২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ঘনিয়ে আসছে মন্দাজনিত অনিশ্চয়তা

পর্যটন খাতে মনোযোগ দিন

-

বিশ^জুড়ে পর্যটন খাত বিকশিত হচ্ছে; কিন্তু বাংলাদেশে উল্টো চিত্র। উৎকর্ষতার পরিবর্তে নতুন করে অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে খাতটি। বৈশি^ক মহামারী সব দেশে পর্যটনশিল্পের ওপর চরম আঘাত হানে, তবে সবাই তা কাটিয়ে ওঠে করোনার প্রকোপ কমে আসার পর। বাংলাদেশেও সেই প্রবণতা দেখা যাচ্ছিল; কিন্তু সম্প্রতি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যটন খাতে সংশ্লিষ্টদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।
করোনার আগের বছর পর্যটন সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশ বড় অগ্রগতি অর্জন করে। ২০১৯ সালে বিশ্বের ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান উঠে আসে ১২০ নম্বরে। ওই বছর পর্যটন খাতে বাংলাদেশে কর্মসংস্থান ছিল ১৮ লাখ ৫৯ হাজার মানুষের। মহামারীর সময় তা অনেক কমে যায়। এ ক্ষেত্রে নতুন করে ধস নামার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পর্যটন বিশে^র একক বৃহত্তম খাত। শিল্প, বিজ্ঞান-প্রযুক্তিসহ যেকোনো খাতের চেয়ে পর্যটনে বেশি অর্থের লেনদেন হয়। কিন্তু এটি হলো সেসব মানুষের জন্য আকর্ষণীয় যারা সচ্ছল জীবনের অধিকারী। খাওয়া, পরা, শিক্ষা, আবাসনের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণের পর বাড়তি ব্যয়ের সামর্থ্য থাকলে শুধু মানুষ বেড়াতে যাওয়ার চিন্তা করে। করে বাড়তি কেনাকাটা ও বিনোদনের পেছনে অর্থ ব্যয়ের বিলাসিতা। এখানেই বাংলাদেশের পর্যটন খাতের সঙ্কট। দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অভিযাত্রায় অর্থনৈতিক খাতে যে সামান্য স্বাচ্ছন্দ্যের সৃষ্টি হতে যাচ্ছিল তাতে মানুষ কিছুটা হলেও পর্যটন বিনোদনমুখী হচ্ছিল। বাড়ছিল অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যা। গড়ে উঠছিল একের পর এক বেসরকারি খাতের ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠান; কিন্তু গত ১৪ বছরের নিয়ন্ত্রণমূলক শাসনে জাতীয় অর্থনীতির নাভিশ^াস উঠেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, বৈদেশিক কর্মসংস্থান, ব্যাংক ব্যবস্থাসহ আর্থিক খাতের প্রতিটি অঙ্গই পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও স্থবিরতায় আক্রান্ত। সেই সাথে লাগামছাড়া বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম, বেড়েছে জ্বালানির দাম। এর জেরে বেড়েছে পরিবহন ভাড়াও। উচ্চবিত্ত ছাড়া আর সবারই জীবনযাত্রা স্বাভাবিক গতি হারিয়েছে। এমনকি একটি দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে যাচ্ছে বলে স্বয়ং সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে উপর্যুপরি সতর্কবার্তা দেয়া হচ্ছে। এমন অবস্থায় পর্যটনশিল্পের সাথে জড়িতরা বলছেন, সারা দেশে পর্যটক কমে গেছে। তারা লোকসানের মধ্যে পড়েছেন এবং সামনে একধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন।
নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্যটনের ভরা মৌসুম। এ সময় সারা দেশে পর্যটকের সংখ্যা আগের বছরগুলোর তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে বলে নয়া দিগন্তের এক রিপোর্টে বলা হয়। রিপোর্টে এ খাতের উদ্যোক্তাদের বক্তব্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারে সম্প্রতি পর্যটক কমেছে প্রায় ৯৫ শতাংশ। প্রতি বছর এ সময়ে হোটেল-মোটেলে যে পরিমাণ রুম বুকিং হয় এবার তার ৫ শতাংশও হয়নি। এ দিকে নিরাপত্তাজনিত কারণে বান্দরবান ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় জেলার রোয়াংছড়ি, রুমা, আলীকদম ও থানচির প্রতিটি পর্যটন স্পট পর্যটকশূন্য। সিলেটের পর্যটন পুরোই বিপর্যস্ত গত বন্যার পর থেকে। জাফলং বা তামাবিলে পর্যটক প্রায় নেই বললেই চলে।
বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে পর্যটন খাত অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে পর্যটন খাতকে কাজে লাগানো হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশে এটি উপেক্ষিত ও অবহেলিত। অথচ এটি হতে পারে গার্মেন্ট রফতানি অথবা প্রবাসী আয়ের চেয়েও বড় একটি অর্থ আয়ের উৎস। এ জন্য দরকার শুধু বিদ্যমান সম্ভাবনাগুলো যথাযথ কাজে লাগানো। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন, পর্যটকদের নিরাপত্তা, যাতায়াত সহজ করা, বিনোদনের ব্যবস্থা ও দেশ-বিদেশে প্রচারের কিছু কার্যক্রম সম্পন্ন করা হলে এটি হতে পারে অর্থনীতির বৃহত্তম খাত; কিন্তু এ বিষয়ে মনোযোগ দেয়ার অবকাশ সরকারের সংশ্লিষ্টদের আছে বলে মনে হয় না।


আরো সংবাদ



premium cement