২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
মহাজনে অতিষ্ঠ গণমানুষ

অসহায়ত্ব দূর করুন

-

নয়া দিগন্তের মিঠাপুকুর (রংপুর) সংবাদদাতার খবর, অর্ধশতাধিক মহাজনের দৌরাত্ম্যে শিক্ষকসমেত সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, মিঠাপুকুরের সুলতানপুর ও মুশাপুরে অর্ধশতাধিক সুদখোর মহাজনের বেড়াজালে আটকা পড়ে গেছে ইউনিয়নের সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীসহ সাধারণ মানুষ। এখানে এমন মানুষ নেই যিনি এ সঙ্কট থেকে মুক্ত। এ নিয়ে একজনের আত্মহত্যা এবং বেশ ক’জনের এলাকা পরিত্যাগের ঘটনাও ঘটে গেছে। ইতোমধ্যে একটি গ্রাম সুদখোরের কারণে ব্যাপক পরিচয় পেয়ে গেছে।
জানা যায়, দুর্গাপুর ইউপির সুলতানপুর ও মুশাপুরে লগ্নিকারী, সুদখোরদের বাড়ি একই এলাকায়। পাশের কয়েক গ্রামেও আছে কিছু সুদখোর মহাজন। তারা সাধারণ মানুষের দারিদ্র্যের সুযোগে চেক বন্ধকসহ সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে দাদন দিয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে এক হাজার টাকায় শতকরা ১০ টাকা করে মাসে ১০০ টাকা, ছয় মাসে ৬০০ এবং বছরে ১২ শ’ টাকা সুদ দিতে হয়। মাসে মাসে এ টাকা শোধ দিলে ‘ভালো কথা’। কিন্তু বছরে দু-দু’বার ছয় মাস অন্তর- জুন ও ডিসেম্বরে ক্লোজিংয়ের সময়ে মহাজনের কাছে সুদাসলে টাকা জমা দিতে হয়। কোনো কারণে এতে ব্যর্থ হলে তা পরবর্তী কিস্তিতে ‘আসল’ হয়ে যায়। এরপর তার ওপর সুদ দিতে হয়। এক হিসাবে দেখা যায়, সুদখোর মহাজনের দাদনের টাকার সুদের হার খুব চড়া- বার্ষিক শতকরা ১৬০ টাকা। এ দিকে ভয়ে তাদের ঋণগ্রহীতারা মুখ খোলেন না। কারণ বিষয়টি থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়ালেও মহাজনদের পেশিবলের কাছে হার মানতে হয়। দু-একজন মুখ খুললেও তাদের নিজ নাম প্রকাশ করেন না। এমনকি মুশাপুরে এক মুরব্বি মুখ খুলে এখন নিরাপত্তাহীন। তাই প্রাণের নিরাপত্তা চেয়ে তাকে জিডি করতে হয়েছে। সুলতানপুরে একজন সুদযুক্ত দাদন শোধ করতে ব্যর্থ হয়ে দেড় বছর আগে আত্মহত্যা করেছেন। মৃত ব্যক্তি নির্যাতনের শিকার হন। একসময় মহাজনের লোকেরা হুমকি দেয়, টাকা না পেলে তার বোনকে নিয়ে যাবে। দেনার দায়ে এটি সহ্য করতে না পেরে লোকটি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলেন। এরপর প্রশাসন, সমাজপতি, গণপ্রতিনিধি এবং এনজিওসহ অনেকেই তার বাড়িতে গেছেন। ময়েনপুর ইউনিয়নের স্কুলশিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক দাদনের টাকা শোধ করতে না পেরে সুদখোরকে বহু চেক দিতে বাধ্য হয়েছেন। এভাবে চেকবই শেষ হয়ে গেলে আবার তাকে চেক দিতে হবে মর্মে সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিতে হয়েছে। এভাবে দিনের পর দিন চাকরি করেও অনাহারে-অর্ধাহারে দিন অতিবাহিত করতে হয়। আরেকজন মাদরাসার বৃদ্ধ শিক্ষক ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। পরে তা বেড়ে হয় ৮০ হাজার টাকা। বাধ্য হয়ে তিনি চেকবই জমা দিলেন সুদখোর মহাজনের হাতে। কিন্তু বেতনের টাকায় ঋণের কিস্তি পরিশোধ হচ্ছে না। এ দিকে এর আসল বৃদ্ধি পাচ্ছেই। অন্য দিকে ঋণের দায়ে কয়েকজন এলাকা থেকে পালিয়েও গেছেন। জানা যায়, যারা মহাজনের টাকায় ঋণ বা দাদন নিয়েছেন, তারা ১০০ থেকে ১৫০ টাকার সাদা স্ট্যাম্পে চুক্তিবদ্ধ থাকেন। আর মহাজনদের বক্তব্য, ‘আমরা প্রয়োজনে টাকা ঋণ দিয়ে মানুষের জন্য ভালো করছি’।
ব্যাংক ঝামেলামুক্ত হলে আর মহাজনের মুখাপেক্ষী হতে হয় না। এনজিওর কিস্তি শোধ করাও কষ্টসাধ্য। তাই মানুষকে বাধ্য হয়ে সুদখোরদের দ্বারস্থ হতে হয়। অবিলম্বে এর সুরাহা করা দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement