২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
টানা দরপতনের ধারায় শেয়ারবাজার

সুসময়ের অপেক্ষার বিকল্প নেই

-

শেয়ারবাজারে আর সুসংবাদ ফিরে এলো না। ক্রমাগত দরপতনের ধারায় এটি এখন একরকম বিপর্যস্ত। সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে ঢাকার শেয়ারবাজারে টানা দরপতন ঘটেই চলছে। বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে। গত সপ্তাহে শেয়ারবাজারে টাকার পরিমাণে লেনদেনও কমেছে। বাজার মূলধন কমেছে ৪৫০ কোটি টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে দুই হাজার ২১৭ কোটি ৭১ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৯ টাকা।
তিন সপ্তাহে সূচক কমেছে ১৯০ পয়েন্ট। এই দরপতনের প্রভাব পড়েছে দৈনিক লেনদেনে। বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। বিশেষ করে ডলারের দর বেড়ে যাওয়া ও জ্বালানি সঙ্কটের কারণে মানুষ লেনদেন করতে কিছুটা অনিশ্চয়তায় ভুগছে। অনিশ্চয়তা আছে বিশ্ব পরিস্থিতির কারণেও। সব মিলিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা রীতিমতো আতঙ্কে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজার চাঙ্গা করার কোনো উদ্যোগ কাজে আসছে না। দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই-ও। একজন শেয়ারবাজার বিশ্লেষক একটি দৈনিকের কাছে ব্যাখ্যা করে বলেছেন, পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়েছে কর্তৃপক্ষের অদক্ষতার কারণে। এমনকি বাজার সময়মতো চালু করা ও নির্ধারিত পুরো সময় লেনদেন চালিয়ে যাওয়াও নিশ্চিত করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। গতকাল সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে যথাসময়ে দিনের স্বাভাবিক লেনদেন শুরু করতে পারেনি ডিএসই। সেটি সম্ভবত কারিগরি ত্রুটির কারণে। দুই দিন সাপ্তাহিক লেনদেন বন্ধ থাকার পর প্রথম কার্যদিবসে লেনদেন ব্যাহত হওয়ায় বিনিয়োগকারী ও ডিএসইর সদস্য ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। গত সপ্তাহের সোমবারও কারিগরি ত্রুটির কারণে একই রকম বিঘœ ঘটে। ওই দিন ত্রুটি সারিয়ে মাত্র ২০ মিনিটের লেনদেন হয়েছিল।
এসবই শেয়ারবাজারের নেতিবাচক দিক। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পরও বিনিয়োগকারীদের সামনে ভালো সম্ভাবনা আছে। সবার উচিত শেয়ার ধরে রাখা। শেয়ার ধরে রাখলে ভালো রিটার্ন পাওয়া যাবে। বিশেষজ্ঞ অভিমত হলো, বাজার গতিশীল রাখতে বড় মূলধনী কোম্পানিগুলোকে বাজারে তালিকাভুক্ত করতে হবে। সেদিকে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ যেমন নেই, তেমনি সমস্যাও আছে। বড় মূলধনী প্রতিষ্ঠান মুনাফা করতে না পারলে বাজারে আসবে না। এরই মধ্যে বেশ কিছু কোম্পানি আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে বিনিয়োগ সরিয়ে নিয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি-শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ এখন বাজারে নিষ্ক্রিয়। লোকসানের মুখে একটি অংশ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে, আবার অনেকে সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে।
দেশের অর্থনীতির বর্তমান নাজুক পরিস্থিতিতে এ বাজারে বিনিয়োগ করে মুনাফা করাও কঠিনতর। ফলে শেয়ারবাজারের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাও কম। এমন ধারণা থেকেই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পুঁজি সরিয়ে নিচ্ছে। এই ধারণা যে অসত্য নয় তা স্পষ্ট হয় শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত কিছু কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন থেকে। এমনও দেখা গেছে, একটি বহুজাতিক কোম্পানির মুনাফা আগের বছরের অর্ধেকে নেমে এসেছে। মুনাফা কমে যাওয়া মানে শেয়ারের দামে ধস। সেটিই হয়েছে।
মুনাফা কেন কমছে তার কারণও বিশ্লেষণ করেছে কোম্পানিটি। কারণের মধ্যে রয়েছে পণ্যের কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়া, দেশে টাকার বিপরীতে ডলারের দামের বিপুল বৃদ্ধি, পণ্য পরিবহনব্যয় বেড়ে যাওয়া ও মূল্যস্ফীতি। অর্থনৈতিক কারণে দেশে ভোক্তাদের কেনাকাটার সামর্থ্য কমে যাওয়ার বিষয়টিও উঠে এসেছে অন্যতম কারণ হিসেবে। সুতরাং অর্থনীতি ও ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, তার চাপ সামলে শেয়ারবাজারে ইতিবাচক কিছু ঘটবে এমন আশার জায়গা নেই বললেই চলে।
শেয়ারবাজারের এই মন্দাভাব কাটার জন্য বিনিয়োগকারীদেরও তাই সুদিনের অপেক্ষায় থাকার বিকল্প নেই।


আরো সংবাদ



premium cement