ডেঙ্গুতে মৃত্যুর রেকর্ড
- উন্নতির লক্ষণ নেই
- ১৭ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০
চলতি বছর এডিস মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ ডেঙ্গুতে মৃত্যুর রেকর্ড করেছি আমরা। মঙ্গলবার পর্যন্ত ২১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ শুরুর পর এটিই এক বছরে সর্বোচ্চ মৃত্যুর হিসাব। এর মধ্যে ১২৬ জনেরই মৃত্যু হয়েছে রাজধানী ঢাকায়, বাকি ৮৭ জন মারা গেছেন ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সরকারি সূত্র মতে, আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজারে পৌঁছেছে। ডেঙ্গু সবচেয়ে ভয়াবহ হয়েছিল ২০১৯ সালে। সে বছর আক্রান্ত হন এক লাখ ১৩ হাজার মানুষ। মারা যান ১৭৯ জন। এবার অর্ধেকেরও কম- মাত্র ৫০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হলেও মৃত্যুর পরিসংখ্যান আগের রেকর্ড ভেঙেছে। পরিস্থিতির সহসা উন্নতি হবে এমন আশা করা যাচ্ছে না। কারণ এ জন্য যা করণীয় তার কিছুই যথাযথভাবে হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, পরিস্থিতি কিছুটা জটিল। কারণ একই সাথে ডেঙ্গুর তিনটি ধরন এখন সক্রিয়। কিন্তু ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর সঠিক কারণ এখন উদ্ঘাটন করতে পারেননি রোগতাত্ত্বিকরা। ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু পর্যালোচনা কমিটি পুনর্গঠন হয়েছে গত সেপ্টেম্বর মাসে। কিন্তু এ কমিটি দু’টি সভা করা ছাড়া এখনো পর্যন্ত আর কিছু করে উঠতে পারেনি। এ বিষয়ে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক ১৪ নভেম্বর একটি দৈনিককে বলেন, মৃত্যুর কারণ ‘পর্যালোচনার ফল’ জানতে এ মাস লেগে যেতে পারে।
এ দিকে ডেঙ্গু প্রতিরোধের উদ্যোগ আয়োজন চলছে ঢিমেতালে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত সিটি করপোরেশন রোগের বিস্তার রোধ করতে পারেনি। বিশেষ করে রাজধানীতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে হতাশ নাগরিকরা। রাজধানীর বাসিন্দারা গত দু-তিন মাস ধরে তারা নানাভাবে এ হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তাদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের যথাযথ কর্মপরিকল্পনার অভাবে নগরীতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। মশকনিধন কার্যক্রম জোরদার করার দাবিতে মানববন্ধনসহ নানা কার্যক্রমও চালিয়ে গেছেন তারা। গত আগস্টে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন করে রাজধানীর অনেকগুলো সামাজিক সংগঠন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম জোরদার ও গণ-উদ্যোগ বৃদ্ধির দাবি জানানো হয় মানববন্ধনে। কিন্তু দুই মেয়রের টনক নড়েনি। ফলে বাড়ছে এডিস মশা, বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ, বাড়ছে মৃত্যু।
আগের বছরগুলোতে দেখা গেছে, সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসে; কিন্তু এ বছর অক্টোবরে প্রায় ২২ হাজার মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হন। মারা যান ৮৬ জন। তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মশকনিধনে সিটি করপোরেশনকে আরো তৎপর হওয়ার তাগিদ দেন। বিশেষজ্ঞরাও বসে থাকেননি। তারা ডেঙ্গু রোধে সমন্বিত কার্যক্রম, দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও তা নিরবচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে যাওয়াসহ নানা সুপারিশ সবিস্তারে তুলে ধরেছেন। এ বিষয়ে সরকারের কমিটি ইত্যাদিরও ঘাটতি নেই; কিন্তু এসব করে কাজের কাজ খুব একটা যে হয়নি তা ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে স্পষ্ট।
ডেঙ্গু রোধে এ ব্যর্থতা সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য অধিদফতর বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়- কারোরই নয়। কারণ খোঁজখবর নিতে গেলে দেখা যাবে- প্রতিটি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে হাজারটি কার্যক্রমের বিশাল ফিরিস্তি হাজির করবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো- রোগটির ছড়িয়ে পড়া রোধ করা যায়নি। মানুষের মৃত্যুর রেকর্ড তৈরি হয়েছে। সুতরাং দায় এককভাবে সেই সাধারণ মানুষেরই যারা ট্যাক্স দেন নাগরিক সেবা ও পরিষেবা পাওয়ার জন্য; কিন্তু সচেতন হন না। সমবেতভাবে সোচ্চার হয়ে মাঠে নামতে পারেন না তাদের ট্যাক্সের অর্থে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিতদের পুরোপুরি দায়িত্ব পালনে বাধ্য করার দাবিতে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা