২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ভূমি অফিসে ঘুষের দৌরাত্ম্য

অবিলম্বে প্রতিকার করতে হবে

-

ভূমি ব্যবস্থাপনায় সরকারি পদক্ষেপের সেবা মিলছে না ময়মনসিংহের নান্দাইলে ভূমি অফিসগুলোতে- এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। সহযোগী দৈনিকের ময়মনসিংহ জেলা বার্তা পরিবেশকের পাঠানো একটি প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, ঘুষ-হয়রানি ও জমা টাকার চেক নিয়ে নয়ছয় করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ নান্দাইলের ভূমি অফিসের সেবা নিতে আগত সাধারণ মানুষের। অবশ্য নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা প্রভাবের জোরে ঘুষ ও হয়রানি ব্যতীতই সেবা পাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
জানা যায়, সেখানে ভূমিসংক্রান্ত সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে মোটা ঘুষের বিনিময়েই জমির খারিজসংক্রান্ত কাগজপত্র হাতে পান। ঘুষ ছাড়া জমি খারিজ করা হয় না। এ অভিযোগ বিশেষত সদর ইউপির নায়েবের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, উপজেলা সদর ইউনিয়নের নায়েব বা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা দীর্ঘ প্রায় সাত বছর সদর ভূমি অফিসে দায়িত্ব পালন করছেন। সেই সুবাদে স্থানীয় দালালসহ এলাকায় তিনি পরিচিতি লাভ করায় কতিপয় নেতাগোছের লোকের আশ্রয়ে দুর্নীতি বা অনৈতিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ঘুষ ছাড়া তিনি নাকি ফাইল তোলেন না। খারিজ করতে আগত সাধারণ মানুষ থেকে নানান অজুহাতে এ ব্যাপারে সরকারি খরচ এক হাজার ১৭০ টাকার অতিরিক্ত অর্থও হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ ধরনের নানা অভিযোগ তার নামে। ভাটি সাভার গাঁয়ের প্রতিবন্ধী নজরুল ইসলাম পৈতৃক সম্পত্তি খারিজ করতে প্রায় এক বছর আগেই এ অফিসে আবেদন করেন। কিন্তু খারিজের আবেদন বাবদ ১০ হাজার টাকা প্রথমে চাওয়া হয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। পূর্বোক্ত কর্মকর্তাকে সে মোতাবেক টাকা দেয়া হয়েছে। এর পরও তিনি নানান ত্রুটি দেখিয়ে তা সংশোধনের জন্য আরো ৪০ হাজার টাকা দাবি করেছেন একই লোকের কাছে। ওই প্রতিবন্ধী বলেন, ‘অসহায় মানুষ আমি। দাবি মতো টাকা না দেয়ায় আমাকে অহেতুক ঘোরানো হচ্ছে দিনের পর দিন।’ টাকা দিলে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। ওই নায়েব বা তহশিলদার বলেছেন, ‘অভিযোগ ঠিক নয়, আমাকে আজো কাগজপত্র বুঝিয়ে দেয়া হয়নি প্রতিবন্ধী কথা দেয়ার পরও। তাই দেরি হচ্ছে এ কাজে।’ উপজেলা (ভূমি) সহকারী কমিশনার বলেন, ‘লোকটির আগের আবেদন বাতিল হয়ে গেছে। নতুন করে আবেদন করা হয়েছে। দ্রুত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট নায়েবকে। এটি আমি নিজে দেখব।’ এদিকে, সে নায়েবের বিরুদ্ধে ১৩ অক্টোবর লিখিতভাবে অভিযোগ এসেছে নান্দাইলের ইউএনওর বরাবর। অভিযোগ- জমির খাজনার নামে বেশি টাকা নেয়া। করেছেন ভাটি পাচানি গ্রামের আবুল কালাম।
অভিযোগে প্রকাশ, জমির খাজনার চেকের কথা বলে পূর্বোক্ত আবুল কালাম থেকে দুই হাজার ৬৭০ টাকা নিয়ে মাত্র ৬০০ টাকার চেকরশিদ দেয়া হয়েছে। আরেক ব্যক্তির জমির খাজনার নামে দেড় হাজার টাকা নেয়া হলেও রশিদ দেয়া হয় মাত্র ৪০ টাকার। ওই নায়েব নাকি নিয়োগ ছাড়াই কয়েকজনকে আশ্রয় দিয়ে তাদের দিয়ে লাখ লাখ টাকা নিচ্ছেন। খোদ একজন ভূমি কর্মকর্তা বলেছেন, নান্দাইলের এই লোক গত ছয় বছরে ছয় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন লোকজন থেকে। প্রতিবন্ধীর কাছ থেকেও ঘুষ দাবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন উপজেলা আইশৃঙ্খলাবিষয়ক কমিটির মাসিক সভায় স্বয়ং ভাইস চেয়ারম্যান। ইউএনও তাকে আশ্বস্ত করলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি আজ পর্যন্ত।
অবিলম্বে এমন অভিযোগের সুরাহা করা দরকার বলে জনগণ মনে করে। অন্যথায়, ময়মনসিংহ নান্দাইল ভূমি অফিসে দুর্নীতি বৃদ্ধি পেলে সংশ্লিষ্ট জনগণের দুর্ভোগও নিঃসন্দেহে বাড়বে।

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement