এ ব্যাধি সমাজের গভীরে প্রোথিত
- ২৬ নভেম্বর ২০২২, ০০:০৫
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার নারী কবিতায় লিখেছেন, ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’। মূলত মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে নারী-পুরুষ উভয়ের অবদান সমান। সভ্যতার অগ্রগতির মূলে রয়েছে নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। তাই সমাজ বিনির্মাণে নারী-পুরুষ কারো ভূমিকা খাটো করে দেখার অবকাশ নেই।
নারীকে বাদ দিয়ে সমাজ উন্নয়নের কথা চিন্তা করা অবান্তর। নারীকে অবজ্ঞারও সুযোগ নেই। কিন্তু এ দেশে কারণে-অকারণে নারী অমানবিক আচরণের শিকার। আমাদের সমাজ-বাস্তবতায় নারীকে দুর্বলতার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। এ জন্য দুর্বল নারীর প্রতি সবল পুরুষ অবলীলায় নির্যাতন চালিয়ে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। জবাবদিহিহীনতার কারণে এর মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে করা জরিপের তথ্য তাই বলছে।
নারী-বিষয়ক সংগঠন ও মানবাধিকার সংস্থার করা একাধিক জরিপের তথ্য মতে, মহামারী করোনার সময় আমাদের দেশে নারীর প্রতি পারিবারিক নির্যাতন বেড়েছে। তবে সমাজবিজ্ঞানী ও অপরাধ-বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনা একটি উপলক্ষ মাত্র। করোনা না হলেও অন্য কোনো কারণে হলেও নারীর প্রতি পারিবারিক নির্যাতন বাড়ত। মহিলা পরিষদের ২০২১ সালে বাংলাদেশে নারী ও কন্যা নির্যাতন নিয়ে করা এক জরিপে দেখা গেছে, মোট নির্যাতনের শিকার নারীর ৮৩ শতাংশ যৌতুকের কারণে। কোভিডের পর যৌতুকের ঘটনা বেড়েছে। মহিলা পরিষদের তথ্য মতে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন দুই হাজার ৩৬ নারী। এর মধ্যে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হন ৯২ জন। যৌতুকের জন্য হত্যা করা হয় ৪২ নারীকে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে, ২০১৯ সালে ৪২৩টি পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে, ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫৪টি। ২০১৯ সালে নির্যাতনে মৃত্যু ৩৬৭ জনের, আর আত্মহত্যা করেন ৯০ নারী। ২০২০ সালে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয় ৮৯ জনকে। আত্মহত্যা করেন ১৮ জন। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১৭৫ নারীকে তাদের স্বামী হত্যা করেন। এ ক্ষেত্রে মাত্র ৯২টি মামলা হয়েছে।
নারীর প্রতি সহিংসতা একটি ফৌজদারি অপরাধ। তবে দেশে এখনো মানুষ পারিবারিক সহিংসতাকে ব্যক্তিগত বিষয় বলে মনে করে। সমাজ ও নারীও তা মেনে নেয়। নির্যাতনের প্রতিকারে আইনি সাহায্য নেন না ভুক্তভোগীরা।
বাস্তবে দেশের কাক্সিক্ষত অগ্রগতি চাইলে নারী-পুরুষ সম্মিলিতভাবে সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। এ চিন্তা সমাজে গভীরভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। তা না হলে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি ব্যাহত হতে বাধ্য। কিন্তু দেশে এমন ভাবনা শক্ত ভিত পায়নি। অথচ পৃথিবীর সূচনাকাল থেকে নারী ও পুরুষের হাত ধরে মানবসভ্যতার পথে এগিয়ে চলছে। সব যুগে সব দেশের মানুষের জন্য এ কথা সত্য। আমরা মনে করি, এখানে কোনো ধরনের স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ নেই।
নারীর অবদান অগ্রাহ্য করলে সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। এমন অবস্থা কখনো কাম্য হতে পারে না। পৃথিবীর সব সভ্যসমাজ তাই নারীর ভূমিকার স্বীকৃতি দিয়ে উন্নয়নের পথে পা বাড়িয়েছে। প্রকৃতপক্ষে নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। মানবকল্যাণের পথে তাই নারী-পুরুষ উভয়কেই অগ্রসর হতে হবে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসায়; কিন্তু বাংলাদেশের সমাজ-বাস্তবতায় নারীরা যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত, অবহেলিত ও নির্যাতিত। এই ব্যাধি আমাদের সমাজের গভীরে প্রোথিত হয়ে আছে। একে উপড়ে ফেলতে হবে। এর জন্য চাই জোরালো সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি। এ কথা বলা অসঙ্গত হবে না, নারী নির্যাতনের জন্য দায়ী আমাদের সমাজবাস্তবতা। ফলে শুধু শাস্তি দিয়ে নারী নির্যাতন বন্ধ করা যাবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা