২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সুপারশপে বিদেশী পণ্যের ঘাটতি

আঁচ লাগছে ধনীদের জীবনেও

-

নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে আগুন লেগে আছে। সম্প্রতি আটা, চিনি, তেলের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নিত্যপণ্য দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে। এতে করে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে আগেই। দরিদ্র মানুষের জন্য খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করেও পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা যাচ্ছে না। সামনের দিনগুলো আরো কঠিন হবে বলে জানিয়েছেন স্বয়ং সরকারপ্রধান। ফলে সাধারণ মানুষসহ সবার মধ্যে শঙ্কা ছড়িয়ে পড়ছে।
এমনই যখন অবস্থা ঠিক সেই মুহূর্তে সমাজের বিত্তবান মানুষও সঙ্কটের আঁচ পেতে শুরু করেছেন। জানা যাচ্ছে, রাজধানীর শপিংমল বা সুপারশপ আউটলেটগুলোতে পণ্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। নয়া দিগন্তের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, সুপারশপগুলোতে বেশি দাম দিয়েও মিলছে না আমদানি করা পণ্য। কিছু জিনিসের দাম বেড়েছে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত। যাদের টাকা আছে তাদের জন্য অবশ্য দাম কোনো বিষয় নয়। তারা দাম নিয়ে ভাবেন না, পছন্দের নির্দিষ্ট জিনিস পাওয়া নিয়ে ভাবেন। কারণ তারা ব্যবহার্য বিদেশী পণ্যটি সব সময় পেয়ে অভ্যস্ত। সেটি না পেলে তাদের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়, থমকে যায়।
এরই মধ্যে শিশুখাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। এ ছাড়াও অনেক পণ্যের মজুদ শেষ হয়ে গেছে। সেগুলো পাওয়া যাচ্ছে না। আবার কিছু পণ্য পাওয়া গেলেও সরবরাহ ঘাটতির কারণে দাম বেড়েছে বিপুল। আমদানিকারকদের কাছেও স্টক নেই। নেসলে দুধ, চকোলেটসহ কিছু পণ্য অতিরিক্ত দামেও মিলছে না।
সুপারশপের বিক্রেতারা বলছেন, আগামী দিনগুলোতে পণ্য মিলবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। বর্তমান পরিস্থিতির জন্য অস্থিতিশীল ডলারের বাজার দায়ী বলে মনে করেন তারা। ডলার সঙ্কটে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ও আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলায় জটিলতা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভূমিকা তো আছেই।
আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, এলসি সমস্যায় তারা পর্যাপ্ত পণ্য আমদানি করতে পারছেন না। বিদ্যমান স্টক ফুরিয়ে গেলে অবস্থা কেমন হবে বুঝতে পারছেন না।
রাজধানীর সুপারশপ মিনাবাজারের ম্যানেজার জানান, তাদের এখানে সব ধরনের পণ্য পাওয়া যায়; কিন্তু দেশীয় পণ্য ছাড়া বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্য কমে যাওয়ায় তারা এখন সঙ্কটে। বিলাসী পণ্যের আমদানি কম হলে সাধারণ মানুষের জীবনে তেমন কোনো প্রভাব পড়ত না; কিন্তু অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানিও কমছে।
ডলার সঙ্কটের কারণে সরকার বিলাসপণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কয়েক মাস আগে। আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে ওই সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। যত দিন যাবে এ প্রভাব আরো তীব্র হবে। কারণ ডলারের সঙ্কট কেটে যাওয়ার আপাতত কোনো সম্ভাবনা নেই। রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় দিন দিনই কমছে। বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের অভাবে শিল্পোৎপাদন ও রফতানি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক। অর্থনীতির স্বাভাবিক গতিশীলতা ব্যাহত। এ ক্ষেত্রে যেসব সংস্কারের কথা বিশেষজ্ঞরা বলছেন তার অংশমাত্রও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেই; বরং এ চরম সঙ্কটকালেও ব্যাংকব্যবস্থা থেকে বিপুল অর্থ নানা কায়দায় বের করে নেয়ার প্রক্রিয়া অবাধে চলছে।
বাণিজ্য খাতে চলছে সিন্ডিকেটের কারসাজি। তেল, চিনি, আটার সরবরাহ কমে যাওয়ার পেছনে এমনই কোনো ব্যবসায়ী চক্রের ষড়যন্ত্র আছে বলে অনেকের ধারণা।
একই সাথে জাতীয় রাজনীতিতে যে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে সেটিও অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করার যে নীতি ক্ষমতাসীনরা অনুসরণ করছে তা কোনোভাবে সমাজের গণতান্ত্রিক বিকাশের অনুকূল নয়। অর্থনীতির বিকাশও এর সাথে জড়িত। ফলে আগামী দিনগুলো আরো ধোঁয়াশাপূর্ণ হবে সন্দেহ নেই।


আরো সংবাদ



premium cement