দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই
- ০২ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০৫
বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থিক খাতে বর্তমান সরকারের আমলে টানা জালিয়াতি চলেছে। অন্য দিকে, এ নিয়ে কেউ কোনো কথা বলতে পারেননি। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো কোনো ধরনের টুঁ শব্দ করেনি। সংবাদমাধ্যম অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেনি। এর পরও লুটপাটের যেসব ঘটনা ফাঁস হয়েছে সেগুলো নিয়েও সরকার দায়িত্বহীন কথা বলেছে। এই সরকারের শুরুতে ২০১২ সালে হলমার্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে তৎকালীন মন্ত্রী ‘সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বড় অঙ্ক নয়’ বলে বিষয়টিকে খাটো করে দেখান। এরপর ব্যাংক খাতে বড় বড় বহু দুর্নীতি হয়েছে, তা নিয়ে কানাঘুষা হয়েছে। এ ধরনের অনিয়ম ও তছরুপের একটি ঘটনাও সরকার স্বীকার করতে চায়নি। তারই বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাবে দেশের ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এখনো সরকারের মধ্যে এ নিয়ে কোনো চেতনা জাগৃতি নেই।
সর্বশেষ, এক মাসে গত নভেম্বরে কয়েকটি ব্যাংক থেকে ৯ হাজার কোটি টাকা ‘বের হয়ে যাওয়া’র খবর প্রকাশ হয়েছে। এ সময় আরো নতুন নতুন খবর প্রকাশ পাচ্ছে যাতে বড় বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির কথা জানা যাচ্ছে। এগুলো সব সম্প্রতি ঘটেছে, এমন নয়। বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঠাণ্ডা মাথায় অর্থ হাতিয়ে নেয়ার একটি ঘটনা সহযোগী একটি দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। পত্রিকাটি জানাচ্ছে, ইসলামী ব্যাংকের ওপর সরকারের কড়া নজরদারি ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক নিয়ে এতটাই কড়াকড়ি আরোপ করে যে, প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন ছিল। অথচ ২০২০ সালে মার্চে হঠাৎ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যবেক্ষক প্রত্যাহার করে নেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবার মনে করেছে, ইসলামী ব্যাংকের ওপর এখন আর সাধারণ নজরদারিও দরকার নেই। ঘটনাটি ঘটে এর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পরিবর্তনের পর। আগের কর্তৃপক্ষের অধীনে এটি টানা দেশের বৃহৎ ও সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাংক ছিল। আন্তর্জাতিক সব রেটিংয়ে উচ্চ বিশ্বাসযোগ্যতার সনদ নিয়ে এসেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নজরদারি প্রত্যাহারের পর দেখা গেল, দ্রুত ঋণ বেড়েছে। কেবল একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নামে এ ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ হিসেবে চলে গেছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর হয়েছে।
লুটপাটকারী চক্র একই ধরনের ফন্দি করেছে অন্যান্য সব ব্যাংক থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ব্যাপারেও। সরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও যে ব্যাংক থেকে অর্থ হাতানো হবে সবাই যেন একযোগে তছরুপের ঘটনা ঘটিয়েছে। বড় বড় ভালো কাজে যেমন সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার- সেভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে মিলিত অপচেষ্টা চালানো হয়। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজে বলছে- ১০টি ব্যাংক দুর্বল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলো দেউলিয়া হয়ে গেছে। এ ছাড়া সরকারের মন্ত্রী ও বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তি যেসব মন্তব্য করছেন, তাতে ব্যাংক খাতের ওপর মানুষের সন্দেহ বাড়ছে, আস্থা নষ্ট হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব নিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গ্রাহকদের দ্বিধা আরো বাড়াচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেকে নগদ অর্থ উত্তোলন করতে গিয়ে বিপত্তিতে পড়ছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এখন মানুষ উৎকণ্ঠায় আছে, ব্যাংক থেকে তারা সমুদয় অর্থ তুলে নেবেন কিনা। এটি দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় বড় বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি গণ অনাস্থায় পরিণত হলে অর্থনীতি ধসে পড়বে।
ব্যাংকব্যবস্থা এতটা সঙ্গিন হওয়ার বিষয়টি যদি আমরা খতিয়ে দেখি, তাহলে এর মূল কারণ রাজনীতিতে লুক্কায়িত। যারা সরকার পরিচালনা করছেন, তারা নিয়ম-কানুন মানতে চাননি। নিজেরা এবং আত্মীয়স্বজন ও দলীয় লোকদের সুযোগ করে দিতে চেয়েছেন। নিয়মের পরিবর্তে স্বেচ্ছাচারিতা প্রাধান্য পেয়েছে। ঋণের নামে জনসাধারণের অর্থ তুলে নেয়ার সুযোগ দিলেন। এখন সেই অনিয়ম এতটাই বড় বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে, আর সামাল দেয়া যাচ্ছে না। অথচ প্রথম অনিয়মটি ঘটার পর স্বীকার করে ব্যবস্থা নিলে জাতির এ সর্বনাশ হতো না। আমরা মনে করি, এখনো সময় শেষ হয়ে যায়নি। যারা এই অপকর্মগুলো করেছেন, তাদের শনাক্ত করে সে সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে কোষাগারে থাকা বাকি অর্থও লুটপাট হয়ে যাবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা