কারা বানাচ্ছে কোমলমতি শিশুদের আধেয়?
- ১১ নভেম্বর ২০২২, ০০:০৫
বাংলাদেশে শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে বর্তমানে ক্ষমতাসীন, দীর্ঘমেয়াদি সরকার নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে। এর অন্যতম প্রধান দিক ছিল পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন। অব্যাহত প্রচারণায় মনে হয়েছে, নতুন প্রজন্মকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে অত্যন্ত আন্তরিক ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সরকার। বাস্তবে পাঠ্য বিষয় ও আধেয় নির্ধারণে সরকার ব্যাপক উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। একশ্রেণীর অতি উৎসাহী পাওয়া গেছে, যারা ধর্মের সংস্পর্শ থাকার ধুয়া তুলে শিক্ষণীয় অনেক কিছু বাদ দিয়েছে। অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এমন কিছু বিষয় যা আরো বেশি সাম্প্রদায়িক ও বৃহত্তর জনগণের বিশ্বাসের বিপরীত। শিক্ষাকে আধুনিকীকরণ ও যুগের সাথে তাল মেলানোর পরিবর্তে এতে সনাতনী চিন্তার অনুপ্রবেশ করানো হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকে আধেয় নির্ধারণে লেজেগোবরে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, যা হতাশা বাড়িয়েছে অভিভাবকদের।
একটি সহযোগী দৈনিক ‘কী শিখছে শিক্ষার্থীরা’ শিরোনামে প্রতিবেদনে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৯টি বইয়ে সরাসরি মুসলিমবিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ তুলেছে। এর পক্ষে তারা পাঠ্যপুস্তক থেকে পাঠের অংশ তুলে ধরে সেগুলো দেখিয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণীর বাংলা থেকে ‘সবাই মিলে করি কাজ’ শিরোনামে হজরত মুহাম্মদ সা:-এর জীবনচরিত বাদ দেয়া হয়েছে, তৃতীয় শ্রেণী থেকে হজরত আবু বকরের জীবনচরিত, চতুর্থ শ্রেণী থেকে হজরত ওমরের জীবনী ও পঞ্চম শ্রেণী থেকে ‘বিদায় হজ’ অধ্যায় বাদ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া উন্নত নৈতিক চরিত্র গঠনে উপযুক্ত আরো কিছু গল্প-কবিতা মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণী থেকে বাদ দেয়ার তালিকা পত্রিকাটি উল্লেখ করেছে। পাঠ্যপুস্তক কর্তৃপক্ষ এর পরিবর্তে আরো উন্নত আদর্শ ও মূল্যবোধের কিছু সেখানে প্রতিস্থাপন করেনি; বরং এগুলো প্রতিস্থাপিত হয়েছে ‘সনাতন ধর্মের গল্পগুজব ও দেবতাদের কাহিনী’ দিয়ে। এ ছাড়া তুলে ধরা হয়েছে ‘পূজা দেয়ার নিয়ম ও দেব-দেবীদের প্রশংসা’। পত্রিকাটি এসবেরও বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেছে।
বাদ দেয়া অধ্যায়গুলোতে মুসলিমদের কাছে সম্মানিত আদৃত ব্যক্তি ও বিষয় ছিল, যা মানুষের নৈতিকতাকে কিছুটা হলেও জাগাত। সম্ভবত কর্তৃপক্ষ এগুলোকে সাম্প্রদায়িক হিসেবে চিহ্নিত করে বাদ দিয়েছে। এর বদলে যা অন্তর্ভুক্ত করেছে তা অনুমান আন্দাজ ও সম্পূর্ণ কল্পনার ওপর ভর করা কিছু বিষয়। এগুলো থেকে বাস্তব জীবনের কোনো নৈতিকতা গ্রহণের সুযোগ নেই। প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, ২০২৩ সালের জন্য প্রস্তুত হতে যাওয়া পাঠ্যপুস্তকে বিতর্কিত বিষয়, ভাব ও ব্যক্তিদের নিয়ে অন্তর্ভুক্তি আরো বাড়ানো হয়েছে। পুস্তকের বিষয়বস্তুতে মানুষের নাম ও প্রতীকের ব্যবহারের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অতি সাম্প্রদায়িকীকরণ করা হয়েছে। নবম শ্রেণীর বইয়ে গণেশ, অর্ণব, অন্বেষা, চিন্ময়, ঋজু, ফ্রান্সিস এমন নামই ব্যবহার করা হয়েছে। এ ধরনের নাম পাঠ্যপুস্তকে ব্যবহার হওয়া নিন্দনীয় নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম। তাই নাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদের নামগুলোও সমহারে থাকা উচিত। নাচ গান অভিনয় ও শিক্ষা-সংস্কৃতি নিয়ে এমন সব কথা বলার চেষ্টা হয়েছে বইগুলোতে, যা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চিন্তাচেতনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। যে ফিরিস্তি পত্রিকাটি প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে তাতে বোঝা যাচ্ছে, একটি গোষ্ঠী পরকল্পিত পাঠ্যপুস্তক সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত করার বদলে একে আরো সাম্প্রদায়িকীকরণ করেছে।
আমাদের জাতীয় সমস্যা নৈতিকতাহীনতা, যে কারণে কেবল একটি গোষ্ঠী দেশের সব সম্পদ লুটেপুটে খাচ্ছে। উন্নত নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষিত সমাজ প্রতিষ্ঠিত করা গেলে ধনী-গরিব, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে রাষ্ট্রের কাছ থেকে সবাই সমান সুবিধা পেত। এ অবস্থায় আমাদের শিক্ষার ভিত্তি হওয়া দরকার নৈতিকতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া। আবার জমানার সাথে তাল মেলানোর ক্ষমতা অর্জনের জন্য এতে বাস্তবতার সর্বোচ্চ মিশ্রণ দরকার। কিন্তু আমাদের শিশু-কিশোরদের জন্য আমরা বাছাই করে নিচ্ছি গল্পগুজব কাল্পনিকতানির্ভর পাঠ্যক্রম, যেখানে নগ্নভাবে সাম্প্রদায়িকতাকেও প্রবেশ করিয়ে দেয়া হচ্ছে। এমন উদ্দেশ্যমূলক কাজ কোনোভাবে দেশপ্রেমিক কোনো কর্তৃপক্ষ করতে পারে না। পাঠ্যের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’। এখানে প্রকৃতপক্ষে কারা এ ধরনের পাঠ্য দিয়ে পুস্তক সাজাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করা দরকার। তার আগে প্রয়োজন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের প্রত্যেকটি বই পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই। এখানে কোনো ধর্ম প্রাধান্য পাওয়ার বিষয় নয়; দরকার জাতির স্বার্থ রক্ষা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা