২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ উৎপাদন ব্যাহত

কাঁচামাল আমদানি নিশ্চিত করুন

-

দেশে বর্তমানে ২৯৪টি ওষুধ কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ কোম্পানির ওষুধই নিন্মমানের। এ সব মানহীন ওষুধ সাধারণত রাজধানীতে বাজারজাত করা হয় না, বেশির ভাগই করা হয় গ্রামাঞ্চলে। বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির তথ্য মতে, ঢাকার বাজারের প্রায় ৯০ শতাংশ ওষুধই ২০টি কোম্পানির। এই ২০টি কোম্পানির উৎপাদিত ওষুধের গুণগত মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ের। এসব কোম্পানির ওষুধ যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশে রফতানি হয়। এ কারণে আমাদের দেশের ওষুধ শিল্প একটি বর্ধিষ্ণু খাত।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে ফার্মাসিগুলোতে দেশে উৎপাদিত অনেক জরুরি ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ নানা কারণে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন, যেমন- ক্যান্সার, কিডনি, হার্ট ও ডায়াবেটিস প্রভৃতি। এসব রোগে আক্রান্তদের নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়। কিন্তু তারা ওষুধ পাচ্ছেন না। ওষুধ বিক্রেতারা বলছেন, সঙ্কটের কারণে কিডনি, ক্যান্সারসহ অনেক রোগের প্রতিষেধক ওষুধের দাম বেড়েছে। বাজারে ওষুধের দাম ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনে ওষুধের তীব্র সঙ্কট দেখা দেবে বলে মনে করছেন এ খাতের উৎপাদকরা।
একটি সহযোগী দৈনিকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কোম্পানিগুলো এ শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি করতে সময়মতো এলসি বা ঋণপত্র খুলতে না পারায় ওষুধের উৎপাদন কমছে। পরিসংখ্যান বলছে, আমাদের ওষুধ শিল্পের কাঁচামালের ৭০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমদানিকারকদের বাইরে থেকে কাঁচামাল আনতে ঋণপত্র খুলতে সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে অতি প্রয়োজনীয় ওষুধের উৎপাদন ও সরবরাহে সঙ্কট দেখা দেয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্য দিকে, আমদানি করা যাচ্ছে না বহু জরুরি ওষুধপত্র।
ওষুধ কোম্পানিগুলোর সূত্রমতে, দেশে এখন ওষুধ শিল্পে যে পরিমাণ কাঁচামালের মজুদ আছে; তাতে খুব বেশি হলে দুই থেকে তিন মাস চলতে পারে। তবে দুশ্চিন্তার কথা হলো- এরই মধ্যে অনেক কোম্পানি সঙ্কটে পড়ে গেছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে ওষুধ উৎপাদন ও সরবরাহ। আবার দেশে যেসব ওষুধ তৈরি হয় না, সেগুলো আমদানির জন্য এলসি খুলতেও নানা ধরনের জটিলতায় পড়তে হচ্ছে আমদানিকারকদের। এ কারণে দেশের বাজারে সময়মতো ওই সব অতি জরুরি প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া রোগীদের জন্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বাস্তবতা হলো- কিছু দিনের মধ্যে ওষুধ আমদানি করতে না পারলে অনেক জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীরা ঝুঁকিতে পড়বেন বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আশঙ্কা করছেন।
আমাদের সবার জানা, খাদ্যদ্রব্যের মতো ওষুধও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান। এসব ছাড়া মানুষের জীবন অচল। কিন্তু দেশে খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্যের মতো এখন নিত্য ও অতি প্রয়োজনীয় ওষুধের সঙ্কট দেখা দেয়ার আশঙ্কার খবরে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ আরো বেড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। তাই ওষুধ শিল্পের উদ্যোক্তাদের মতো আমরাও মনে করি, অতি প্রয়োজনীয় ওষুধের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে সব ধরনের বাধা অপসারণের কার্যকর পদক্ষেপ অতিসত্বর নেবে সরকার। তা না হলে ওষুধ সঙ্কটে জনস্বাস্থ্য হুমকিতে পড়বে। তখন ওই পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে বৈকি।


আরো সংবাদ



premium cement