সব দিক থেকে পিছিয়ে আমরা
- ১৯ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০
কম্পিউটার ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পুরো বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। সব কিছু এখন মুহূর্তে ঘটে যায় আঙুলের ডগায়। ইন্টারনেট বা অন্তর্জাল হয়ে উঠছে জীবন যাপনের প্রধান নিয়ামক। প্রতিটি দেশ এর ব্যবহারে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বিপুল বিনিয়োগ করছে। উন্নত দেশগুলো আগেই এ জন্য সারা দেশে পর্যাপ্ত অবকাঠামো তৈরি করেছে। সব ধরনের প্রণোদনা দিয়ে তা পৌঁছে দিয়েছে জনসাধারণের দোরগোড়ায়। একটি দেশ কতটুকু উন্নত আর অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল তার অন্যতম সূচক হিসেবে এখন প্রদর্শন করা হয় ইন্টারনেটের সহজপ্রাপ্যতাকে। এ অবস্থায় কিছু দেশ রয়েছে যারা এ খাতে যথেষ্ট বিনিয়োগ করেনি বা করতে পারেনি। আবার কিছু দেশ আছে এর ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। বাংলাদেশ দু’দিক দিয়েই রয়েছে পেছনের কাতারে।
ইন্টারনেট ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপের বেলায় বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতা নিয়ে গবেষণাকারী যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান প্রক্সির্যাকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানা যায়, এ ধরনের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আছে শেষের সারিতে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর অনুপাত, প্রবেশের স্বাধীনতা, সেন্সরশিপসহ তালিকা প্রণয়নে তারা পাঁচটি মানদণ্ড বিবেচনা করে। এ ক্ষেত্রে আমরা প্রতিযোগিতা করছি তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে একেবারে অবরুদ্ধ দেশ চীন, মিসর ও ইরানের সাথে।
সংস্থাটি ইন্টারনেট ব্যবহারের সহজপ্রাপ্যতার ভিত্তিতে ২০টি দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে রয়েছে সবচেয়ে কম বাধাপ্রাপ্ত ১০টি ও সবচেয়ে বেশি বাধাপ্রাপ্ত ১০টি দেশ। তালিকায় সবচেয়ে বেশি বাধা পেয়ে ১০ পয়েন্টের মধ্যে ৯ দশমিক ২১ পেয়েছে চীন। ৮ দশমিক ১৬ পেয়ে দ্বিতীয় ইরান ও ৬ দশমিক ৮৪ পেয়ে তৃতীয় মিসর, ৬ দশমিক ৫৮ পেয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। অন্য দিকে, ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় শূন্য স্কোর নিয়ে যুক্তরাজ্য তালিকার প্রথমে রয়েছে।
আমাদের দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন প্রতি লাখে মাত্র ৩০ হাজার ৭১৫ জন। যেখানে তালিকার পেছনের দিকে থাকা দেশ চীনে ব্যবহারকারী লাখে ৭১ হাজার ৫৩৪ জন। তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে থাকা যুক্তরাজ্যে লাখে ৯৯ হাজার ২৩১ জন, জাপানে ৯৫ হাজার ৪৪০ জন, ফ্রান্সে ৯৪ হাজার ২৬৫, জার্মানিতে ৯৩ হাজার ৫৮৩ জন ও যুক্তরাষ্ট্রে ৯০ হাজার ৮১০ জন। বাংলাদেশের মানুষের ইন্টারনেটে এত কম সংযুক্তির কারণ অবকাঠামোগত দুর্বলতার পাশাপাশি এর উচ্চ ব্যয় ও নি¤œমানের সেবা। রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে দৃশ্য-অদৃশ্য বাধা।
বিধিনিষেধ আরোপে সরকার কতটা বেপরোয়া সেটি আমরা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের প্রয়োগ দেখে বুঝতে পারি। প্রায়ই সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে, বিচার হয়ে কারাগারেও যাচ্ছেন অনেকে। বিশেষ করে মানহানির মামলা একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব কারণে সরকারের অনেক সমালোচক দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এ ছাড়া সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের সুযোগ অনেকের ক্ষেত্রে সীমিত করে দেয়া হচ্ছে। কারো অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হয়, কারো রিচ কমিয়ে দেয়া হয়। নিত্য এসব ঘটার অভিযোগ পাওয়া যায়।
দেশকে শতভাগ ডিজিটাল করার কৃতিত্ব দাবি করে সরকার। অথচ সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পেছনে। এ বিষয়ক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জরিপ ও গবেষণায় সেগুলো উঠে এসেছে। ইন্টারনেটের গতি ও এ জন্য ব্যয়-বিষয়ক প্রকাশিত জরিপে দেখা গেছে, আমাদের অবস্থান আফ্রিকার বিভিন্ন দারিদ্র্যপীড়িত দেশের কাতারে। এ অঞ্চলে আফগানিস্তান ও মিয়ানমারের কাতারে আমরা রয়েছি।
বোঝাই যাচ্ছে, কাক্সিক্ষত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে আমরা অনেক পেছনে রয়েছি। তাই সরকারকে তার নীতি পরিবর্তন করতে হবে। প্রথমত সারা দেশে টেকসই ইন্টারনেট অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে, ব্যবহারের খরচ কমাতে হবে এবং সব ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নিতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা