২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
পাইকারি বিদ্যুতের দাম আবার বাড়ল

জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছাবে

-

মাত্র মাস দুই আগে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম একবারে ৫১ শতাংশের উপরে বাড়ানো হয়েছিল। পরে জ্বালানি বিশেষজ্ঞসহ নাগরিকদের তীব্র সমালোচনার মুখে নামমাত্র ৫ শতাংশ দাম কমানো হয়। এর রেশ কাটতে না কাটতে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। এবার পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বেড়েছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গতকাল দাম বাড়ানোর কথা জানিয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসির কাছে গত জানুয়ারি মাসে দাম বাড়ানোর আবেদন করেছিল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। তখন সেই আবেদন খারিজ করা হয়। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করে পিডিবি। ওই আবেদন বিইআরসি বিবেচনায় নিয়ে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
এ কথা ঠিক, পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়লেই এখনই গ্রাহক পর্যায়ে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। কিন্তু পাইকারি দাম বাড়ানোর ফলে বিতরণ কোম্পানিগুলোর গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব উত্থাপন করার বিকল্প থাকবে না। ইতোমধ্যে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এর কারণ হলো- সাধারণত সরবরাহ করা বিদ্যুতের পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে বিতরণ কোম্পানির রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়। সরবরাহ করা বিদ্যুতের দামের সাথে বিতরণ কোম্পানির পরিচালন ব্যয় যোগ-বিয়োগ করে খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দেয়ার কারণে বিতরণ কোম্পানিগুলোর রাজস্ব কমে গেছে। তাই পাইকারি দাম বেড়ে যাওয়ার সুযোগে কম উৎপাদন সামনে এনে বেশি করে দাম বাড়াতে চাবে কোম্পানিগুলো, যা কৌশলগতভাবে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ থাকবে না। ফলে গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে কোনো উপায় থাকবে না সরকারের।
যেকোনো ধরনের জ্বালানির দাম বাড়লেই জনজীবনে এর প্রভাব পড়তে বাধ্য। জ্বালানিনির্ভর বর্তমান সভ্যতায় এর দামের সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে সব জিনিসের দাম। সঙ্গত কারণে স্বাভাবিক পরিণতি হলো- জ্বালানির দাম বাড়লে অবধারিতভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়া। স্বভাবতই এতে জীবনযাত্রার ব্যয় আরো বেড়ে যায়। অথচ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ যখন দিশেহারা, ঠিক সেই মুহূর্তে পাইকারি দাম বাড়ানো হলো। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে পণ্যমূল্য আরো বাড়বে এবং জনগণের জীবনে দুর্গতি চরমে পৌঁছবে। খেটে খাওয়াসহ স্বল্প আয়ের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়বে।
জ্বালানি সঙ্কটের কারণে কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে কৃষি ও কলকারখানায় উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়বে। যার কারণে টালমাটাল হতে পারে গোটা বাজারব্যবস্থা। অথচ এখনই দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। তাদের টিকে থাকাই দায় হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়লে জনগণের খরচ বাড়বে। শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে।
অর্থনীতিবিদদের মতো আমরা মনে করি, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের মুষ্টিমেয় সুবিধাপ্রাপ্ত মানুষ ছাড়া বাকি সবার জীবন নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দামে নাভিশ্বাস অবস্থা, এর ওপর গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়লে জনদুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছবে। দুঃখজনক হলো- সরকার সব জেনে বুঝে নির্বিকার। সরকারের আচরণ দেখে এ কথা বলা অত্যুক্তি হবে না, জনগণের দুঃখ লাঘবে শাসকদের যেন কিছুই করণীয় নেই। জবাবদিহিহীন সরকারের কাছ থেকে এর চেয়ে নাগরিক সাধারণ আর কী আশা করতে পারে। এ বাস্তবতায় বলা অসঙ্গত নয়, আমাদের কপালে আপাতত দুর্ভোগই ভাগ্যের লিখন হয়ে থাকছে।


আরো সংবাদ



premium cement