২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ব্যাংকে টাকা না থাকার গুজব

কানে হাত দিয়ে দেখতে হবে

-

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ব্যাংকে টাকা নেই’ এ ধরনের গুজবে কান দেবেন না। ব্যাংকগুলোতে টাকার কোনো সমস্যা নেই। সম্প্রতি ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে ও সেনানিবাসের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কোনো সমস্যা নেই, প্রতিটি ব্যাংকেই টাকা আছে। গুজবে কেউ কান দেবেন না। এসব মিথ্যা কথা বলে তারা ভাঁওতাবাজি করে বিভ্রান্ত করতে চায়। একটি শ্রেণী আছে, তারা এটি করছে। কারণ মিথ্যা কথায় তারা পারদর্শী। তিনি দেশবাসীকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও ব্যাংকে তারল্য নিয়ে কোনো অপপ্রচারে কর্ণপাত না করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশে গুজব নিয়ে অনেক প্রবাদ আছে। একটি প্রচলিত কথা এ রকম যে- চিলের পেছনে ছোটার আগে নিজের কানে হাত দিও। চিলে কান নিয়েছে শুনেই কান উদ্ধারের জন্য চিলের পেছনে ছুটলে চলবে না, নিজের কানে হাত দিয়ে দেখতে হবে, চিল সত্যিই ছোঁ মেরে কান নিয়ে গেছে কি না। এটি সবচেয়ে জরুরি কথা ও তা সব সময়ের জন্য সত্য।
প্রধানমন্ত্রীর কথায় কর্ণপাত করে এ বিষয়ে কিভাবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে সে বিষয়ে নজর দেয়ার চেষ্টা করি আমরা।
প্রথমে সামনে আসে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) একটি খবর। ইসলামী ব্যাংকসহ কমপক্ষে তিনটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ভুয়া ঠিকানা ও অস্তিত্বহীন কোম্পানির বিপরীতে ঋণের নামে কয়েক হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নেয়ার ঘটনা, খেলাপি ঋণ ও অর্থপাচার ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাংকিং খাতকে খাদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছে বলে উল্লেøখ করে সংস্থাটি। টিআইবি প্রধান উল্লেøখ করেন, ১৪ বছরে আগের তুলনায় মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ যখন প্রায় ছয়গুণ বেড়েছে, বারবার খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে কিংবা পুনঃতফসিল করেও খেলাপি ঋণ আদায় করা যাচ্ছে না, তখন কাদের স্বার্থে কিংবা কাদের দেখে অস্বাভাবিক দ্রুততার সাথে এমন আগ্রাসী ঋণ দেয়া হয়? প্রকৃতপক্ষে কারা এই বিপুল অর্থের সুবিধাভোগী? এ প্রশ্নের উত্তর জানার অধিকার দেশবাসীর আছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, পণ্য আমদানিতে ২০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি দাম দেখিয়ে বিপুল অর্থ পাচার করা হয়েছে। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) সর্বশেষ হিসাব বলছে, বাণিজ্যের নামে বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রতি বছর পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ৮২৭ কোটি মার্কিন ডলার। এই অর্থপাচার রোধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি; বরং অর্থপাচারের তথ্য যাতে প্রকাশ না পায় সে জন্য জাতিসঙ্ঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থায় তথ্য পাঠানোই স্থগিত করা হয়েছে।
এ দিকে ইসলামী ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ঋণ কেলেঙ্কারিতে একা ইসলামী ব্যাংক নয়, সব ব্যাংকই কমবেশি জড়িত। তবে বেশি বেকায়দায় পড়েছে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো। গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমের খবরে জানা গেল, হঠাৎ করে চরম তারল্যসঙ্কটে পড়েছে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো। তারা এখন টাকা ধার করতে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর কাছে ছুটছে। কেউ ধার দিতে রাজি হচ্ছে না। এসব ব্যাংক এত দিন ধার পাচ্ছিল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের কাছ থেকে। ইসলামী ব্যাংক এখন নিজেই বিপন্ন। শেষ পর্যন্ত এসব ব্যাংককে অর্থ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইসলামী ধারার পাঁচটি ব্যাংক সুকুক (শরিয়াহভিত্তিক বিনিয়োগ বন্ড) জমা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গত মঙ্গলবার প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ধার পেয়েছে। ব্যাংক পাঁচটি হলো- ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।
চিল যদি ছোঁ মেরে কান ছিঁড়ে নিয়ে যায় তাহলে সেটি সবার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরই বোঝার কথা। ব্যাংকে তারল্যসঙ্কট কতটা আছে বা নেই সেটি টের পাবেন ব্যাংকের বড় গ্রাহকরা, যারা ঋণ চান, এলসি খোলেন ও প্রয়োজনে বড় অঙ্কের নগদ টাকা তোলেন। কাজেই টিআইবি বা গণমাধ্যম অথবা প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, ‘মিথ্যা কথায় পারদর্শী’রা যা কিছুই বলুক না কেন, কিছু এসে যায় না। যার কানে রক্ত ঝরে সে গুজব শোনার অবস্থায় থাকে না।


আরো সংবাদ



premium cement