২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
রক্তস্বল্পতায় বিপুলসংখ্যক নারী-শিশু

জনস্বাস্থ্যের জন্য অশনিসঙ্কেত

-

আমাদের দেশে দারিদ্র্যের কারণে একসময় মানুষজন তীব্রভাবে পুষ্টিহীনতায় ভুগেছে। এখন সবাই খাবার খেতে পেলেও তা কতটা পুষ্টিগুণসম্পন্ন সে প্রশ্ন থেকেই যায়। দেশের জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি এখনো কাক্সিক্ষত মানে পৌঁছাতে না পারাই এর অন্যতম কারণ। আমাদের জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়।
যদিও দেশে আগের মতো খাদ্যঘাটতি নেই। অতীতের মতো মানুষজনকে না খেয়ে থাকতে হয় না। তবু জনোগোষ্ঠীর বিপুলসংখ্যক পুষ্টিকর অর্থাৎ মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় সুষম খাবার খেতে পায় না। এই বাস্তবতা আমাদের মেনে নিতে হয় দেশের খাদ্যনিরাপত্তার দুর্বলতার কারণে। দ্বিতীয় জাতীয় অনুপুষ্টি জরিপের ফলের দিকে তাকালে এর প্রমাণ মেলে। একটি সহযোগী দৈনিকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্যের উল্লেখ জানা যায়।
উদ্বেগজনক খবর হলো, দেশের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু ও নারীদের উল্লেখযোগ্য অংশ প্রয়োজনীয় অনুপুষ্টিকণা বা মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট পাচ্ছেন না। জাতীয় জরিপের তথ্য হলো, প্রতি পাঁচ শিশুর একটি (২১ শতাংশ) রক্তস্বল্পতায় ভুগছে। রক্তস্বল্পতায় আছেন প্রতি তিনজন নারীর একজন (২৯ শতাংশ)। জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, কিছু ক্ষেত্রে পুষ্টি পরিস্থিতি ১০ বছর আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, গত এক দশকে নারী ও শিশুদের প্রয়োজনীয় অনুকণার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোনো উন্নতি হয়নি বা সামান্য উন্নতি হয়েছে। দেশের বিরাট জনসংখ্যার খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত না থাকার কারণে বর্তমান সময়েও আমাদের বিপুলসংখ্যক শিশু ও নারী অনুপুষ্টিকণার ঘাটতিতে আছে।
বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন (এ, ডি, ই, বি-১২), জিংক, আয়রন, আয়োডিন, ফোলেট এগুলো অনুপুষ্টিকণা। অনুপুষ্টিকণা সব বয়সী মানুষের প্রয়োজন হয় সামান্য পরিমাণে; কিন্তু এর একটু ঘাটতি হলেই শারীরিক বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যেমন ভিটামিন এ-র অভাবে শিশুর রাতকানা রোগ হয়।
পুষ্টিবিদদের মতে, সবুজ শাকসবজিতে অনেক ধরনের অনুপুষ্টিকণা রয়েছে। সবুজ শাকসবজি খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে এর ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। আবার অর্থ ব্যয় না করেও বিনা পয়সায় এই অনুপুষ্টিকণা পাওয়া যেতে পারে; যদি শিশুর অভিভাবকরা একটু সচেতন হন। যেমন- শিশুকে কিছু সময় রোদে রেখে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি পূরণ করা সহজেই সম্ভব। অনুপুষ্টিকণা পাওয়ার অবাধ উৎস হলো খাদ্য। সে জন্য খাদ্যনিরাপত্তা ও বৈচিত্র্যপূর্ণ খাদ্য পরিস্থিতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে।
সরকারের তরফ থেকে বলা হয়ে থাকে, বিগত কয়েক বছর ধরে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে বাস্তবে এখনো দেশে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়। এ ছাড়া জনগণ যে খাবার খাচ্ছে তার পুষ্টিগুণ নিয়েও যথেষ্ট সংশয় রয়ে যায় জাতীয় অনুপুষ্টিকণার জরিপের তথ্য-উপাত্ত দেখলে। জরিপের তথ্য মতে, দেশের ৬৬ শতাংশ পরিবারে খাদ্যনিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে। ৪৩ শতাংশ পরিবারে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা মাঝারি ধরনের। আর মারাত্মক খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে ১২ শতাংশ পরিবার।
বলার অবকাশ রাখে না, জরিপের তথ্য আমলে নিয়ে এখনই আমাদের অনুপুষ্টিকণা ঘাটতি থেকে উত্তরণে সবচেয়ে কার্যকর কর্মসূচি হাতে নেয়া দরকার। তবে এটিও স্মরণযোগ্য, সরকারের একার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়। এর জন্য চাই সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা নিতে কার্পণ্য করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে সম্পদ সীমিত। এ সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে অনুপুষ্টির ঘাটতি দূর করার কাজে নেমে পড়তে আর সময়ক্ষেপণ করা যাবে না। তা না হলে আমাদের জনস্বাস্থ্য আরো হুমকিতে পড়বে। এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আমাদের শিশুদের সুস্থ-সবল হয়ে বেড়ে ওঠা ব্যাহত হবে। অন্য দিকে নারীস্বাস্থ্য দুর্বল হলে শিশুর লালন-পালনও বাধাগ্রস্ত হতে বাধ্য।


আরো সংবাদ



premium cement