২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
অবাধে মুদ্রা পাচার চলছে

তদারকি কর্তৃপক্ষ কি দর্শক

-

বাংলাদেশের আর্থিক খাত বর্তমান সরকারের সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। দেশের সরকারি-বেসরকারি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যাংক থেকে বড় দাগে অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এমন কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই সময়ে খুঁজে পাওয়া যাবে না যাদের তহবিল তছরুপ হয়নি। অন্য দিকে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ সংস্থা ও উন্নয়ন প্রকল্পে চলেছে সাগরচুরির উৎসব। দেশকে এভাবে চুষে দুর্নীতিবাজরা সেসব অর্থ কী করেছেন তার উত্তর জানতে আমাদের বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বিভিন্ন সংস্থা জানাচ্ছে লুটপাট হওয়া এসব অর্থ পাচার হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এক বছরে সেটি সর্বোচ্চ এক লাখ কোটি টাকা পর্যন্ত ওঠে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, বিগত দশকজুড়ে অপরাধীরা এ কাজ অবাধে করতে পেরেছে। আমাদের তদারকি কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার বদলে দর্শক হয়ে থেকেছে।
প্রত্যেকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বিধিবিধান নিয়মকানুন রয়েছে। একদল দুর্নীতিবাজ এই সময়ের ভেতর থেকে এই নিয়ম ধসিয়ে দেয়। তার ওপর সরকারি বিভিন্ন নজরদারি প্রতিষ্ঠান এসব প্রতিরোধে অজ্ঞাত কারণে তৎপর হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট নামে একটি বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০২ সালে। এর মূল কাজ মুদ্রা পাচার রোধে রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করা। এই আমলে দেখা গেল খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা হাওয়া হয়ে গেছে। এ বিভাগের ২০২১-২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে মুদ্রা পাচারের গোপন রাস্তাটি পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে। তারা জানাচ্ছে, আমদানি পণ্যের দাম ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি দেখিয়ে দেশের বাইরে মুদ্রা পাচার হয়েছে। তারা বলছে, এতে দুইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ। প্রথমত পণ্য অনেক বেশি দামে বিক্রি করে আমদানিকারকরা সীমাহীন মুনাফা লুটে নিচ্ছে, যার অভিঘাত পড়ছে ভোক্তাদের ওপর। এর আড়ালে তারা মুদ্রা পাচার করে দেশের অর্থনীতিকে ফোকলা করে দিচ্ছে। আবার পণ্যের মূল্য অনেক কম দেখিয়ে এই চক্র একইভাবে অর্থনীতির ক্ষতি করছে।
ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স জানাচ্ছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদারকি জোরদার করছে। তারা এখন এলসি অনুমতি দেয়ার আগে আমদানি পণ্যের উৎসে দাম যাচাই করছে। এতে তারা দেখতে পেয়েছে, ১০০ বা ১১০ ডলারের পণ্য আমদানিকারকরা ৩০০ ডলার উল্লেখ করে এলসির আবেদন করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ধরনের পণ্য আমদানির বহু খবর এখন জানতে পারছে। তারা সন্দেহভাজন এলসিতে আপত্তি দিচ্ছে। ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রতিবেদনে ২০২১-২২ অর্থবছরে আট হাজার ৫৭১টি সন্দেহভাজন লেনদেন রিপোর্ট করেছে। আগের অর্থবছরে এর সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ২৮০টি। এর কারণ হিসেবে জানানো হচ্ছে পর্যবেক্ষণ শক্তিশালী করার কারণে সন্দেহজনক কেস বেড়েছে। এর সাথে সাথে কমে যাচ্ছে এলসি খোলার হার। কয়েক মাস আগেও যেখানে আট বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হতো সেটি পাঁচ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এতে করে মুদ্রা পাচার কতটুকু রোধ হলো আর প্রয়োজনীয় আমদানি কতটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। তবে দেশে বৈদেশিক মুদ্রাভাণ্ডার এখনো দ্রুত কমছে।
ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সের প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, সন্দেহভাজন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি কারা সেটি শনাক্ত হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের তদন্ত চলছে কি? বিপুল পরিমাণ মুদ্রা পাচার হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ তদারকি সিস্টেমটি তখন কি কাজ করেনি? তারা যদি কাজ করে থাকে তাহলে অপরাধী চক্রকে কেন তখন এ সুযোগ দেয়া হয়েছে। এক যুগের বেশি সময় ধরে কিভাবে তারা পণ্যের অস্বাভাবিক দাম দেখিয়ে মুদ্রা পাচারের সুযোগ পেল। আমাদের নজরদারি পুরো কর্তৃপক্ষ এখন প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়। এখনো সুযোগ আছে যাদের শনাক্ত করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হোক।


আরো সংবাদ



premium cement
বিয়ের প্রলোভনে আ’লীগ নেতার বিরুদ্ধে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনই চীন-মেক্সিকো-কানাডার ওপর শুল্ক আরোপ করবেন আ’লীগ ইসলামী আদর্শকে জঙ্গিবাদ বলে এখন জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে : আলাউদ্দিন সিকদার শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কঠোর হয়ে দমন করতে চাই না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শরণখোলা প্রেসক্লাবের নির্বাচনে আলী সভাপতি-আনোয়ার সম্পাদক রিমান্ড শেষে কামরুল-জ্যাকবকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ সংবিধানে যেসব সংস্কার প্রস্তাব দিলো বিএনপি যমুনা রেল সেতু উদ্বোধন জানুয়ারিতে, ট্রায়াল ট্রেনের যাত্রা শুরু চিন্ময়ের মুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের সাথে আলোচনা করতে ভারতকে অনুরোধ ইসকনের শেখ হাসিনাসহ ৪৪ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে হেফাজতের অভিযোগ চিন্ময় কৃষ্ণের জামিন নামঞ্জুর

সকল