২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
পুলিশে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে

কারণ প্রধানত রাজনৈতিক

-

নানা অপরাধ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ। পুলিশ সদস্যদের কেউ এমন সব বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন যাতে করে এ বাহিনীরই কেবল সুনামহানি হচ্ছে তা নয়, দেশের পুরো পুলিশ বাহিনীরই বদনাম হচ্ছে।
নয়া দিগন্তের এক রিপোর্টে এ বিষয়ে তুলে ধরা হয়েছে। একই বিষয়ে সিলেটের স্থানীয় কাগজেও সম্প্রতি বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে। এসব রিপোর্টে সিলেট পুলিশের যেসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য উঠে এসেছে তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। ব্ল্যাকমেইলিং, মাদক সেবন, মাদক বিক্রি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ, নিজেদের মধ্যে মারামারি, কলেজছাত্রকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো, পথচারীদের হয়রানি করা থেকে শুরু করে হত্যার মতো ভয়ঙ্কর অপরাধ থেকেও মুক্ত নয় বাহিনীটি। ২০২০ সালের শেষ দিকে সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির কয়েক সদস্য মিলে রায়হান নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে। এ নিয়ে দেশব্যাপী তোলপাড়ের ঘটনা মানুষের স্মৃতি থেকে সম্ভবত এখনো মুছে যায়নি। ওই হত্যার প্রতিবাদে প্রতিদিন মিছিল, রাস্তা অবরোধ, পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাওসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। এ অবস্থায় দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেয়া হয় ওই সময়ের পুলিশ কমিশনারকে।
এমনই নানা বিশৃঙ্খলা আর অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে বিতর্কের চূড়ায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ। তবে এককভাবে সিলেট মেট্রপলিটন পুলিশকে দোষারোপ করে লাভ নেই। সততা ও নৈতিক দিক থেকে অবক্ষয় ঘটেছে সার্বিকভাবে দেশের গোটা পুলিশ বাহিনীরই। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত অনুসরণ করলে দেখা যাবে, গত এক বা দেড় দশকে এ বাহিনীর সদস্যদের অপরাধপ্রবণতা ক্রমাগত বেড়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে ১৪ হাজার ৪০২ জনের বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়। ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ হাজার ২১২। ২০২১ সালে অপরাধে জড়ানোর অভিযোগ জমা পড়ে ১৬ হাজার ৪১৮ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে।
পুলিশেরই তথ্য বলছে, গত চার বছরে বিভিন্ন অভিযোগে সারা দেশে প্রায় ৬৫ হাজার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গড়ে মাসে ১৩৫৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এদিকে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে পুলিশের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। পুলিশ সূত্র বলছে, প্রতি বছরই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বাড়ছে।
এই নৈতিক অবক্ষয়ে পুলিশকে এককভাবে দায়ী করার যুক্তি আছে বলে আমরা মনে করি না। অপরাধবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীরাও সেটি মনে করেন না; বরং এর পেছনে গভীরভাবে জড়িত আমাদের কুলষিত রাজনীতি। পুলিশসহ গোটা সমাজে নৈতিকতায় যে বিপুল ধস নেমেছে তার জন্য এককভাবে কাউকে দায়ী করতে হলে করতে হবে রাজনীতিকদের। বিশেষ করে গত দেড় যুগ ধরে দেশ শাসকগোষ্ঠী এ দায় এড়াতে পারে না।
রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে গিয়ে পুলিশকে নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে চরম ব্যবস্থা নেয়ার যে একচেটিয়া কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছে তাতে পুলিশ সদস্যরা নিজেদের জবাবদিহির ঊর্ধ্বে ভাবতে শুরু করেন। বিভিন্ন ঘটনায় পুলিশের কিছু সদস্যের বক্তব্য থেকে সেটি স্পষ্ট। সরকারের অনেক মন্ত্রীর এমন কিছু বক্তব্য নানা সময়ে আমরা শুনেছি যা কার্যত পুলিশকে দায়মুক্তি দেয়ার নামান্তর।
একজন অপরাধ বিশ্লেষক গণমাধ্যমকে বলেছেন, ক্ষমতাসীনরা যেভাবে পুলিশকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে, তার ফলে দেখা যায়- ধীরে ধীরে পুলিশও অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের আপাতত কোনো সুযোগ আছে কি না, আমাদের জানা নেই।


আরো সংবাদ



premium cement