দ্রুত নিষ্পত্তি প্রয়োজন
- ২৯ নভেম্বর ২০২২, ০০:০৫
দেশে সম্মানজনক কিংবা পছন্দমতো কাজ না পেয়ে, কর্মসংস্থানের অভাবে বিপুল মানুষ কাজের খোঁজে বিদেশে অভিবাসী হতে দেশ ছাড়েন। বিশেষ করে তরুণরা। তাদের লোভনীয় চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে একটি চক্র পাচারের মতো জঘন্য কাজ করে। শুধু পাচার করে এ চক্র ক্ষান্ত হচ্ছে না, অনেক সময় বিদেশে আটকে নির্যাতন করে পরিবারের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়। দেখা গেছে, অভিবাসী নারী-পুরুষ শ্রমিকদের অনেকে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
মানবপাচার একটি ঘৃণ্য ও কঠিন দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু দেশে মানবপাচার কমছে না; বরং দিন দিন বাড়ছে। মানবপাচারের শিকার ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষের অনেকে প্রতিকারের আশায় আইনের আশ্রয় নেন; কিন্তু এর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রায় সব মামলা দীর্ঘ দিন ধরে অনিষ্পন্ন অবস্থায় পড়ে থাকায় অপরাধীরা ধরাকে সরাজ্ঞান করছে। পুলিশ সদর দফতরের তথ্য উদ্ধৃত করে একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদনে উল্লেøখ করা হয়েছে, গত ১৮ বছরে দেশে মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা হয়েছে সাত হাজার ৫১৭টি। আর নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ২৪৭টি, যা মোট মামলার মাত্র ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। বাকি ৯৭ শতাংশ মামলাই এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
আমাদের তরুণরা যারা অনেক স্বপ্ন নিয়ে একটি কাজের আশায় নিজের পরিবারকে কিছুটা সচ্ছলতার মুখ দেখাবেন ভেবে দালালের প্রলোভনে দেশ ছাড়েন। তারা সরল-বিশ্বাসে সহায়-সম্পদ সব কিছু দালালের হাতে তুলে দেন; কিন্তু প্রতারিত হয়ে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন কপর্দকশূন্য হয়ে। অনেক সময় শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে ফিরে আসেন। অনেকে নির্যাতনে মারা গেছেন। অবস্থা এমন, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশী শ্রমিকরা যাচ্ছেন। আমরা সে সংবাদগুলো তখনই পাই, যখন বড় ধরনের নৌ-দুর্ঘটনা ঘটে, মানুষ মারা যায়। গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, এসব নাগরিকের মধ্যে আফ্রিকা আর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিক বেশি।
কেন দেশ থেকে বিপুল বাংলাদেশী অভিবাসী হতে চান, সেখানে গিয়ে কীভাবে প্রতারিত হন, তা খুঁজে বের করতে হবে। যদিও অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ ভারত-পাকিস্তানের প্রায় কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে; বরং বাংলাদেশের অবস্থান তুলনামূলক ভালো। তা হলে কেন বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী হওয়ার চিন্তা? আমাদের মনোজগতে কি বিরাট কোনো সঙ্কট দেখা দিয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা জরুরি। সঙ্কটের কারণ জেনে তার প্রতিকার করতে হবে।
মানবপাচার প্রতিরোধে প্রয়োজন যারা অবৈধভাবে বিদেশে যেতে চান, তারা যেন বৈধ পন্থা ছাড়া বিদেশে না যান, সেই ব্যবস্থা করা। প্রথম থেকে সচেতনতা তৈরি করা গেলে, বিদেশ গেলে কী সমস্যা তৈরি হয়, তা জানানো হলে এ প্রবণতা কমবে। এ ছাড়া মানবপাচারের শিকার জনগোষ্ঠীকে দেশেই কাজ করার জন্য স্বপ্ন দেখাতে হবে। তাদের কাজের জায়গা দিতে হবে। যদি তাদের জন্য স্বপ্নের জায়গা তৈরি করা যায়, দক্ষতা বাড়ানো যায়, তা হলে তারা বিদেশমুখী হবেন না।
লক্ষণীয়, যারা অল্প মেধার, স্কুল পর্যায়ে ঝরে পড়েছেন, ভালো ফলাফল করতে পারেননি, চাকরি পাওয়ার অনিশ্চয়তা আছে- তাদেরই একটি অংশ বিদেশে চলে যাচ্ছেন। সমাজে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা জরুরি। তবে মনে রাখা আবশ্যক, মানবপাচারের শিকার হয়ে দেশে ফেরত আসা ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি উভয় পর্যায়ে গুরুত্ব দিতে হবে। সবার আগে মানবপাচার কমাতে প্রয়োজন অপরাধীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি করা। তা না হলে বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে মানবপাচার বাড়বে বৈ কমবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা