২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বিরোধী নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আবার গায়েবি মামলা

গণতান্ত্রিক সহনশীলতা কাম্য

-

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সভা-সমাবেশের অধিকার সংবিধান-স্বীকৃত; কিন্তু ক্ষমতাসীনরা সবসময় তা মানতে চান না। অধিকার খর্ব করতে যত রকম কৌশল নেয়া সম্ভব তার সবই তারা ব্যবহার করেন। কিছু নমুনা দেখা গেল সম্প্রতি বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলো শুরুর পর। সমাবেশের অনুমতি দিতে গড়িমসি করা থেকে শুরু করে পাল্টা সমাবেশ ডাকা, পুলিশ দিয়ে হয়রানি, ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা, ধর্মঘটের নামে সব রকমের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া তো আছেই। এখন শুরু হয়েছে পুরনো এক কৌশলের প্রয়োগ। নতুন করে সামনে আনা হয়েছে গায়েবি মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, হয়রানি।


বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ আগামী ৩ ডিসেম্বর। আর ঢাকায় গণসমাবেশ ১০ ডিসেম্বর। এই দু’টি সমাবেশ সামনে রেখে বেপরোয়াভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে মামলা ও গায়েবি মামলার পুরনো অস্ত্রটি। রাজশাহীতে সমাবেশ ঠেকাতে নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দল ‘কাল্পনিক’ ঘটনা সাজিয়ে গণহারে মামলা দিচ্ছে। আসামি ধরতে পুলিশ বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত নওগাঁ, বগুড়া, নাটোর, জয়পুরহাট, পাবনা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিভিন্ন থানায় অর্ধ-ডজন মামলায় সাত শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঢাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক গায়েবি মামলা করা হচ্ছে। গত তিন দিনে ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগে এ ধরনের ৬০টি মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দলটি। বলেছে, সব মামলার বাদি পুলিশ। বিশেষ উদ্দেশ্যে এসব গায়েবি মামলা করা হচ্ছে। মামলায় যেসব নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ দেয়া হচ্ছে তার কোনোটিতে সত্যের লেশমাত্র নেই। সে ধরনের ঘটনা কোথাও ঘটেনি, কেউ দেখেনি। এমনকি পথচারীদের ধরে ধরে হুমকি দিয়ে মামলার সাক্ষী বানানো হয়েছে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে যেসব খবর আসছে সেগুলো বিস্ময়কর। কোনো সভ্য দেশের পুলিশ এ ধরনের কাজ করতে পারে- এটি অবিশ্বাস্য।


২০১৮ সালের নৈশভোটের নির্বাচনের আগে ঠিক এ অস্ত্রই ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। ওই সময় সারা দেশে কত গায়েবি মামলা দেয়া হয় তার কোনো নিশ্চিত হিসাব নেই। তবে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে বিএনপির পক্ষ থেকে দুই দফায় দুই হাজার ৪৮টি গায়েবি মামলায় প্রায় দেড় লাখ আসামির তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়। এসব মামলায় অজ্ঞাত হিসেবে আরো আসামি করা হয় প্রায় চার লাখ লোককে। ওই বছরের শুধু সেপ্টেম্বর মাসে রাজধানীতে ৫৭৮টি গায়েবি মামলার তথ্য পাওয়া যায়। এসব মামলায় যে লাখ লাখ নিরীহ মানুষ ভোগান্তির শিকার হন তারা সম্ভবত জীবনে কখনো ভুলতে পারবেন না এ অকারণ ভোগান্তির জ্বালা।
এসব কর্মকাণ্ড সরকারি দলই যে করছে; এমন কোনো প্রামাণ্য দলিল কেউ দেখাতে পারবে না; কিন্তু পুলিশ প্রশাসন সামনে আছে। তারা কারো নির্দেশে বা নিজ দায়িত্বে এসব গর্হিত কাজে জড়িয়ে পড়ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে নিরাপত্তাবাহিনীর একটি অংশ আন্তর্জাতিক বিশে^ বাংলাদেশের ভাবমর্যাদার হানি ঘটিয়েছে একটি রাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় পড়ে। এখন পুলিশও সেই একই পথে। এটি উদ্বেগের বিষয়।
বাংলাদেশ পুলিশি রাষ্ট্র নয়, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। পুলিশ দিয়ে গণতন্ত্রের স্বাভাবিক চর্চা ব্যাহত করা হলে অথবা পুলিশকে জনগণের প্রতিপক্ষ করে তোলা হলে তার ফল রাষ্ট্র বা সরকার- কারো জন্যই শুভ হতে পারে না।
গায়েবি মামলা দিয়ে মানুষকে দমানো যায় না, সেটি বিএনপির সমাবেশগুলোর বিপুল সাফল্য থেকে স্পষ্ট। গায়েবি মামলার অস্ত্র ভোঁতা হয়ে গেছে এ সত্য অস্বীকার করলে ক্ষতি শুধু সরকারের নয়; গোটা জাতির। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষমতাসীনরা সহনশীলতায় ফিরে আসবে- এটিই প্রত্যাশিত।

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement