২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ছাপার সব উপকরণের উচ্চমূল্য

প্রকাশনা শিল্পে নাজুক অবস্থা

-

সামনে বইমেলা। আর জানুয়ারি মাসে নতুন বই লাগে স্কুল-কলেজে। ঠিক এমনই সময়ে কাগজের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বাজারে সরবরাহে টান পড়েছে। এ জন্য অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে কাগজের দাম। শুধু কাগজের দাম নয়, প্রকাশনা-সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উপকরণের দামও বাড়তি। মুদ্রণশিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের উপায়-উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ শিল্পে মন্দাভাব প্রকট হয়ে উঠতে শুরু করেছে। বিশেষ করে নিউজপ্রিন্টের দাম অনেক বেড়ে গেছে। ফলে মুদ্রণব্যয় বহুগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সংবাদপত্র শিল্পে ঘোর দুর্দিন নেমে এসেছে।
গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, বাজারে কাগজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ডায়েরি, নোটবুক, বিভিন্ন ফাইলপত্র, লেজার খাতা, বক্স ফাইল ও খাতার মতো কাগজের উপকরণের দাম গত এক সপ্তাহে নতুন করে ৩০ শতাংশের মতো বেড়েছে। মাঝারি আকারের ১০০টি খাকি খামের দাম ২৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা। বাজার স্বাভাবিক থাকলে এ সময়ে কাজের অভাব হয় না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কাগজের উচ্চমূল্যের কারণে প্রকাশনা ব্যবসায় গতি কমে এসেছে। অবস্থা এমন যে, এ শিল্পে ব্যবসায়ীদের হাতে পুরনো যেসব কাজ ছিল, সেগুলোরও দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। সব গ্রাহককে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে, নতুন করে দাম সমন্বয় ছাড়া এসব কাজ করা সম্ভব নয়।
একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পাইকারি বাজারে শুধু যে কাগজের দাম বেড়েছে তা-ই নয়; বেড়েছে মলাট কাগজের দামও। গত এক সপ্তাহে প্রতি ১০০টি মলাট কাগজের দাম এক হাজার ৮০০ থেকে বেড়ে দুই হাজার ৬০০ টাকা হয়েছে। একই পরিমাণ আর্ট কার্ডের দামও এখন ৫০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি। ১০০টি আর্ট কার্ড মিলছে সাড়ে তিন হাজার টাকায়। এক রিম রঙিন কাগজের দাম ৮৫০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়ে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়। তবে সব ধরনের কাগজের দাম একই হারে বাড়েনি। কাগজের নানা পদের মধ্যে টন-প্রতি সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা বেড়েছে লেজার কাগজের দাম। পাইকারিতে কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে পণ্যের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, রাজধানীর নয়াবাজারে গত এক সপ্তাহে পাইকারি বাজারে কাগজের দাম প্রতিদিন বেড়েছে। হোয়াইট প্রিন্ট কাগজের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে টন-প্রতি ২৫ হাজার টাকা বেড়ে দাম দাঁড়ায় এক লাখ ৩৫ হাজার থেকে এক লাখ ৬০ হাজার টাকায়। প্রতি টন হোয়াইট নিউজপ্রিন্ট কাগজের দাম বেড়েছে ১৫ হাজার টাকা। এই কাগজের দাম ২০ হাজার থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি টন এক লাখ ৩৫ হাজার টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত এক সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে লেজার কাগজের দাম। প্রতি টনের দাম ৩০ হাজার টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা। প্রতি টন নিউজপ্রিন্ট কাগজের দাম ৬৪ হাজার থেকে বেড়ে ৮৫ হাজার টাকা হয়েছে। কম দামি এ কাগজের মূল্য গত দুই সপ্তাহে বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। এ অবস্থার কারণ, পেপার মিলগুলোতে জ্বালানি সঙ্কটে উৎপাদন ব্যাহত হওয়া। মিল থেকে কাগজের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে চাহিদা অনুযায়ী কাগজ মিলছে না। এতে করে কাগজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
কাগজের দাম বৃদ্ধিতে প্রকাশনাশিল্পের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। অথচ প্রকাশনাশিল্পের এগিয়ে যাওয়ার মানে- একটি জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক দিক দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার নমুনা। বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার গতি অব্যাহত থাকলেই কেবল যেকোনো জাতি শত বাধা অতিক্রম করে সামনে এগোতে পারে। অন্য দিকে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার গতি কমে গেলে জাতীয় জীবনে নেমে আসে স্থবিরতা। এ দিকটি বিবেচনায় নিয়ে কাগজসহ প্রকাশনাশিল্পের সব উপকরণ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement