নির্বাচনে অনিয়ম : লোকদেখানো শাস্তি
- ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
নির্বাচন কমিশন (ইসি) ১৩৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গাইবান্ধা উপনির্বাচনে অনিয়ম, কারচুপি ও নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের জন্য এ ব্যবস্থা। এমন একসময় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হলো; যখন ইসি পুরোপুরি আস্থা হারিয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষগুলো রকিব ও হুদা কমিশনের প্রতারণার পর একই ধারাবাহিকতায় গঠিত হাবিবুল আউয়াল কমিশনকে নিয়ে শতভাগ অনাস্থা প্রকাশ করেছে। তবে হঠাৎ করে কমিশনের কঠিন অবস্থান প্রদর্শন বিরোধীদের আস্থা তৈরি না করলেও নির্বাচনী ব্যবস্থা কিভাবে ছেলেখেলায় পরিণত হয়েছে, আবারো তা খোলাসা হলো। সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রশাসন, এমনকি নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা ও সরকারি দলের স্থানীয় সুবিধাভোগীরা মিলে সরকারদলীয় প্রার্থীকে জেতানোর নামই যে এখন নির্বাচন; সেটিই যেন ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হলো।
অপরাধকে খণ্ডিত দেখার যে সংস্কৃতি এ সরকারের আমলে চালু হয়েছে; কমিশনের এ তদন্তেও তা স্পষ্ট। কোনো একটি অপরাধ সংঘটিত হলে কর্তৃপক্ষ পছন্দমতো কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। অথচ হোতাদের নিয়ে একটি কথাও বলে না; বরং সবাই মিলে তাদের বাহবা দেয়। কমিশনের এ সিদ্ধান্তেও তেমনটি দেখা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, ১৪৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১২৫টিতে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে কমিশন। এ জন্য ১৩৪ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা। কিন্তু এসব কর্মকর্তা কেন নির্বাচনী নিয়ম ভেঙেছেন, কোন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন- তদন্তে তা নেই।
এমনভাবে তদন্ত চলেছে এবং অপরাধীদের চিহ্নিত করা হয়েছে যেন তাদের উপরের দিকে এর সাথে কেউ জড়িত নন। তদন্ত প্রতিবেদন মতে, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা স্বেচ্ছায় এমন অন্যায় করেছেন। এতে করে অনিয়মের মূলে যারা সবাই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেল। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও, ওসি ও বিপুল ব্যবধানে জিততে যাওয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। এ সরকারের আমলে বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে মূলত এরাই বেআইনিভাবে সরকারদলীয় প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে সাহায্য করেছেন। যারা প্রকৃতপক্ষে উপরের হুকুম তামিল করেন সেই ১২৫ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়েছে। লোকদেখানোর জন্য বাকিদের মধ্যে প্রশাসন ও পুলিশের নি¤œস্তরের কয়েকজন রয়েছেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ‘প্রার্থনা’ জানিয়েছে কমিশন।
বিগত সময়ে সরকারি দল নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন যেমন দেখা গেছে, গাইবান্ধার নির্বাচনটিও সে ধরনের একটি ছিল। জোরজবরদস্তি করে ভোট কেড়ে নেয়া, বিরোধীদের কেন্দ্রে উপস্থিত হতে বাধা দেয়া ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয়াসহ সন্ত্রাসী এবং জালিয়াতি যতভাবে করা যায় তার সব সেগুলোতে হয়েছে। কোনো কোনো নির্বাচনে এমন অনিয়ম গাইবান্ধার চেয়ে আরো জোরালোভাবে হয়েছে। এ অবস্থায় হাবিবুল আউয়াল কমিশনের একটি মাত্র নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে তদন্ত ও নামমাত্র শাস্তি দেয়া দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার অনাস্থা কমাতে সামান্যতম কাজেও আসবে না।
নির্বাচন শুধু একদিনে একটি ভোটকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় না, মনোনয়ন দাখিল থেকে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য একটি নির্ধারিত সময়ের ব্যাপার। হিসাব মতে, এ সময় নির্ধারিত এলাকার আইনশৃঙ্খলা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকার কথা। প্রশাসন ওই সময় ইসির আদেশে চলার কথা। বাস্তবে এ সময় পরিস্থিতি পুরোপুরি সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। কাজী রকিব ও হুদা কমিশন এমনকি আউয়াল কমিশনও এ সময় নির্বাচনী এলাকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিরপেক্ষ ভোট আয়োজনে উৎসাহী হয়নি।
বাংলাদেশের সঙ্কটটি এখন আর শুধু ভোটব্যবস্থার সঙ্কটে সীমাবদ্ধ নেই, আসলে দেশ পরিচালনার ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন দরকার। যারা দেশের সব খাতে গণতন্ত্রকে সচল হতে দেবেন। নির্বাচন কমিশনসহ সব প্রতিষ্ঠান সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হবে। বিধিবিধান সঠিকভাবে পরিচালিত হলে স্বচ্ছ নির্বাচন সম্ভব। যেখানে জনগণ পছন্দ অনুযায়ী ভোট দিতে পারবে। আউয়াল কমিশনের উচিত জন-আকাক্সক্ষার প্রতি সম্মান দেখানো।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা