২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
কপ-২৭ জলবায়ু সম্মেলন শেষ

অর্জন সামান্য হলেও গুরুত্বপূর্ণ

-

মিসরে ‘কপ-২৭’ জলবায়ু সম্মেলন শেষ হয়েছে। সম্মেলন কতটা সফল হলো বা বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় এটি কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে আলোচনা হবে। তবে সাধারণভাবে বলা যায়, সম্মেলনের অর্জন সামান্যই। শুধু ক্ষতিগ্রস্ত গরিব দেশগুলোর সহায়তায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) একটি তহবিল গঠনে সম্মত হয়েছে। এ টুকুই এবারের অর্জন। তহবিলের আয়তন কী হবে বা এতে কোন দেশ কত অর্থ দেবে এবং তা কিভাবে বিলিবণ্টন হবে সেসব পরে ঠিক করা হবে। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট, দাতারা এ তহবিল পরিচালনা করবেন এবং এটি ‘নিঃশর্ত’ হবে না। তহবিলের অর্থ বহুজাতিক উন্নয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে।
ইইউ’র এ উদ্যোগ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন। তার পরও এটি ঠিক যে, এই সামান্য অর্জন কিছুটা হলেও সুফল দেবে। কারণ এ তহবিল দরিদ্র দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে কিছুটা সহায়তা করবে। দরিদ্র দেশগুলোর ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামোর ওপর জলবায়ুর ধ্বংসাত্মক প্রভাব মোকাবেলা, উদ্ধারকাজ পরিচালনা ও পুনর্গঠনে কাজে লাগবে। সেই সাথে এটি বিশ্বব্যাপী গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন কমাতে অবদান রাখবে, যা প্যারিস জলবায়ু চুক্তির অন্যতম শর্ত।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্যারিসে কপ-২১ সম্মেলনে জলবায়ু চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হন বিশ্বনেতারা। ওই চুক্তিতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার লক্ষ্য নির্ধারিত হয়। ২০০টি দেশ ওই চুক্তি স্বাক্ষর করে। যদিও ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র পরে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়।
ক্যারিবীয় দেশগুলোর জোট ইইউ’র এই তহবিল গঠনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া এই তহবিলে যোগ দেবে বলে জানিয়েছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য জলবায়ু তহবিল গঠনে আপত্তি জানিয়েছিল। বিরোধিতা করছিল ধনী দেশগুলোও। কারণটা সহজবোধ্য। এ ধরনের একটি তহবিল গঠনের অর্থ হলো- পরিবেশ দূষণের মাধ্যমে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনে ধনী দেশগুলো যে বিরাট ক্ষতিকর ভূমিকা রাখছে তার দায় স্বীকার করে নেয়া। এর ফলে তাদের বিশাল আর্থিক দায় নিতে হবে। সে দায় তারা নিতে চায়নি। আর দায় স্বীকার না করে বারবার এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন মূলত বিশ্ববাসীর সাথে স্রেফ প্রতারণার শামিল। যাই হোক, চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত তারা যে কিছুটা দায় নিয়েছে- এটিকে আমরা অগ্রগতিই বলতে চাই। কারণ একবার দায় স্বীকার করার পর তা থেকে পিছিয়ে আসার আর কোনো পথ তারা পাবে না। তবে এ তহবিল গঠন, পরিচালনা ও বাস্তবে কাজে লাগানো কতটা সুষ্ঠুভাবে হয় সেটিই এখন দেখার অপেক্ষা। এ ধরনের তহবিল নিয়ে বিশ্ববাসীর অভিজ্ঞতা সন্তোষজনক নয়।
২০১৫ সালে উন্নত দেশগুলো এমনই একটি জলবায়ু পরিবর্তন ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তাতে ২০২০ সালের মধ্যে প্রতি বছর তহবিলে মাত্র ১০০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেয়ার কথা বলা হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের, বছরে ৪০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০২০ সালে দেশটি মাত্র ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার দেয়। ২০২১ সালে কত দিয়েছে সেই তথ্য জানা যাচ্ছে না। অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা তাদের প্রতিশ্রুত অর্থের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ দিয়েছে। যুক্তরাজ্য এখনো এক-তৃতীয়াংশ অর্থও দেয়নি।
চিত্রটা বলে দিচ্ছে, বিশ্ব জলবায়ুর সবচেয়ে বড় ঘাতক ধনী দেশগুলো ক্ষতিপূরণে আন্তরিক নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও মিসর সরকারের এক যৌথ গবেষণায় জানা যাচ্ছে, সঙ্কট মোকাবেলা ও গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমাতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য দরকার হবে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতি বছর প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ডলার। এই বিপুল অর্থ ধনী দেশগুলো সহজে দেবে এমন আশা করার সুযোগ কমই।
সুতরাং কপ-২৭-এ দেয়া তহবিল গঠনের বিষয়টিও ওইভাবে ঝুলে থাকে কি না এমন সংশয়ের কারণ যথেষ্ট। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, মানবজাতির সামনে দু’টি বিকল্প আছে। লড়াইয়ে একসাথে কাজ করা কিংবা ‘সম্মিলিত আত্মহত্যা’।


আরো সংবাদ



premium cement