২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমি বেহাত

উদ্ধারে উদ্যোগের অভাব

-

আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বহুলাংশে বেসরকারি উদ্যোগের ওপর নির্ভরশীল। এখনো দেশে সরকারি ব্যবস্থাপনায় মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় না। এগুলো সরকারি অনুদান, ছাত্র-ছাত্রীদের মাসিক বেতন ও সামাজিক উৎস থেকে প্রাপ্ত আয়ে পরিচালিত হয়।
প্রতিষ্ঠালগ্নে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জায়গা-জমি সমাজের দানশীল ব্যক্তিরা দিয়ে থাকেন, যা সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষা বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। এভাবে গড়ে উঠেছে দেশের অনেক নামীদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাস্তবতা হলো- বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বাংলাদেশে গড়ে ওঠা বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল পরিমাণ জমি দান করেন সমাজের দানশীল ব্যক্তিরা। এ জমির ওপর ভিত্তি করে এখনো প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় সঙ্কুলান হয়ে থাকে। অতি সহজে বার্ষিক আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে বর্তমান সময়েও।
বিগত দুই দশক ধরে সারা দেশে জমির দাম আগের তুলনায় বহুগুণে বেড়ে গেছে। ফলে পুরনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নামে যে জমি রয়েছে, তার মূল্যও বিপুল অঙ্কের হয়েছে। এতে করে ওই সব স্কুল-কলেজ-মাদরাসার জমির ওপর স্থানীয় একশ্রেণীর প্রভাবশালীর শ্যেন দৃষ্টি পড়েছে; বিশেষ করে স্থানীয় সুযোগ সন্ধানী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর। তারা নানাভাবে স্কুল-কলেজ পরিচালনা কমিটিতে স্থান করে নিয়ে প্রতিষ্ঠানের অর্থ নয়ছয় করে থাকেন, এমন অভিযোগ পুরনো। তবে ইদানীং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জায়গা-জমি বেহাত করতেও পিছপা হচ্ছেন না তারা। এর ফলে সারা দেশের বেশির ভাগ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নানাবিধ অনিয়মের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে এও সত্য যে, স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের পর সেগুলোতে বিদ্যমান নানা অনিয়ম চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ আকারে সরকারের কাছে পেশ করা হয়। কিন্তু কাজের কাজ কতটুকু হচ্ছে তা প্রশ্নসাপেক্ষ।
প্রশ্ন এ জন্য উঠেছে যে, দেশের বিভিন্ন জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত জমি থেকে জায়গা কমে যাওয়ার প্রমাণ পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর। দেখা যাচ্ছে- বহু জেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার একর জমির কোনো খবর মিলছে না। প্রতিষ্ঠাকালীন যে পরিমাণ জমি ছিল, বর্তমান সময়ে অনেক স্কুল-কলেজ-মাদরাসার জমির হিসাব মিলছে না। আবার কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে যতটুকু জমি রেকর্ডে রয়েছে; বাস্তবে সেই পরিমাণ জমি নেই।
শিক্ষা-সংশ্লিষ্টদের মতো সচেতন নাগরিক মাত্রই সবার জানা, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যে জিনিসটি সবার আগে প্রয়োজন তা হলো নির্দিষ্ট জায়গা বা জমি। রাষ্ট্রের বর্তমান আইন অনুযায়ী- নির্ধারিত পরিমাণ কাম্য জমি না থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমতি পাওয়া যায় না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অনেক স্কুল-কলেজ-মাদরাসার নির্ধারিত জমি থেকে কিছু জায়গা বেহাত হয়ে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে দান করা জমি অন্য কেউ দখলে নিয়ে ভোগ করছেন অথবা অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে স্কুল-কলেজের জমি কেউ বিক্রি করে দিচ্ছেন; যদিও এমন কাণ্ড খুব খারাপ বা বাজে দৃষ্টান্ত। তবু অনেকে এই অপকর্মে জড়িত হয়ে পড়ছেন।
একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) একটি প্রতিবেদন বলছে- গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হয়েছে তার মধ্যে ৮৬৯ একর জমি বেহাত হওয়ার প্রমাণ মিলেছে। এসবের মধ্যে স্কুল-কলেজের জমি রয়েছে ৫৭৬ একর আর কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমি রয়েছে ২৯৩ একর। সে হিসাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর হাজার হাজার একর জমি বেহাত হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শিক্ষাসচেতন সবার প্রত্যাশা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেহাত হওয়া জমি উদ্ধার হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এর প্রতিকারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ, মানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অনেক অনিয়ম কমে যেত। একই সাথে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হতো।


আরো সংবাদ



premium cement