এ প্রবণতা অমানবিক
- ০৫ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০
সাম্প্রতিক সময়ে মা-বাবার প্রতি সন্তানদের নিষ্ঠুর আচরণ বেড়ে গেছে। কী সচ্ছল, কী গরিব- সব ধরনের পরিবারে বেশির ভাগ বয়স্ক বাবা-মা এখন অবহেলার পাত্র। বঞ্চনার শিকার। অথচ তারা তাদের যৌবনে সন্তানকে মানসিক ও বৈষয়িকভাবে সক্ষম করে তুলতে কী না করেন! সেই তারা বার্ধক্যে পরিবারের কাছে হয়ে পড়ছেন মূল্যহীন। সমাজবিজ্ঞানীরা এর তত্ত্বীয় ব্যাখ্যা দিতে পারবেন নিশ্চয়। আমরা যারা সাধারণ মানুষ; যাদের কাঠামোগত জ্ঞান নেই; তাদের কাছে বিষয়টি পীড়াদায়ক।
ইদানীং মা-বাবার সাথে ঘটে যাওয়া নিষ্ঠুর আচরণের দৃষ্টান্ত দেয়া যাবে ভূরি ভূরি। সন্তান মা-বাবার সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করলেও বাবা-মা ছেলেমেয়ের জন্য চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকারে পিছপা হন না। তবু মা-বাবার প্রতি দিন দিন নিষ্ঠুরতা কেন বাড়ছে? এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, ভোগবাদী জীবন সন্তানদের মা-বাবার প্রতি উদাসীন করে তুলেছে, এ কথা এখন পরীক্ষিত সত্য। পশ্চিমা দুনিয়ায় বৃদ্ধ বাবা-মাকে সন্তান কাছে রাখতে চায় না। সেখানে এ সংস্কৃতি পুরনো; কিন্তু আমাদের ঐতিহ্যবাদী সমাজেও বিষবৃক্ষটি এখন শিকড় গেড়েছে। ফলে সন্তানের কাছে বাবা-মা নিগৃহীত হওয়ার ঘটনা গণমাধ্যমে অহরহ প্রকাশ পাচ্ছে।
এমন হৃদয়বিদারক একটি খবর গতকাল প্রকাশিত হয়েছে নয়া দিগন্তে। পত্রিকার নাটোর প্রতিনিধির বরাতে ‘নাটোরে শতবর্ষী অন্ধ মাকে রাস্তায় ফেলে দিলো সন্তানরা’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে উল্লেøখ করা হয়েছে, নাটোরের শতবর্ষী পাঁচ সন্তানের জননী ওই মা অন্ধ। গত বুধবার রাতে সন্তানরা তারা বানুকে রাস্তায় ফেলে দেয়। জেলার ছাতনী ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী গত বৃহস্পতিবার সমঝোতার কথা বলে বুধবার রাতে বড় ছেলের বাড়িতে বৃদ্ধাকে রেখে আসেন। তবে বৃদ্ধার দুই নাতি ও নাতবৌরা অন্ধ বৃদ্ধাকে রাতে থাকতে দেন গোয়ালঘরে।
প্রতিবেদন মতে, বৃদ্ধার তিন ছেলের আধা পাকা বাড়ি ও প্রয়োজনীয় জমিজমা থাকলেও তারা কেউ মায়ের দায়িত্ব নেননি। বৃদ্ধা পাশের গ্রামে বড় মেয়ের বাড়িতে থাকতেন। এ কারণে বয়স্কভাতার টাকা তিনি মেয়ের পরিবারে ব্যয় করতেন। এতে বাদ সাধেন ছোট দুই ছেলে আর বড় ছেলের ঘরের দুই নাতি। সবাই বয়স্কভাতার সমভাগ চান। টাকার ভাগবাটোয়ারার পর সিদ্ধান্ত হয়, তিন ছেলের পরিবারে এক মাস করে বৃদ্ধাকে রাখা হবে। অক্টোবরে বৃদ্ধা ছিলেন ছোট ছেলের সংসারে। নভেম্বরের ২ তারিখ চলে গেলেও বড় ছেলে মাকে নেননি। তাই ছোট ছেলে অন্ধ মাকে ফেলে যান গ্রামের রাস্তায়। তবে বড় ছেলে বলেছেন, সংসারে তার নিজের কোনো দাম নেই। স্ত্রী মারা গেছেন। এখন দুই ছেলের দয়ায় তাকে বেঁচে থাকতে হয়। ইচ্ছে থাকলেও মায়ের জন্য কিছু করতে পারেন না তিনি। অবশেষে নাটোর জেলা প্রশাসন অমানবিক এ ঘটনার আপাতত মীমাংসা করেছে। বৃদ্ধাকে মেয়ের বাড়িতে রেখে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
ধর্ম ও আইন মতে, বাবা-মা দু’জনই সন্তানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ধর্মগ্রন্থ মা-বাবার সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মান নিশ্চিত করেছে। পরিবারেও মা-বাবার মর্যাদা ও সম্মান সবার উপরে। একজন বিশ্বাসীর কাছে নিজের ধর্মগ্রন্থ সত্যের মানদণ্ড। তা সত্ত্বেও বাবা-মায়ের অধিকার বিষয়ে আমাদের দেশে রয়েছে সুনির্দিষ্ট আইন। মা-বাবা যখন বৃদ্ধ হন, কর্মক্ষম সন্তানের কাছে তখন তাদের আইনত কিছু প্রাপ্য রয়েছে। প্রচলিত আইনে বৃদ্ধ মা-বাবা সাবালক ও কর্মক্ষম সন্তানের কাছ থেকে প্রাপ্য সম্মান ও ভরণপোষণে আইনের আশ্রয় চাইতে পারেন। দেশে ‘পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন-২০১৩’ বলবৎ রয়েছে। এ আইনে প্রত্যেক কর্মক্ষম সন্তানকে মা-বাবার ভরণপোষণের নিশ্চয়তা দিতে হবে, এ বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
আইনে আছে, কোনো সন্তান তার মা কিংবা বাবা বা উভয়কে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো বৃদ্ধনিবাস কিংবা অন্য কোথাও একত্রে বা আলাদাভাবে বসবাস করতে বাধ্য করতে পারবে না। মা-বাবার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হবে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা ও পরিচর্যা করতে হবে। মা-বাবাকে ভরণপোষণ না করলে এবং আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন না করলে অভিযুক্ত সন্তানের জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে।
তবে সব থেকে বড় কথা নৈতিকতা। বিবেক বলে, প্রত্যেকের উচিত মা-বাবার যথাযথ অধিকার সংরক্ষণ করা। তাদের প্রতি গভীর মমতায় মনোযোগ দেয়া। আমরা আশা করব নাটোরের তারা বানুর মতো আর কোনো মা-বাবাকে যেন সন্তানদের কাছে ভাগ্যবিড়ম্বিত হতে না হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা