২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ঠাণ্ডাজনিত রোগী বাড়ছে

সতর্কতার বিকল্প নেই

-

শীতের মৌসুম কাগজ-কলমে শুরু হয়নি। কিন্তু আবহাওয়া পাল্টে গেছে। শীত পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এখনই বেশ শীত অনুভূত হচ্ছে। সেই সাথে ঠাণ্ডাজনিত রোগ যেমন- নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। রাজধানীতে শীতের তীব্রতা না থাকলেও রাতে বেশ ঠাণ্ডা পড়ছে। দিনে গরম ও রাতে শীতের কারণে শিশু ও বয়স্ক মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম থাকায় তারা সহজে আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে পারছে না। রাজধানীসহ সারা দেশেই হাসপাতালগুলোতে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। আক্রান্তদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি।
রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে রোগী ও স্বজনদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় শয্যা না থাকায় অনেক রোগীকে মেঝেতে এমনকি খোলা বারান্দায় শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
গণমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে, অনেক হাসপাতালেই শয্যা না পেয়ে রোগাক্রান্ত শিশুকে হাসপাতালের মেঝেতে ঠাঁই নিতে হয়েছে। রাজধানীর হাসপাতালে শুধু রাজধানীর রোগীই ভর্তি হয় এমন নয়, বাইরের সব জেলা থেকেও রোগী আসে। ফলে চাপ বাড়ে। কোনো কোনো হাসপাতালে এরই মধ্যে ধারণক্ষমতার তিনগুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। এক শয্যায় রাখা হয়েছে একাধিক রোগী। এতেও জায়গায় সঙ্কুলান না হওয়ায় বাড়তি রোগীদের রাখতে হচ্ছে মেঝেতে।
চিকিৎসকরা জানান, শীতে বাতাসের আর্দ্রতার সাথে ধুলাবালির পরিমাণ বাড়ে। এ সময়ে সাধারণ সর্দি-কাশি, অ্যাজমা বা হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, টনসিল ফুলে যাওয়া, সাইনোসাইটিস ও চামড়ার রোগ বাড়ে। শিশুদের সাধারণ সর্দিজ্বর তিন দিনের বেশি থাকলে বা শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হলে বা বুকে ব্যথা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। তাদের মতে, আমাদের দেশে শিশুরা সাধারণত শ্বাসজনিত ভাইরাসে আক্রান্ত হয় বেশি। এর লক্ষণ কিছু পরীক্ষা না করেও বোঝা যায়। দেখা যায়, জ্বর কমে গিয়ে শুকনা কাশি থাকে বেশ কিছু দিন।


শীতের সময় মানুষের সর্দিজ্বর ও শ্বাসকষ্ট বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। একই সাথে বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের দীর্ঘমেয়াদি হাঁপানি, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি বা ফুসফুসের রোগ আছে তাদের দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
একটি দৈনিকের রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, স্যার সলিমুল্লøাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ধারণক্ষমতার অনেক বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে।
ঢাকার স্যার সলিমুল্লøাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাততলার শিশু ওয়ার্ডে ৫০ শয্যায় রাখা হয়েছে দ্বিগুণের বেশি রোগী। বারান্দার মেঝেতে ঠাঁই হয়েছে আরো ৫০ শিশুর। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু নিয়ে হাসপাতালের খোলা বারান্দায় চার দিন ধরে থাকছেন তার মা। রাতে ঠাণ্ডা বাতাসে কাঁথা-কম্বল কিছু দিয়ে শিশুর শরীরে তাপ ধরে রাখতে পারছেন না ওই অসহায় মা। এমন দৃশ্য দেশের বিপুল উন্নয়নের প্রচারণাকেই যেন বিদ্রুপ করছে। শীত শুরু হলে যখন আরো বেশি আক্রান্ত মানুষ আসতে শুরু করবে তখন অবস্থা কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে একমাত্র আল্লাহ মালুম।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল দ্বিতীয় তলার ২০৭ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে ১৯টি শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছে ৭২ জন। পাশের ২০৮ নম্বরে ১৯ শয্যার বিপরীতে ভর্তি ৩৮ জন। একটি শয্যার বিপরীতে রাখা হয়েছে দু’জন করে। অন্যদের ঠাঁই হয়েছে বারান্দা ও মেঝেতে।
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন রোগী আসছে পাঁচ শতাধিক, যা বছরের অন্যান্য সময়ের দ্বিগুণ। বয়সভেদে পঞ্চাশোর্ধ্ব রোগীর সংখ্যা প্রায় ৬০ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, আবহাওয়া পরিবর্তনের এই সময়ে শিশুদের যাতে কোনোভাবে ঠাণ্ডা না লাগে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুদের প্রচুর পানি ও তরল খাবার খাওয়াতে হবে। বয়স্ক ব্যক্তিদেরও সতর্ক থাকার কোনো বিকল্প নেই।


আরো সংবাদ



premium cement