২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
মেঘনার ভাঙনে জনজীবনে আতঙ্ক

রামগতি-কমলনগর বাঁচান

-

দৈনিক নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে এর কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি জানান, লক্ষ্মীপুর জেলার দুই উপজেলা রামগতি ও কমলনগরে চলতি শুকনা মৌসুমেও ভাঙন চলছে প্রমত্তা মেঘনা নদীর। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় পাঁচবার আশ্বাস দিলেও এ কাজের বাস্তব কোনো অগ্রগতি নেই। আশ্বাসে আর ওয়াদায় আরো এক বছর অতিক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে; কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অথচ গত জানুয়ারি মাসে চলতি বছরের শুরুতে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক স্বয়ং এই ভাঙন রোধের কাজ উদ্বোধন করেছেন।
একই প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, সরেজমিন দেখা যায়, মেঘনার তাণ্ডবে-জলাবদ্ধতা ও জোয়ারের অস্বাভাবিকতায় বিপর্যস্ত লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা ও রামগতি উপজেলার লাখ লাখ মানুষ। দীর্ঘ তিন দশক ধরে এ অবস্থা মেঘনা পাড়ের এই বনি আদমদের। বছরজুড়েই ভাঙছে মেঘনা নদীর তীর। ভাঙছে তো ভাঙছেই, তদুপরি দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে উপকূলের লাখো মানুষের জীবন। লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ২০২১ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের কার্যনির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে কমলনগর-রামগতির মেঘনা তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের জন্য তিন হাজার ৮৯ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এ বছরের পয়লা মাস, জানুয়ারিতেই কমলনগরে সাহেবের হাট ইউনিয়নে মেঘনা নদী এলাকায় বাঁধ নির্মাণ উদ্বোধন করেন স্বয়ং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু এ কাজ দীর্ঘ এক বছরেও শুরু করা হয়নি। এদিকে, মেঘনার ভাঙন থামেনি। ফলে ছোট হয়ে আসছে এ দু’টি উপজেলার স্থলভাগের মানচিত্র। এলাকাবাসী জানালেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দিয়ে মেঘনা নদীর তীর রক্ষাবাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা। কিন্তু কাজটির উদ্বোধন করা হয়েছে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। বালুর অভাবসহ নানান কথা বলে এক বছরেও কাজ শুরুই হয়নি। কাজটি বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। এদিকে মেঘনার তীর ভেঙে ভেঙে সংশ্লিষ্ট স্থলভাগ ক্রমেই ছোট হয়ে যাচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৩৬টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে বালুসঙ্কটে এবং প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড় না হওয়ায় কাজ শুরুই করা যায়নি। এদিকে ভাঙনগ্রস্ত মানুষ দ্রুত তীর রক্ষাবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। এ জন্য তারা মানববন্ধনও করেছেন বারবার। তারা কমলনগর ও রামগতিকে ভাঙনের কবল থেকে বাঁচাতে জোর দাবি জানান।
এবার সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রী ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে এসে জনগণকে আশ্বস্ত করে যান, ‘বালুর বর্তমানে টেস্টিং চলছে, মানসম্মত বালু পাওয়া গেলেই কাজ শুরু হবে বাঁধের।’ এদিকে, সাহেবের হাট ও কালকিনি ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদ্বয় বলেছেন, নদীভাঙনে এসব ইউপির বেশির ভাগ জনপদই বিলীন হয়ে গেছে। জোয়ারে ডুবে যায় বহু জনপদ। রামগতির চরগাজী ইউপি চেয়ারম্যান জানালেন, মেঘনা নদীর ভাঙনরোধে ব্যাপক আন্দোলন করা হয়েছে। এই দুই উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী বেড়িবাঁধ নির্মাণকল্পে বিশাল প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। তবে বাস্তবে এর কোনো অগ্রগতি আজও হয়নি। বিভিন্ন অজুহাতে এই প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে গেছে। লক্ষ্মীপুরে পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘বাঁধ প্রকল্পের কাজ পাওয়া ঠিকাদাররা চাঁদপুর থেকে বালু এনে জিও ব্যাগে ভর্তি করে তা নদীতে ডাম্পিং করতেন ভাঙন রোধ করার জন্য; কিন্তু বালুর ঘাটতি থাকায় তা বন্ধ। বিশেষ ব্যবস্থায় এ বালু আনার কাজ চলছে। শিগগিরই কাজটি আরম্ভ করা হবে।’ এদিকে, স্থানীয় এমপি বলেছেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কোনো কিছু জানি না। এটি ঠিকাদারদের ব্যাপার। কিভাবে তা করা হবে, এটি তাদের বিষয়। আমার কাছে এ ব্যাপারে নতুন কোনো তথ্য নেই।’
রামগতি ও কমলনগর-লক্ষ্মীপুরের এ দু’টি উপজেলা রক্ষার্থে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। অন্যথায় জনমনে এ বিষয়ে সৃষ্ট ভয়াবহ আতঙ্ক কাটবে না। তা গভীর উদ্বেগের ব্যাপার।


আরো সংবাদ



premium cement