা এক লাখ তিন হাজার টাকায় বেচে দিয়েছেন পিঞ্জিরার পরিবারকে। ১০নং ঘরটি রফিকুল-ফুলমালা দম্পতি পেয়ে তারা এক লাখ টাকায় বিক্রি করেছে নাজমুলের কাছে। ১৬নং ঘরটা এক বিধবা রেশমা পেলেও তার কাছ থেকে এক লাখ টাকায় কিনে এখন বাস করছেন হাফিজুল-নাছিমা দম্পতি। ১৭নং ঘর পেয়েছেন জহুরুল-আফরোজা দম্পতি। তাদের থেকে এক লাখ ১১ হাজার টাকা দিয়ে কিনে সেখানে বসবাস করছে হালিমার পরিবার। ৮নং ঘরের বাসিন্দা শাহিনূর বেগম জানান, রশিদের কাছ থেকে এক লাখ টাকায় ঘরটা কিনেছি। ওর বাড়িঘর আছে, আমার তো ওসব নেই। সে কারণে এখানে আছি।” অপর দিকে, ১০নং ঘরে বসবাসকারী সাবিনা বেগম জানালেন, বেল্লাল হোসেন থেকে ৮০ হাজার টাকায় কিনেছি এ ঘরটা।” ৯নং ঘরের পিঞ্জিরা খাতুন জানান, তিনি এক লাখ ২০ হাজার টাকায় ঠান্ডু থেকে ঘর কিনেছেন।
এ দিকে, সাংবাদিকদের আগমন টের পেয়ে আশ্রয়ণের ঘর ক্রেতারা তালা দিয়ে ঘর থেকে সটকে পড়েন। সুবিধাভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা তাই করা যায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানান, স্থানীয় ডিজিটাল মিলন স্কুলের মালিকের মাধ্যমে আশ্রয়ণের কয়েকটি ঘর বেচাকেনা হয়েছে এখানে। তিনি অবশ্য দাবি করেন, কোনো টাকা এ বাবদ নেননি। ইউপি চেয়ারম্যান বলেছেন, এই প্রকল্পের বরাদ্দ, নির্মাণ বা কোনো প্রকার সুপারিশে তিনি জড়িত নন। এগুলো ইউএনও’র নেতৃত্বে হয়েছে। অন্য দিকে, সহকারী কমিশনার বলেন, খোঁজ নিয়ে দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শাহজাদপুরের ইউএনও বলেছেন, যারা বরাদ্দ পেয়েছেন, শুধু তারাই ভোগ করতে পারেন এসব ঘর। এসব বিক্রি বা হস্তান্তর আইনগত দণ্ডনীয়। ইতোমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে এ নিয়ে।
অবিলম্বে তদন্তপূর্বক দরকার মতো ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আমাদের সবার প্রত্যাশা।


আরো সংবাদ



premium cement