২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
শিক্ষা উপকরণের দাম লাগামহীন

শিক্ষার্থী-অভিভাবক বিপাকে

-

দেশের অর্থনীতির অবস্থা যে করুণ তা সব সূচকেই প্রমাণিত। গত কয়েক মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কিছুর দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তবে খাদ্যপণ্য, চিকিৎসাব্যয় এবং শিক্ষা উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষজন সবচেয়ে বেশি অসহায় বোধ করছেন।
শিক্ষা উপকরণের লাগামহীন দামে বেকায়দায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। প্রতিটি উপকরণের দাম বেড়েছে ২৫-৩০ শতাংশ। শিক্ষার মৌলিক উপকরণ- কাগজে আঘাত লেগেছে সব থেকে বেশি। দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্ডার দিয়েও কাগজ পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। শিক্ষা উপকরণের দাম এত বেড়েছে যে, বর্তমানে দুই হাজার ৩৬০ টাকার পণ্য কয়েক মাস আগেও কিনতে ৫০০-৬০০ টাকা কম লাগত।
শিক্ষা উপকরণের দাম কেমন লাগামছাড়া সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদনে। ওই প্রতিবেদনে উল্লেøখ করা হয়, বর্তমানে বড় আকারের প্রাকটিক্যাল খাতার দাম ১১০ টাকা। আগে ছিল ৮০-৮৫ টাকা। মানভেদে বিভিন্ন খাতার দাম বেড়েছে ৫-২০ টাকা। কলমের দাম বেড়েছে ডজন প্রতি ১০-১৫ টাকা। খাতার সৌন্দর্য বৃদ্ধিসহ বই মার্কিংয়ের ছোট কালার পেনের মূল্য পাঁচ টাকা বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা।
বাজারে ছোট আকৃতির জ্যামিতি বক্সের মূল্য ৮০ টাকা, বেড়েছে ৩০ টাকা। বড় আকৃতির বক্সের মূল্য ১২০ টাকা, যা আগে বিক্রি হতো ১০০ টাকায়। স্টিলের স্কেলের দাম বেড়েছে ১০ টাকা, প্লাস্টিকেরগুলোতে বেড়েছে পাঁচ টাকা।


তিন ধরনের সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটরের সবগুলোর দাম বেড়েছে। এগুলোর মূল্য যথাক্রমে- এক হাজার ৮০০, এক হাজার ৫৫০ ও এক হাজার ২৫০ টাকা। আগে ছিল দেড় হাজার, এক হাজার ২০০ ও এক হাজার টাকা। শুধু তাই নয়, আগে এক পৃষ্ঠা ফটোকপি করতে খরচ হতো দেড় থেকে দুই টাকা। এখন খরচ হয় আড়াই থেকে তিন টাকা। প্রতিটি ফাইলে দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা। পেন্সিল ও রাবারের মূল্য ডজন প্রতি বেড়েছে ১০-৩০ টাকা পর্যন্ত।
বইয়ের বাজারেও মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব। বইয়ের দোকানগুলোতে সর্বাধিক বিক্রি হয় ইউনিভার্সিটি, বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির বই। আগের বছরের চেয়ে এবার এসব বইয়ের দাম বেড়েছে প্রতিটিতে প্রায় ১৫০ টাকা। ফটোকপি করা বইয়ের দামও একই হারে বেড়েছে। এক দিকে যেমন বই বিক্রি কমেছে, আবার চাহিদা অনুযায়ী বই কিনতে পারছেন না খুচরা বিক্রেতারা। কাগজের মূল্য বৃদ্ধিতে বই ছাপা কমে যাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্যসহ রেফারেন্স বইয়ের সরবরাহ কমে গেছে। ফলে বাজারে স্কুল-কলেজের বইয়ের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় এক মাস পর ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির কোচিং শুরু হবে। গণমাধ্যমে প্রকাশ- টন-প্রতি কাগজের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৩০-৩৫ হাজার টাকা। অবস্থা এতই শোচনীয় যে, প্রতি টন নিউজপ্রিন্ট কিনতে হচ্ছে ৭০-৭৫ হাজার টাকায়, যা কয়েক মাস আগেও ছিল ৫০-৫৫ হাজার টাকা।
পাইকারি ও খুচরা উভয় শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা কাগজ না পাওয়ার জন্য দায়ী করছেন মিলমালিকদের। মিলমালিকরা বলছেন, তারা নিরুপায়। বর্তমানে এক টন মণ্ডের জন্য তাদের গুনতে হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ ডলার, যা আগে ছিল ৮০০ ডলার। বেড়েছে জাহাজের ভাড়াও। সব থেকে বড় সমস্যা- এখন কার্যাদেশ দিয়েও মিলছে না মণ্ড। ফলে কাগজের উৎপাদন চাহিদা অনুযায়ী করা যাচ্ছে না। অথচ জানুয়ারিতে সরকারি অনেক বইয়ের পাশাপাশি অ্যাকাডেমিক বই, গাইড বই, নতুন বছর উপলক্ষে ডাইরি, ক্যালেন্ডার, লিফলেট ছাপানো হয়। কাগজের যে সঙ্কট চলছে তাতে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্যবই ও অন্যান্য রেফারেন্স বুক ছাপার সব কার্যাদেশ নিতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
সারা দেশের শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী বইপত্র ও শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করতে আমরা যদি ব্যর্থ হই, তা হলে করোনাকালে শিক্ষাক্ষেত্রে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, তার সাথে এই সঙ্কট যোগ হয়ে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দেবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement