বস্ত্রশিল্পের দিকে নজর দিন
- ০৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০৫
১৯৪৭ সালে ঐতিহাসিক দেশ ভাগের সময়ে উত্তর ভারতের কয়েকটি অঞ্চল থেকে বেনারসি বস্ত্রের কয়েকজন কারিগর পাবনা জেলার বর্তমান ঈশ্বরদী উপজেলায় ফতে মোহাম্মদপুরে বসতি স্থাপন করে বেনারসি শিল্পের সূচনা করেছিলেন। একটি জাতীয় দৈনিকের স্থানীয় প্রতিনিধি তার সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে আরো জানান, তারা বেশ কয়েক ধরনের অভিজাত বস্ত্র তৈরি করতেন। সেসব পুরনো কারিগর কেউ আর বেঁচে নেই। তাদের উত্তরসূরিরা এ অঞ্চলে বেনারসি শাড়ি তৈরি করছেন আজো। এ অঞ্চলে আজো প্রায় দুই শতাধিক বেনারসি কারিগরি পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখছেন। বর্তমানে বাজারে নানা বিদেশী পণ্যের ফলে বেনারসি কাতানের বিক্রি কমলেও অভিজাত সমাজে এর কদর আছে আজো।
কিন্তু শাড়ি বিক্রি কমে গেছে আগের চেয়ে। ফলে সঙ্কটে আছেন বেনারসি কারিগররা। এ শিল্পের প্রসারে তাঁত বোর্ড সেখানে গড়ে তোলে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বেনারসি পল্লী। কারিগরদের কম মূল্যে প্লট বরাদ্দ দিয়ে বেনারসি কারখানা স্থাপন এবং সেখানে উৎপন্ন পণ্য দেশের অন্যত্র বিক্রির সুবিধার জন্য সরকারের উদ্যোগে বেনারসি পল্লী গড়ে তোলা হয়েছে। বেনারসি কারিগরদের জন্য সর্ব প্রকার সুবিধা নিশ্চিত করার কথা ছিল সেখানে। তবে ২০ বছর মেয়াদি প্রকল্পের ইতোমধ্যেই ১৮ বছর পার হয়ে গেলেও কোনো উদ্যোগ আজো নেয়া হলো না। প্লট নিয়েও বেনারসি কারখানা গড়ে তোলা যায়নি। সরেজমিন দেখা যায়, ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্পের জমি বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু বেশির ভাগ প্লট অব্যবহৃত রয়ে গেছে আজও। পুরো বেনারসি পল্লী বর্তমানে আগাছায় পরিপূর্ণ। এখানকার মসজিদ ব্যতীত অন্যান্য স্থাপনা অকেজো। এর কারণ, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। তা ছাড়া অনেকে প্লটে কারখানা গড়েননি। অনেকে অনিয়ম করে কারখানার প্লট হস্তান্তর করেছেন। ৯০টি প্লটের মাত্র এক-ষষ্ঠাংশের কিস্তি নিয়মিত। বাকিরা ঋণের টাকা শোধ করেননি। আর বেনারসি কারখানা আছে সর্বশুদ্ধ মাত্র সাতটি। বেশির ভাগই বন্ধ কয়েক বছর যাবত। কয়েকটি কারখানা চালু থাকলেও বাইরের প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে চলছে সেগুলো। বিগত ১৮ বছরেও কারখানা স্থাপন না করা এবং দীর্ঘকাল প্লটের টাকা না দেয়ায় বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড ৮৫ জনকে নোটিশ দিয়ে বলেছে, নির্ধারিত সময়ে এই পাওনা পরিশোধ না করা হলে প্লট বরাদ্দ বাতিল হবে যা কেবল একজনের বেলায় প্রযোজ্য হয়েছে। এদিকে, জনবল না থাকায় প্রকল্পের অফিস নিয়মিত চালু নয়।
ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীর ঐতিহ্যবাহী জাবেদ বেনারসির মালিক বলেছেন, ১৯৪৭ সালের পর আমার বাবাসহ অনেক কারিগরই এখানে বসতি গড়েছিলেন। তবে পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখা এখন কঠিন হয়ে গেছে। রঙ ও সুতাসহ কাঁচামালের দাম তো বেড়েছেই; প্রতিবেশী দেশের শাড়ির প্রভাবও কম নয়। তাই বেনারসি-কাতান বিক্রি হয় কম। তিনি জানান, হাতে চালানো তাঁতে শ্রমিক ব্যয় অনেক বেশি। একটি শাড়ি তৈরি করতে তিন থেকে আট হাজার টাকা মজুরি লাগে। এখানে ১২-৩০ হাজার টাকা দামের শাড়ি তৈরি করা হয়। অবশ্য স্থানীয় বাজারে এর ক্রেতা কমই মেলে। একই ব্যবসায়ী বলেন, পুঁজি না থাকায় কারিগরদের অনেকেই পেশা বদলিয়ে ফেলেছেন। এই প্রেক্ষাপটে বেনারসি পল্লীতে নতুন বিনিয়োগ সম্ভব নয়। স্থানীয় তাঁতিরা এটি না করতে পারলেও এখানে বাইরের লোকজন বড় বড় কারখানা গড়ছেন।
জানা যায়, সিরাজগঞ্জের বিরাট বস্ত্র কারখানা জামান টেক্সটাইল মিলের মালিক দু’টি কারখানা এখানে দিয়েছেন। এর ম্যানেজার জানান, অবাঙালিদের নামে বরাদ্দকৃত প্লটে বেনারসি কারখানা করতে হয়েছে। দু’টিতে মোট ৩০টি তাঁত চালু হয়েছে। সপ্তাহে ২৫টির মতো শাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। এ শাড়ি ‘আড়ং’ নিয়ে থাকে। তবে এখানে বেনারসির কারখানা গড়েও কোনো সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়নি। প্রসেসিং কারখানা নেই যদিও তা এখানে গড়ার কথা। এখন এ জন্য রাজধানী ঢাকায় আমাদের যেতে হয়। ফলে একেকটি শাড়ির জন্য ৭০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। তদুপরি, নিরাপত্তার অভাবে এখানে কারখানা চালানো ঝুঁকিপূর্ণ।
আমরা দেশের বস্ত্রশিল্পের প্রতি প্রয়োজনীয় নজর দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা