২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
রাজনীতিতে অস্ত্রের ভাষা শঙ্কা বাড়াচ্ছে

দরকার সংলাপ, সমঝোতা ও নমনীয়তা

-

বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ লক্ষ করা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ চিঁড়া-মুড়ি নিয়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে হাজির হচ্ছে বিএনপির সমাবেশে। এই সময় পথের দূরত্ব ও পথের বন্ধুরতার পাশাপাশি সরকারি দলের ঠেঙ্গাড়ে বাহিনী ও পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। তারপরেও পরিবর্তনকামী মানুষের উৎসাহের কমতি নেই। বরিশালে দেখা গেল, ভেলা বানিয়ে নদী পার হচ্ছে, কেউ কেউ সাঁতরিয়ে নদী পার হয়ে কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে। গণতন্ত্রের অনুশীলনে প্রতিবাদী মানুষের এ সচেতনতাকে উৎসাহ দিতে হয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি, সরকার সম্পূর্ণ বিপরীত নীতি অবলম্বন করছে।
সরকারি দল ও কিছু ক্ষেত্রে পুলিশের আচরণ হতাশাজনক। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, তারা মারমুখী হয়ে উঠছে। এই অবস্থায় পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা জেগে উঠছে। কারণ বিভিন্ন জায়গায় বিরোধীদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্রের ব্যবহার ইতোমধ্যে দেখা গেছে। অন্য দিকে সরকারি দলের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে ‘খেলা’ হবে বলে হুমকি দেয়া হচ্ছে, দম্ভ ভরে বলা হচ্ছে, ডিসেম্বরে বিএনপিকে রাস্তা থেকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করা হবে। দলটির নেতাকর্মী ও পুলিশের ওপর এর প্রভাব রয়েছে।
সোমবার জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আয়োজিত বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা চালানো হয়েছে। কিশোরগঞ্জে বিএনপি কার্যালয়ে আলোচনা ও দোয়ার মাহফিলে আয়োজন করা হয়। এই সময় জেলা যুবদলের একটি মিছিলে স্লোগান দিতে বাধা দেয়ার এক পর্যায়ে বেধড়ক লাঠিপেটা করে পুলিশ। শেষে তাদের ওপর গুলি চালানো হয়। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ সিভিল পোশাকে তাদের ওপর হামলা করছে। এতে তাদের ১৮ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। ঝিনাইদহে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির স্থলে সরকারি দলের লোকেরা কর্মসূচি আয়োজন করে ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে বিরোধীদের ওপর হামলা হলে সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশ লাঠিপেটা করে বিএনপির মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
একই জায়গায় কর্মসূচি দিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বিএনপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পণ্ড করার পুরনো কৌশল সরকারি দল দীর্ঘ দিন করে যাচ্ছে। নতুন করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা খুনের ঘটনাও দেখা যাচ্ছে। সিলেটে বিএনপির নেতা অ ফ ম কামালকে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়েছে। হামলার শিকার হয়ে উল্টো মামলার শিকার হওয়ার ঘটনাও চলছে। বিএনপি নেতা প্রকৌশলী ইশরাকের বরিশালগামী গাড়িবহরে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এতে অনেকে আহত হন। এ ঘটনায় ইশরাক ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। অথচ হামলার ঘটনায় কোনো মামলা নেই, তদন্তের উদ্যোগ নেই। এমন তৎপরতা সারা দেশে বেশি হারে দৃশ্যমান হচ্ছে। মামলা হওয়ার পর বিএনপির নেতাকর্মীদের ত্বরিত গ্রেফতার করা হচ্ছে। খবরে জানা যায়, সরকারের এই কৌশল সামনে কেবল তীব্রই হবে। বিরোধী দলের তৎপর নেতাকর্মীদের যেকোনোভাবে আটক করে আন্দোলন দমন করা হবে, আগের মতো এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অসহনীয় পণ্যমূল্যসহ দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও ভোটাধিকারের দাবিতে বিরোধীরা আন্দোলন করছে। এতে জনসাধারণ সাড়া দিচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের খবর জানা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক সমাবেশে আসা মানুষের বড় অংশ সাধারণ মানুষ। তারা অর্থনৈতিক সঙ্কটে কষ্টকর জীবনযাপন করছেন। এ অবস্থার পরিবর্তন কামনায় বিরোধী রাজনীতির সাথে তারা একাত্ম হয়েছে। এর সাথে সরকারি দলের দ্বিমত হওয়ার কিছু নেই। বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে তারাও ভুক্তভোগী।
জাতীয় সঙ্কট মোকাবেলায় দমন-পীড়ন কোনোভাবে কৌশল হতে পারে না। এতে করে অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব হবে না। যদি সরকার মনে করে বিরোধীদের উৎখাত করা হলে, সব ঠিক হয়ে যাবে, সেটি অবাস্তব। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ভোটাধিকার হরণের অভিযোগ, তার সাথে যুক্ত হচ্ছে ভুল অর্থ ব্যবস্থাপনা। দেশবাসী এর শিকার হয়েছে। এর প্রতিকারের জন্য বিরোধীদের সাথে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। সে জন্য দরকার সংলাপ সমঝোতা। আমরা আশা করব, জাতীয় কল্যাণের কথা মাথায় রেখে সরকার দমন-পীড়নের পথ থেকে সরে এসে নমনীয়তার পথ অবলম্বন করবে।


আরো সংবাদ



premium cement