দেশকে আইনের শাসনে ফেরান
- ১৬ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০
নাগরিকদের বিচারের আওতায় আনার সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করতে হলে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সহযোগী সদস্যরা সেগুলো মানতে বাধ্য। নিখোঁজ, গুম, হেফাজতে মৃত্যু ও বিচারবহির্ভূত হত্যার আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ ব্যাপারে উচ্চ আদালত কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। তারপরও সাধারণ নাগরিকদের আটকের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সেটি মেনে চলে না দৃশ্যত। এতে যদি নাগরিকদের চিরতরে গুম হয়ে যাওয়া ও প্রাণহানির আশঙ্কা না হতো তাহলে বিষয়টা মেনে নেয়া যেত; কিন্তু দেশে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর অনেকে গুম হয়েছেন, অনেকে খুন হয়ে গেছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ ধরনের তুলে নেয়ার ব্যাপারে সরকারের কোনো বাহিনী কোনো দায় স্বীকার করে না। নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বিচার বিভাগ, সরকার ও নাগরিক সমাজের বিবেচনা করা উচিত।
বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের ঘটনা কিছু দিন প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। নতুন করে সেটি আবার শুরু হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক কয়েক দিনে দুটো নিখোঁজ ও একটি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা মো: জাকির হোসেন ৮ নভেম্বর নিখোঁজ হন। ঘটনার দু’দিন পর তার এক সহকর্মী একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। ফরিদপুরের পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাকে খুঁজে পেতে তারা চেষ্টা চালাচ্ছেন। সোমবার পর্যন্ত তার কেনো খোঁজ আমাদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী দিতে পারেনি।
অন্য দিকে তার চার দিন পর কিশোরগঞ্জ থেকে আরেকজন চিকিৎসক মির্জা কাওসারকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি স্থানীয় একটি কোচিং সেন্টারের পরিচালনাও করতেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সন্ধ্যা ৭টার সময় সাদা ও কালো রঙের দুটো মাইক্রোবাস তার কোচিং সেন্টারের সামনে আসে। পাঁচজন তার সাথে কথাবার্তা বলার একপর্যায়ে কালো রঙের গাড়িতে তুলে নিয়ে যান। এ সময় তার মুঠোফোনটি কেড়ে নেয়া হয়। তবে গত রোববার ঢাকার গোয়েন্দা কার্যালয় থেকে জানানো হয়, তিনি সেখানে রয়েছেন। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে তুলে নিয়ে যাওয়ার ধরন। এভাবে একজন ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার বৈধতা কিভাবে দেবে আমাদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী? অনেকে গুম হয়ে গেছেন, অনেকের লাশ পাওয়া গেছে, এভাবে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর। ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় সাদা পোশাকের লোকেরা নিজেদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পরিচয় দেন। কিন্তু হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে পরে আর কোনো সংস্থা তার খোঁজ দিচ্ছে না। তাই এ ধরনের অভিযানের কোনটি আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করছে, কোনটি অন্য অসাধু চক্র করছে, সেটি বোঝার উপায় কী? জননিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটির কোনো উত্তর কারো কাছে নেই।
এ দিকে ১১ নভেম্বর সিটি শাহিন নামে একজন বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন বলে র্যাব এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানাচ্ছে। তার পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে, তিনি সন্ত্রাসী ও চিহ্নিত মাদকের চোরাকারবারি। বিভিন্ন থানায় তার নামে ২৩ মামলা রয়েছে বলেও জানানো হয়। বস্তুত তিনি মারা গেলেন বুয়েটের ছাত্র ফারদিন নূরের হত্যার পর। তার খুনের সাথে নারায়ণগঞ্জের চনপাড়ার মাদক কারবারিদের সংশ্লিষ্টতা দেখাচ্ছে আমাদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। আমরা দেখতে পাচ্ছি, গোয়েন্দা সূত্রে এখন সেখানকার মাদক কারবার নিয়ে ভয়াবহ খবর প্রকাশ পাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে একজন মানুষ যতবড় অপরাধী হোক না কেন, রাষ্ট্রের পক্ষে থেকে তার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। মাদক ও সন্ত্রাস উৎপাটনের জন্য তার বেঁচে থাকা আরো বেশি প্রয়োজনীয় ছিল। এ ধরনের দাগি অপরাধীদের আমরা প্রাণ হারাতে দেখি; কিন্তু অপরাধের বিস্তার আমাদের দেশে কমে না।
বিগত বছরগুলোতে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের ঘটনা বিরামহীন ঘটেছে। আশঙ্কার ব্যাপার হচ্ছে শুধু সন্ত্রাসী দাগি আসামি ও মাদক চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে এটি সীমিত থাকেনি। রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপরও সমানে এটি নেমে এসেছে। কোনোভাবে প্রতিকার না মেলায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো নিয়মিত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর শুধু তা রাশ টানা গেছে; কিন্তু নতুন করে আমরা কি আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছি? এ ব্যাপারে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রস্তাবও রয়েছে। সেগুলো মানার তাগিদ রয়েছে। আমরা মনে করি, সরকার বেআইনি কর্মকাণ্ডকে অবশ্যই লাগাম টেনে ধরবে; দেশে আইনের শাসন ফেরাবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা