অন্ততপক্ষে বিভাগীয় তদন্ত করুন
- ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০৫
দেশে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের ঘোষিত টেন্ডারমাফিক বাস্তবে কাজ সম্পন্ন হবে এমনটি কেউ আর আশা করেন না। তবে সেই কাজ ন্যূনতম মানের হবে- তা আশা করা নিশ্চয় দুরাশা নয়। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে সরকারি উন্নয়ন কাজে যেভাবে অর্থের নয়ছয় হচ্ছে; তাতে বর্তমানে এটিও দুরাশায় পর্যবসিত হয়েছে। আসলে দেশে অনিয়ম-দুর্নীতি সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। ফলে সরকারি প্রায় সব কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেসব দেখে দেখে আমাদেরও গা-সওয়া হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে একটি সাধারণ প্রবণতা হলো- গরিবের জন্য সরকারি বরাদ্দে সবাই ভাগ বসাতে চান। এ ধরনে একটি খবর গতকাল ছাপা হয়েছে নয়া দিগন্তে।
নয়া দিগন্তের জীবননগর (চুয়াডাঙ্গা) সংবাদদাতার পাঠানো প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জীবননগর উপজেলায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন ব্যক্তিদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে দেয়া ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জীবননগর উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে ৮৫টি ঘর নির্মাণ করা হয়। এসব ঘর হস্তান্তরের মাত্র ছয় মাসের মধ্যে মেঝের ঢালাই উঠে যাচ্ছে। দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যেক পরিবারকে বাথরুমের পাইপসহ দুই হাজার টাকার মালামাল কিনতে বাধ্য করা হয়। প্রতিটি ঘরের ভিত ও দেয়ালের উচ্চতা প্রায় এক ফুট করে কম দেয়া হয়েছে। আরসিসি ঢালাইসহ ভিত ৩ দশমিক ৩ ফুট হওয়ার কথা থাকলেও দুই থেকে আড়াই ফুটের মতো এবং ঘরের উচ্চতা ৮ দশমিক ৬ ফুটের জায়গায় করা হয়েছে ৭ থেকে সাড়ে ৭ ফুট। ভালোভাবে লাগানো হয়নি জানালা-দরজা। অনেক ঘরের মেঝেতে ইটের সলিং নেই। আন্দুলবাড়ীয়ার ঘুগরোগাছির উপকারভোগীরা জানিয়েছেন, ইটের সলিংয়ের পরিবর্তে পলিথিন দিয়ে মেঝে ঢালাই করা হয়েছে।
নির্মাণকাজেই শুধু অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি; ঘর বরাদ্দের ক্ষেত্রেও প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের না দিয়ে জমি ও ঘরবাড়ি আছে- এমন লোকজনকেও দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট এক ইউপি চেয়ারম্যান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, নিয়ম মোতাবেক ঘর বরাদ্দ কমিটিতে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান সদস্য; কিন্তু কমিটির কোনো বৈঠকে তাকে ডাকা হয়নি। ঘর কাকে দেয়া হচ্ছে, কিভাবে তৈরি করা হয়েছে- কোনো কিছু তার জানা নেই।
ঘর নির্মাণ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বক্তব্য প্রায় একই রকম। জীবননগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বলেন, ভ্যাট বাদ দিয়ে এসব ঘরের জন্য বরাদ্দ ছিল দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা করে। ঘর নির্মাণে অনিয়মের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি। দায়িত্বে থাকা তৎকালীন ইউএনও বলেছেন, যে অভিযোগ উঠেছে সে রকম কিছু নয়, তবে কিছু এদিক-ওদিক হয়ে থাকতে পারে। আর জেলা প্রশাসক বলেন, চুয়াডাঙ্গার প্রতিটি ঘরের মান ভালো। সব জায়গায় ভালো কাজ হয়েছে।
অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে সারা দেশের মতো এসব ঘর নির্মাণে ঠিকাদারের পরিবর্তে জীবননগরেও উপজেলা প্রশাসনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তবু ঘর নির্মাণকাজ নিন্মমানের হয়েছে- এর প্রমাণ মেলে স্থানীয় মাঠপ্রশাসনের মৌখিক এক নির্দেশনায়। উপকারভোগীরা কারো সাথে যেন এ নিয়ে কোনো কথা না বলেন। যা বলার তারাই বলবেন। আর দায়িত্বে থাকা তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কথায়ও কাজের মান নিয়ে উপকারভোগীরা তাকে জানালে তিনি বলেছিলেন, ‘যা বাজেট আছে তাই করা হচ্ছে। এর বেশি তো করতে পারব না।’
ঘরের নির্মাণকাজ যে নিন্মমানের হয়েছে, এ কথা না বলাই ভালো। কারণ, হস্তান্তরের ছয় মাসের মাথায় দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়া ও মেঝের প্লাস্টার উঠে যাওয়াই এর আলামত। সঙ্গত কারণে কাজটি যথাযথভাবে হয়েছে, নাকি অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে- এ বিষয়ে অন্ততপক্ষে একটি বিভাগীয় তদন্ত হওয়া দরকার। তা না হলে যে অভিযোগ উঠেছে তা সত্য বলেই প্রতীয়মান হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা