সঙ্ঘাত-হিংসার পথ পরিহার করুন
- ১২ নভেম্বর ২০২২, ০০:০৫
বিরোধী দল বিএনপির আন্দোলন-কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করতে সরকার অপকৌশল আরো জোরদার করছে। পুরনো কায়দাকানুন প্রয়োগের সাথে নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্বনের প্রবণতা বাড়ছে। এ জন্য প্রশাসনকে সর্বাত্মক ব্যবহারের পাশাপাশি দলীয় ও সরকারি সামর্থ্যরে পূর্ণ অপব্যবহার করা হচ্ছে। এমন আন্তরিক প্রচেষ্টা যদি দেশ শাসন ও উন্নয়নে করা হতো; তাহলে আমাদের বর্তমান বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়তে হতো না। বাস্তবে আর্থ-রাজনৈতিক দিক দিয়ে দেশ এখন দেউলিয়ার পর্যায়ে। অথচ সরকার বিরোধীদের উৎখাতের নীতিতে চলছে। এ ক্ষতিকর শক্তিক্ষয় বাদ দিয়ে ওই শক্তি যদি দেশের সংস্কার ও সংশোধনে ব্যয়িত হতো, তা হলে পরিস্থিতির উন্নয়নে তা সহায়ক হতো।
বিএনপি আরো কয়েকটি গণসমাবেশ করে ঢাকায় একটি মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে। পরিস্থিতি যেভাবে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে তাতে সমাধানের পথ কণ্টকাকীর্ণ মনে হচ্ছে। বরিশালে গণসমাবেশে বাধা দিতে হেন কোনো কূটকৌশল নেই, যা বাদ দেয়া হয়েছে। এবার ফরিদপুরে আগের মতো পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। যদিও এবার পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো ধর্মঘট নিয়ে রংপুর ও বরিশালের মতো ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দেয়নি। ধর্মঘট আহ্বানকারী একাধিক নেতা একই সুরে কথা বলছেন। আন্দোলনের জন্য ঠিক বিএনপির কর্মসূচির দিনকে কেন বেছে নেয়া হয়েছে- এর জবাবও সবাই দিচ্ছেন একই টোনে। তারা বোঝাতে চাইছেন, বিএনপির ডাকা সমাবেশের সাথে তাদের ধর্মঘট আহ্বানের কোনো সম্পর্ক নেই। যদিও সমাবেশ শেষ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ধর্মঘট শেষ হবে। আসলে ধর্মঘট যে সাজানো নাটক তা বুঝতে কোনো অসুবিধে হয় না। এটি যে সরকারের ইঙ্গিতে হচ্ছে তা স্পষ্ট।
অন্য দিকে, সমাবেশ ব্যর্থ করতে পুলিশি কার্যক্রমও জোরদার করা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়া মাত্র গ্রেফতার হচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। মানহানি ও এক সাবেক বিচারপতির ওপর হামলার পৃথক দু’টি অভিযোগে মামলায় বিএনপির ঢাকা মহানগরীর নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া পুরনো মামলা সচল করে ধরপাকড় করা হচ্ছে। ফরিদপুরে এটি চলছে লক্ষণীয়ভাবে। বিএনপি নেতাদের আটক করতে পুলিশ যে বেপরোয়া সেটি দেখা গেল ফরিদপুরের একটি ঘটনায়। মধ্যরাতে অভিযান চালায় ১০ বছর আগে মৃত এক নেতার বাসায়। ফরিদপুর শহরের তিন নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার ছিলেন তিনি। দরজায় কড়া নেড়ে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্টের খবর জানালে মৃত ওই নেতার স্ত্রী জানান, তাকে তো আপনারা বাসা থেকে নিতে পারবেন না। গ্রেফতার করতে হলে কবরস্থান থেকে নিতে হবে। পরে সেই মৃত ব্যক্তির ছেলেকে গ্রেফতারের চেষ্টা করে পুলিশ। ছেলেটির বয়স ১৬ বছর। বিরোধীদের দমাতে পুলিশকে এভাবে অব্যাহতভাবে ব্যবহার করছে সরকার। মৃত ব্যক্তি ও কারাগারে আটক নেতার বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা দেয়া, বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিকে দেশের কোনো ঘটনায় জড়িত দেখানো- এগুলো সমানে চলেছে।
বিরোধীদের দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে- একটি ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা। যাতে মানুষ সংগঠিত হতে না পারে, গণসমাবেশসহ বিরোধী রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকে। এর ফলে গণতন্ত্রের শুভাকাক্সক্ষী নানা পক্ষকে সরকার দেখাতে পারে যে বিরোধীদের প্রতি মানুষের সমর্থন নেই। তবে বাস্তবতা সরকার অনুধাবন করতে পারছে বলে মনে হয় না; বাধা দেয়ার ফলে বরং দু’ভাবে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রশাসন ও দলীয় জনশক্তিকে সংগঠিত করে নেতিবাচক কর্মকাণ্ড করানোর বিষয়টি কেউ ভালো চোখে দেখছে না। দ্বিতীয়ত, এতে সরকারের প্রতি বিরূপ মনোভাব আরো বেড়ে যাচ্ছে। ফলে প্রত্যেকটি গণসমাবেশে দলীয় লোকদের সাথে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ আরো বাড়ছে।
অসহনীয় পণ্যমূল্য ও ভোটাধিকারহীনতা দুটো ইস্যুতে মানুষ প্রতিবাদী হয়ে উঠছে। এগুলো কোনোভাবে উপেক্ষা করা যায় না। সরকার নিজেই অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা স্বীকার করেছে। অন্য দিকে, দেশ থেকে যে ভোটব্যবস্থা উধাও হয়ে গেছে; দেশী-বিদেশী সবাই তা জানে। এ অবস্থায় বাধা দেয়ার সংস্কৃতি থেকে সরকারকে বিরত হতে হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্মুক্তকরণের পথে হাঁটতে হবে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক জটিলতা দূর হওয়ার কোনো রাস্তা নেই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা