২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জ্বালানি সঙ্কটে পাঁচ শিল্পাঞ্চল

উৎপাদন কমেছে অর্ধেক

-

দেশে জ্বালানি সঙ্কট তীব্রতর হয়েছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহের অভাবে শিল্প খাতে উৎপাদন নেমে এসেছে অর্ধেকে। লোডশেডিংয়ে ডিজেল কিনতে খরচ বেড়েছে বিপুল পরিমাণে। বাড়তি খরচের কারণে কারখানা চালু রাখা নিয়ে উদ্যোক্তারা শঙ্কিত।
একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের চাপ না থাকা ও ঘন ঘন বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে দেশের শিল্পকারখানায় উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদন বন্ধ থাকলেও প্রতি মাসে শ্রমিকের বেতন ও গ্যাসের ন্যূনতম ফি পরিশোধ করায় মালিকরা আছেন বেকায়দায়। দেশের পাঁচ শিল্পাঞ্চল- নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, ট্যানারি শিল্পনগরী ও ময়মনসিংহের ভালুকায় গ্যাস-বিদ্যুৎনির্ভর কারখানাগুলোতে গড়ে ৫০ শতাংশ উৎপাদন কমেছে।
এসব শিল্পাঞ্চলে কারখানাগুলোতে গত বছরের ডিসেম্বরে যেখানে গ্যাস পাওয়া যেত ১২-১৪ ঘণ্টা; তার পর থেকে পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে গ্যাসের চাপ একেবারে কমে গেছে।
নরসিংদীতে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার বস্ত্রকল রয়েছে। এগুলোতে প্রতিদিন ছয় থেকে আট ঘণ্টা লোডশেডিং হয়। গ্যাসের সঙ্কটও প্রকট। লোডশেডিংয়ের সময় উৎপাদন অব্যাহত রাখতে ডিজেলচালিত জেনারেটর চালানো হয়। এতে খরচ বাড়লেও পুরোদমে উৎপাদন হচ্ছে না। উৎপাদন কমে যাওয়ায় আয় কমছে। কারখানাগুলোতে এক শিফট বন্ধ রাখতে হচ্ছে। দিনের প্রায় অর্ধেকটা সময় কোনো উৎপাদন হচ্ছে না। ফলে যারা চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন, তাদের মজুরিতে টান পড়েছে।
গাজীপুরে কারখানার সংখ্যা দুই হাজার ১৬৫টি। কারখানাগুলোর বড় অংশ গ্যাসনির্ভর। গ্যাসের চাপ কম থাকায় উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অন্য দিকে গাজীপুরে বর্তমানে গড়ে ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ লোডশেডিং হচ্ছে। এখানে প্রতিদিনের গ্যাসের চাহিদা ৬৩ কোটি ঘনফুট; কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া যাচ্ছে ৪০ কোটি ঘনফুট। কারখানাগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ কখনো বন্ধ থাকে না। তবে চাপ কম থাকে।
এ দিকে চামড়াশিল্প নগরীতে ১৪২টি ট্যানারি উৎপাদনে রয়েছে। এগুলোতে প্রতিদিন ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন। ট্যানারির মালিকদের দাবি, বর্তমানে এ শিল্পনগরে মাত্র চার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, সাধারণত কোরবানির ঈদের সময় ৬০ শতাংশ চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এরপর ক্রেতাদের সাথে চুক্তিপত্র ও ঋণপত্র করা হয়। এখন বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে উৎপাদন কমে ২০ শতাংশে চলে এসেছে।
গ্যাসের অভাবে কারখানা বন্ধ নারায়ণগঞ্জে। নারায়ণগঞ্জে পোশাক কারখানাসহ শিল্পকারখানা এক হাজার ৭৮৫টি। এসব কারখানা বর্তমানে প্রতিদিন তিন-চারবার বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের মুখে পড়ছে। জেলার বন্দর উপজেলায় গ্যাস-সঙ্কটে কারখানা বন্ধের ঘটনাও আছে। জেলায় গ্যাসের চাহিদা আট কোটি ঘনফুট। বিপরীতে সরবরাহ করা হয় গড়ে ছয় কোটি ৮০ লাখ ঘনফুট।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় ৩৫০টি কারখানা রয়েছে। এ এলাকায় দিনে ৮-৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ মিলছে না বলে জানিয়েছেন কারখানামালিকরা। তাদের দাবি, লোডশেডিংয়ের কারণে কারখানার উৎপাদন কমেছে ৩০-৪০ শতাংশ।
আগে সরকারের তরফ থেকে দৃঢ়ভাবে বলা হতো, আমরা বিদ্যুৎ পর্যাপ্ত উৎপাদন করতে সক্ষম। দেশে জ্বালানি সঙ্কট নেই; কিন্তু বাস্তবতা যে ভিন্ন তা আর লুকিয়ে রাখা যায়নি। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ঘোষণা দিয়ে পরিকল্পিত লোডশেডিং করা হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের জোগানের ফারাক বেশি হওয়ায় শিল্পকারখানার উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
জ্বালানি সঙ্কট মোকাবেলায় সরকার গালভরা বুলি আওড়ালেও কোনো টেকসই পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে দেশে বর্তমানে দেখা দিয়েছে জ্বালানি সঙ্কট। এতে করে গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে শিল্পকারখানায় উৎপাদনে ভাটা পড়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় বলা যায়, আপাতত এ সঙ্কট খুব শিগগির কাটবে তা মনে হয় না।


আরো সংবাদ



premium cement