২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ভিক্ষুক বাড়ছে রাজধানীতে

অর্থনীতির ধস ঠেকানো জরুরি

-

রাজধানীতে ভিক্ষুক বেড়েছে। গত দুই বছরে প্রচুর নতুন মুখ যুক্ত হয়েছে ভিক্ষুকের দলে। অর্থনীতির বেহাল দশার সাথে এর নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। করোনার অভিঘাত সামলাতে ব্যর্থতা, জ্বালানি খাতে অরাজক পরিস্থিতির কারণে শিল্পকারখানার কর্মীছাঁটাই, ব্যবসায়-বাণিজ্যে দুরবস্থায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ বন্ধ হওয়া- ইত্যাদি কারণে বিপুল মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। এদের সহায়তায় কেউ এগিয়ে আসেনি। ফলে দুর্ঘটনা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার বা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত অনেক মানুষ বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামতে বাধ্য হচ্ছেন।
একটি সহযোগী দৈনিকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজধানীতে ভিক্ষাবৃত্তিতে নতুন মুখ বাড়ছে। ঢাকায় কত ভিক্ষুক আগে ছিল বা এখন কত বেড়েছে সে হিসাব পাওয়ার সুযোগ নেই। খোদ সমাজসেবা অধিদফতরের ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলতে পারেননি তার অধীনস্ত মিরপুরের ভিক্ষুক পুনর্বাসনে কেন্দ্রে কতজন ভিক্ষুক আছেন। তবে বেসরকারি সামাজিক সংগঠনগুলোর হিসাব থেকে জানা যায়, বছর তিনেক আগেও রাজধানীতে পাঁচ লাখের মতো ভিক্ষুক ছিল। তাদের পুনর্বাসনে ২০১০ সালে ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। বর্তমান সরকারের অনেক উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের মতো এরও লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়, ২০১৮ সালের মধ্যে দেশ ভিক্ষুকমুক্ত করার।
সেই প্রকল্প অনেক আগেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। সরকারি সব প্রকল্পের মতোই কিছু অর্থ নয়ছয় হয়েছে, কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অংশীদারের পকেট ভারী হয়েছে; কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। ২০১৩ সালে ওই প্রকল্পের আওতায় ঢাকায় বিমানবন্দর, সোনারগাঁওসহ গুরুত্বপূর্ণ সাতটি ‘ভিক্ষুকমুক্ত এলাকা’ ঘোষণা করা হয়। এসব এলাকায় ছোট দোকান, ব্যবসার পুঁজি, রিকশা-ভ্যান কিনে দিয়ে ভিক্ষুক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। চলতি অর্থবছর পর্যন্ত এসব কাজে ব্যয় হয়েছে ৭৫ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ বছরের জন্য বরাদ্দ আছে ১২ কোটি টাকা। কিন্তু পুনর্বাসিতরা খুব দ্রুতই ফিরে গেছেন আগের পেশায়। অর্থাৎ পুরো ব্যয়ই গেছে পানিতে।
সহযোগী দৈনিকের রিপোর্টে সরেজমিন পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে বলা হয়েছে, নি¤œবিত্তদের অনেকে কাজ না পেয়ে ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নিয়েছেন। এমনকি ভিক্ষুকমুক্ত এলাকায়ও তারা বসছেন। ফলে সারা দেশে ভিক্ষুক পুনর্বাসনে সরকারের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
শাহবাগ, কাওরানবাজার, আজিমপুর, পুরান ঢাকার পুরো এলাকা- সদরঘাট, বংশাল, জজকোর্ট, সবখানেই নতুন ভিক্ষুক। মসজিদ, বাজার, শপিংমল থেকে কেউ বের হলে একসাথে ১৫-২০ জন ঘিরে ধরছেন। এদের বেশির ভাগ কাজ বা কোনো বিকল্প উপায় না পেয়ে হাত পাততে শুরু করেন। সদরঘাটের ভ্রাম্যমাণ চা-সিগারেট বিক্রেতা সমর আলি (৬৫) করোনায় পুঁজি হারিয়ে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। ঠেলাগাড়ি চালাতে গিয়ে কোমরে চোট পেয়ে সেটিও গেছে। ‘দ্রব্যমূল্যের চাপে’ এখন বাধ্য হয়ে মানুষের কাছে হাত পাতছেন।
কাওরান বাজারের সখিনা বেগম (৬৫) বাসাবাড়িতে কাজ করতেন। করোনার সময় কাজ চলে যায়। আয়ের টাকায় এখন চাল ডাল নুন কিনতে হিমশিম। সম্প্রতি দুর্ঘটনায় একটি হাত অচল হয়ে পড়লে কেউ আর কাজ দেয়নি। তাই ভিক্ষায় নেমেছেন।
সমাজ গবেষকরা বলছেন, করোনার অভিঘাত, দ্রব্যমূল্যের কশাঘাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে ঢাকায় ভিক্ষুক বেড়েছে। গ্রামে কাজ নেই, বাধ্য হয়ে ঢাকামুখী হয় দরিদ্র মানুষ। এখানেও কাজ নেই। সত্যিই পুনর্বাসন চাইলে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে।
মূলত অর্থনীতিতে ধস, ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি মানুষের জন্য কতটা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে- এ রিপোর্ট তারই দৃষ্টান্ত। এমতাবস্থায় শুধু ভিক্ষুকদের নিয়ে ভাবার আর অবকাশ নেই। মুষ্টিমেয় উচ্চবিত্ত ছাড়া পুরো জাতিই এখন বিপন্ন। রক্ষা করতে হবে পুরো জাতিকেই। এ জন্য অর্থনীতির ধস ঠেকানো বা পুনরুদ্ধারই একমাত্র বিকল্প। বর্তমান সর্বব্যাপ্ত দুর্নীতির পরিবেশে সেটি অসম্ভব।


আরো সংবাদ



premium cement