২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা

বলপ্রয়োগ পরিহার করুন

-

বিপুল বাধার পরও শেষ পর্যন্ত বিএনপির ঢাকা গণসমাবেশ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা উসকানিতে পা না দিয়ে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ করার জন্য কৃতিত্ব পেতে পারেন। তবে রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে সরকারের অসহিষ্ণু কর্মকাণ্ড দেশ-বিদেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বিশেষ করে শান্তিপূর্ণ জমায়েতে নানাভাবে বাধা দেয়া ও শক্তি প্রয়োগ উদ্বেগ ছড়িয়েছে। শেষ সমাবেশের আগে পুলিশের আগ্রাসী তৎপরতায় একজন কর্মীর প্রাণহানি, মহাসচিবসহ বিপুল নেতাকর্মীকে আটক ও বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে মানবাধিকার সংগঠন, জতিসঙ্ঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। সবাই বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের অবাধ সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানালেও সরকার তা আমলে নেয়নি।
বিএনপির সমাবেশে জনসমাগম বন্ধ করে দেয়ার জন্য দলীয় লোক ও পুলিশ দিয়ে সরকার শুরু থেকে ভয়ভীতি দেখিয়েছে। সরাসরি গণপরিবহন বন্ধ না করলেও মালিক ও শ্রমিক সংগঠন দিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করেছে। দলটির প্রধান কার্যালয়ের সামনে পুলিশ অভিযান চালিয়ে সেটিকে ‘অপরাধ এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করা এবং ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ উপলক্ষ করে পুরো রাজধানীতে সরকারি দলের কর্মীদের সশস্ত্র মহড়া দেশ-বিদেশে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এ অবস্থায় মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, জাতিসঙ্ঘ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ গণতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতা দানকারী বিভিন্ন পক্ষ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।


হিউম্যান রাইটস ওয়াচ রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর নৃশংস ক্র্যাকডাউন বন্ধ করে গণতন্ত্র সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়েছে। ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশ চলাকালে এক বিবৃতিতে মানবাধিকার সংগঠনটির দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ২০২৪ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। একই সময় তারা বিরোধী দল বিএনপির কর্মসূচি দমন করছে। তিনি দু’দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘আমাদের বিরুদ্ধে যে হাত তোলা হবে তা ভেঙে ফেলতে হবে’ উদ্ধৃত করেন তার বিবৃতিতে। একই দিন নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারেক শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিক্ষোভ করার মানুষের অধিকারের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এই সময়ে সরকারি ধরপাকড়ে আটকদের জন্য যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা প্রয়োজন। তার আগের দিন শুক্রবার হোয়াইট হাউজ বাংলাদেশে প্রাক-নির্বাচনী সহিংসতা পুঙ্খানুপুঙ্খ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে সরকারের প্রতি। পল্টনে পুলিশি অভিযানের পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ঢাকায় আগেই ওই ঘটনার তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এ ছাড়াও এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কিরবি বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
সরকার বলপ্রয়োগের নীতি গ্রহণ করেও বিএনপির একটি কর্মসূচিও ব্যর্থ করতে পারেনি। তারপরও সরকার একই নীতি অব্যাহত রেখেছে। এতে করে সরকার কিছুমাত্র লাভবান হচ্ছে তা বলার সুযোগ নেই। বরং দেশ-বিদেশের প্রতিক্রিয়া থেকে অনুধাবন করা যায়, দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ভাবমর্যাদা তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। এটি আওয়ামী লীগের চেয়েও বড় ক্ষতি বয়ে আনছে দেশের জন্য। গণতান্ত্রিক বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের পরিচিতি উদার গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে। আমরা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করছি। আমাদের শান্তিরক্ষীরা বিবদমান দ্বন্দ্ব সঙ্ঘাত নিরসনের পাশাপাশি অনেক দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়ও অবদান রাখছে।
এমনই সময়ে রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া এসেছে আমাদের বন্ধুপ্রতিম গণতান্ত্রিক পক্ষগুলোর পক্ষ থেকে।
এ অবস্থায় সরকারের বলপ্রয়োগ নীতি অচিরেই বন্ধ হওয়া উচিত। অন্যথায় আমরা বিশ্ব থেকে ক্রমেই বিচ্ছিন্ন হতে থাকব। বিচ্ছিন্নতার নীতি কতটা ক্ষতিকর উত্তর কোরিয়াসহ কয়েকটি একনায়কতান্ত্রিক দেশ তার উদাহরণ। আমরা আশা করি, সহসা সরকারের বোধোদয় ঘটবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement