২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বিচার ও রাজনীতিতে বঞ্চনা

উন্মুক্ত হোক সংলাপের পথ

-

বাংলাদেশে উন্নয়নে অংশীদার বন্ধুরাষ্ট্রগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কটে এসব দেশের সহায়তা আরো বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে উঠছে। আমাদের আসন্ন জ্বালানি বিপর্যয় থেকে উত্তরণে অর্থনৈতিক সক্ষমতাসম্পন্ন দেশগুলোর প্রতি সহায়তা প্রত্যাশা করে দেশের জনগণ। এ সময়ে দেশে রাজনৈতিক সঙ্কটও ঘনীভূত হচ্ছে। দেশের অর্থনীতিকে একটি স্থিতিশীলতা অর্জনে আগে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দূর করা প্রয়োজন। বিরোধীদের ওপর দমন-নিপীড়ন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ ও গণতন্ত্র উন্মুক্তকরণে এ জন্য কাজ করতে হবে। উন্নয়ন সহযোগীরা ইতোমধ্যে এসব বিষয়ে কথা বলেছেন। সর্বশেষ বৃহৎ সহযোগী বন্ধুপ্রতিম দেশ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সংলাপের পরিবেশ তৈরি করতে জোর দিয়েছে।
ওয়াশিংটন থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এক মুখপাত্রের সাথে বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূতও একই ধরনের আহ্বান রাখছেন। তারা ভিন্ন জায়গা থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে প্রায় একই ধরনের মত প্রকাশ করেছেন। বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা অর্থাৎ রাজনৈতিক দলের নেতা কিংবা সদস্য হওয়ার কারণে বিচারের হেরফের না হওয়া, একজন সাধারণ নাগরিক ও ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতাসহ সব মানুষ যাতে বিচারের সমান সুযোগ পান। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলভেদে সমান বিচার না পাওয়ার বহু অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস ও মারধরের শিকার হয়ে গণ অধিকার পরিষদের সদস্যরা মামলার জালে আটক হয়েছেন। দফায় দফায় মার খেয়ে তারা কারাগারে গেছেন। অন্য দিকে, সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ এ জন্য দায়ী হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। একই ধরনের বড় বড় বিচার বঞ্চনার ঘটনা বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের ক্ষেত্রে ঘটার অভিযোগ তারা করে যাচ্ছেন। সরকার এতে কোনো কর্ণপাত করে না।


মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে দেশে বঞ্চনা আরো বিস্তৃত হয়েছে। শুধু সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকরা নন; সাধারণ নাগরিকরাও মানহানির মামলায় দমন-পীড়নের মুখে পড়ছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) এ ধরনের পীড়নে বাড়তি সুযোগ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এ আইনের কারণে সরকারের শীর্ষ নির্বাহীদের সমালোচনা করা যায় না। বিরোধী দল বিএনপি দেশব্যাপী ধারাবাহিক সমাবেশের আয়োজন করছে। এগুলোতে সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে বাধা দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মুখপাত্র নিড প্রাইস এক প্রতিক্রিয়ায় জানান, বাংলাদেশসহ বিশ্বের সর্বত্র বলিষ্ঠ বিতর্ক ও নাগরিকদের সম্পৃক্ততার সুযোগ থাকা প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, আমরা এর আগেও বাংলাদেশে রাজনীতি চর্চার জায়গা সঙ্কীর্ণ হয়ে যাওয়া, নাগরিক অধিকারের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। এ দিকে নারায়ণগঞ্জে আমেরিকার কারিগরি সহযোগিতায় যৌথভাবে তৈরি একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন করতে গিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, আইনের শাসন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ করা গেলে বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগ বৃদ্ধির সহায়ক হবে।
যুক্তরাষ্ট্র ছয় কোটি ১০ লাখের বেশি করোনার ভ্যাকসিন দিয়েছে। সারা বিশ্বে দেশটির অনুদানকৃত টিকার সবেচেয়ে বড় গ্রহীতা আমরা। এ ছাড়া এ সময় অনুদানের সর্বোচ্চ নগদ অর্থও দেশটি থেকে এসেছে। আমাদের বিচার প্রশিক্ষণ, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তার প্রশিক্ষণসহ প্রায় সব খাতে দেশটি ভূমিকা রেখে চলেছে। বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে ওয়াশিংটনের সহায়তা নেয়ার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ক্ষয়রোধে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ও পরামর্শকে আমরা ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে পারি। দেশে শাসনতান্ত্রিক সঙ্কটের যে অভিযোগ চার দিক থেকে উত্থাপিত হচ্ছে; এর ভুক্তভোগী দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। মানুষ তাদের অধিকার না পাওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়েও যে ব্যর্থ হচ্ছে তা সবার জানা। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেনসহ গণতন্ত্র পৃষ্ঠপোষকতা দানকারী সব দেশ ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে অবহিত। আমাদের উচিত অভ্যন্তরীণ গলদগুলো শুধরে নিতে তাদের আহ্বানে সাড়া দেয়া এবং বিরোধী দলসহ সাধারণ মানুষের জন্য গণতন্ত্র উন্মুক্ত করা।

 


আরো সংবাদ



premium cement