২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
শহরাঞ্চলে অনিয়ন্ত্রিত বাড়ি ভাড়া

শৃঙ্খলায় আনা অত্যাবশ্যক

-

শহরাঞ্চলে যারা ভাড়া বাড়িতে থাকেন, বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে, তাদের আয়ের একটি বড় অংশ ব্যয় হয় বাড়ি ভাড়ায় যদিও করোনার সময় গত দুই বছর অনেক বাড়িওয়ালা বাসা ভাড়া বাড়াননি। তবে এবার ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে বাড়িওয়ালারা নানা যুক্তিতে বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর নোটিশ দিতে শুরু করেছেন। ঢাকাসহ সারা দেশের শহরাঞ্চলেই বাড়ি ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। দেশে এখনো বড় বড় শহরে কোন এলাকায় কত ভাড়া বাড়ানো যাবে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট বিধি-নীতি নেই। এ কারণে বাড়িওয়ালারা ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়ানোর সুযোগ পান। শুধু ঢাকা নয়, অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরেও বাড়িওয়ালারা নিজেদের মর্জিমাফিক বাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে থাকেন।
এমনিতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, গ্যাস-পানির দাম বেড়ে যাওয়ায় জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ, এর মধ্যে বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর নোটিশ পাওয়ায় এ বাড়তি ব্যয় নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন বেশির ভাগ ভাড়াটে। কারণ, বাড়ি ভাড়া বাড়লে এর সাথে অন্যান্য খরচও বাড়ে। তারপর আছে সন্তানদের পড়ালেখার ব্যয় ও বাজার খরচ। কিন্তু কর্মজীবীদের আয় সেভাবে বাড়েনি। ফলে বাড়ি ভাড়া বাড়লে স্বল্প আয়ের মানুষকে ব্যয় সঙ্কোচন নীতি অবলম্বন ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।
সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আগের চেয়ে কেমন বেড়েছে তা অনুমান করতে হলে বিভিন্ন পরিসংখ্যানের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্টে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ, যা গত ১১ বছর তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহে পেট্রল, অকটেন, ডিজেলসহ জ্বালানি তেলের দাম ৪২.৫ থেকে ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। এর আগে কখনো জ্বালানি তেলের দাম একবারে এতটা বাড়ানো হয়নি। তাই আগস্টের শুরু থেকে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে। এ ছাড়া যাতায়াত, পোশাক, শিক্ষাসামগ্রীর মতো খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দামও বেড়েছে। এর মধ্যে বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর নোটিশে অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন অনেক ভাড়াটে।
রাজধানী ঢাকায় বাড়ি ভাড়া কতটা অনিয়ন্ত্রিত তা বোঝা যায় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্য অনুযায়ী। সংগঠনটি বলছে, গত ১৫ বছরে রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে ছয়গুণের বেশি।
ভাড়াটেদের স্বার্থ রক্ষায় দেশে তিন দশক আগে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন হয়। বাস্তবে তার কোনো প্রয়োগ নেই। বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনটি ১৯৯১ সালের। ভাড়াটেদের স্বার্থরক্ষায় অনেক কথা উল্লেখ আছে এ আইনে। সরকার এখনো এ আইনের বিধি করেনি। বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯১-এ বলা আছে- কোনো বাড়ির ভাড়া মানসম্মত ভাড়ার বেশি বাড়ানো হলে ওই বেশি ভাড়া, কোনো চুক্তিতে ভিন্নরূপ কিছু থাকা সত্ত্বেও আদায়যোগ্য হবে না।
বিদ্যমান আইনটি কার্যকর না হওয়ায় ভাড়াটেদের সুরক্ষার সুযোগ কম। সঙ্গত কারণে বাড়ি ভাড়ার মতো জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট আইনটি কার্যকর করতে রাষ্ট্রকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে, তা না হলে সাধারণ মানুষ বাড়িওয়ালাদের স্বেচ্ছাচারিতা থেকে পরিত্রাণ পাবে না।
বাস্তবতা হলো- বাড়ি ভাড়া বিষয়টির ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অথচ আবাসন যে কারো মৌলিক অধিকার। বিপুল ভাড়াটের চাহিদার বিষয়টি সরকার উপেক্ষা করে আসছে। এই সুযোগে বাড়িওয়ালারা একচেটিয়া ভাড়া বাড়াচ্ছেন। সময় এসেছে বাড়ি ভাড়ার বিষয়ে শৃঙ্খলা আনতে সারা দেশে এলাকাভেদে সর্বোচ্চ ও সর্বনিন্ম ভাড়া নির্ধারণ করার। এ পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে একটি কমিশন বা বোর্ড গঠন করতে হবে, যাতে বাড়ি ভাড়ার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা যায়।


আরো সংবাদ



premium cement