নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামছাড়া
- দুঃসময়ে মধ্যম আয়ের মানুষও
- ২০ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০
অর্থনৈতিক মন্দায় দেশে বিনিয়োগ কম হচ্ছে। বাড়ছে না কর্মসংস্থান। বেসরকারি খাতের বিকাশ সঙ্কুচিত। বাস্তবে সরকারি ছাড়া অন্য খাতের কারো আয় বাড়েনি; বরং কমেছে। দেশের বেশির ভাগ মানুষের আয় কমেছে। ফলে আগের চেয়ে বৈষম্য বেড়েছে। এতে করে আয়-ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতায় মানুষের কষ্ট বাড়ছে। সাধারণ মানুষ বাজারের তালিকা কাটছাঁট করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে তাদের খাবারে পুষ্টির মান কমে যাচ্ছে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জনস্বাস্থ্যে।
বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম লাগামহীন। ব্যয়ের সাথে সমন্বয় রেখে আয় বাড়ছে না। আয়ের সাথে সাথে ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর পর বেশির ভাগ মানুষ সঞ্চয় করতে পারছে না। আগের সঞ্চয় ভেঙে সংসার চালাচ্ছে। মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে থাকায় ব্যাংকে রাখা আমানত বৃদ্ধির পরিবর্তে কমে যাচ্ছে। এসবের প্রতিক্রিয়ায় এখন দুঃসময়ে আছে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষ।
বিবিএসের পরিসংখ্যান, গত বছরের অক্টোবরে মানুষের আয় বেড়েছিল ৫.৯৭ শতাংশ। চলতি বছরের অক্টোবরে আয় বেড়েছে ৬.৯১ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে আয় বেশি বেড়েছে শূন্য দশমিক ৯৪ শতাংশ। একই সময়ের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার ৫.৭০ থেকে বেড়ে ৮.৯১ শতাংশ হয়েছে। লক্ষণীয়, গত এক বছরের ব্যবধানে আয়ের চেয়ে যেমন ব্যয় বেশি বেড়েছে, তেমনি আয় বৃদ্ধির হার কমেছে, ব্যয় বেড়ে যাওয়ার হার বেড়েছে। তবে বিবিএসের মূল্যস্ফীতি ও আয় বৃদ্ধির তথ্য নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
বিশ্বজুড়ে পণ্যের বাজারে অস্থিরতা চলছে। এই সুযোগে আমাদের দেশের একশ্রেণীর ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বাড়িয়ে অতি মুনাফার চেষ্টা করছে। দেশে উৎপাদিত পণ্যের দাম বৃদ্ধির কথা না থাকলেও বাড়ছে। গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। যেকোনো অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে ক্রেতার ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে তারা।
স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় চাল ও আটা। এ দু’টি পণ্যের দাম গত এক বছরের ব্যবধানে অনেক বেড়েছে। সরকারি হিসাবে, নাজিরশাইলের কেজি গত বছরের অক্টোবরে ছিল ৬৯ টাকা ৭৭ পয়সা। গত অক্টোবরে বেড়ে দাঁড়ায় ৮২ টাকা ৩৪ পয়সা। একই সময়ের ব্যবধানে প্রতি কেজি খোলা আটার দাম ৪১ টাকা ৯৫ পয়সা থেকে বেড়ে ৫৫ টাকা ৮৭ পয়সা হয়েছে। এর মধ্যে চালের আমদানি খুব কম। চালের ক্ষেত্রে চাহিদার বেশির ভাগ দেশে উৎপাদিত হয়। তাই এর দাম এত বেশি বৃদ্ধির পেছনে যুক্তি নেই। তবে গমের প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। আন্তর্জাতিক বাজারে এখন দাম কমলেও সে হারে দেশের বাজারে গমের মূল্য কমছে না।
বিবিএসের তথ্য, আলোচ্য সময়ে মোটা চালের দাম ৫৩ থেকে বেড়ে ৫৭ টাকা হয়েছে। কিন্তু বাজারে ৬০ টাকার কম মোটা চাল মিলছে না। মসুর ডাল ১২০ থেকে বেড়ে ১৩৫ টাকা, মুগ ডাল ১২৯ থেকে ১৩৩ টাকা, চিনি ৮০ থেকে বেড়ে ৯৯ টাকা হয়েছে। তবে বাজারে ১১৫ টাকার কমে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। এ তিন পণ্যের বড় অংশ আমদানি করা হয়। কিন্তু এসবের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে অনেক বেশি।
মাছ-গোশতের দামও বেড়েছে। অথচ গবাদিপশু ও মাছ আমদানি করতে হয় না। এগুলোর দাম এত বেড়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। ডিম আমদানি করতে হয় না। অথচ এর দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। তবে সিন্ডিকেট করে ডিম ও ফার্মের মুরগির দাম বাড়ানোর অভিযোগ পুরনো।
সয়াবিন তেল নিয়ে বাজারে তেলেসমাতি কাণ্ড ঘটেছে। লবণের কেজি ৩২ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৮ টাকা। কিন্তু পণ্যটির চাহিদার বেশির ভাগ মেটানো হয় দেশীয় উৎপাদন থেকে। সবজির হিসাবে আলুর দাম সব সময়ই ওঠানাম করে। চাহিদার সবটাই দেশে উৎপাদিত হয়। এর উৎপাদন খরচ বাড়েনি। আলু গত বছরের অক্টোবরে ছিল প্রতি কেজি সাড়ে ২৭ টাকা। চলতি বছর একই সময়ে দাম বেড়ে হয় ৩১ টাকা। সবজির মধ্যে প্রায় সব কিছুর দাম বেড়েছে।
বাজার বিশ্লেষকদের মতো আমরাও মনে করি, পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তারা এখন হিমশিম খাচ্ছে। ফলে নতুন করে সঞ্চয় করতে না পারায় আগের অর্থই ভেঙে খেতে হচ্ছে তাদের। এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী দুর্বল বাজারব্যবস্থা, সুশাসন ও জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহির অভাব। এ ক্ষেত্রে সুশাসন আনতে সময় লাগলেও বাজার ব্যবস্থাপনায় নজরদারি করার বিষয়টি সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। তাই সবার চাওয়া, সরকার জনগণের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে পণ্যমূল্যের যৌক্তিক দাম ফিরিয়ে আনতে বাজারে কঠোর নজরদারি করবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা