২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
নিত্যপণ্যে ঘাটতির শঙ্কা

এখনই ব্যবস্থা নিন

-

আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে ডলার সাশ্রয়ে সরকার সফল হলেও বেশ কিছু নিত্যপণ্যের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। ডলার সঙ্কট মোকাবেলা ও আমদানি নিয়ন্ত্রণের কারণে খাদ্যসহ কিছু নিত্যপণ্যের সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পুরনো মজুদ ফুরিয়ে আসার সাথে সাথে এসব পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির আশঙ্কা ব্যক্ত করে ভোগ কমানো ও সঞ্চয় বাড়ানোর আহ্বান জানানোর প্রভাবও বাজারে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশে এমন একটি আবহ তৈরি হয়েছে; সামনের দিনে অর্থ দিয়েও প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য মিলবে কি-না তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে যদিও আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য চালের ক্ষেত্রে কয়েক বছর আগে থেকেই দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে দাবি করছিল সরকার। তবুও প্রতি বছর বেসরকারি খাত চাল আমদানি করেছে। এবার আবহাওয়াগত কারণে ফসল উৎপাদন কম হওয়ায় চালের আমদানিনির্ভরতা বেড়েছে। এ কারণে চাল আমদানিতে বিধিনিষেধ কমানো হয়েছে। এর পরও অভ্যন্তরীণ চাহিদা অনুযায়ী চাল আমদানি হচ্ছে না। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে দেশের বাজারে চালের যে উচ্চমূল্য দেখা দিয়েছে; তা আরো ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে। লক্ষণীয়, খাদ্যশস্য আমদানির ক্ষেত্রে নতুন এলসি হ্রাসের হার অন্য অনেক পণ্যের চেয়ে বেশি। আমদানিকারকদের বক্তব্য- ডলারের মূল্যের অস্থিরতা ও এলসির জন্য মার্কিন মুদ্রা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ায় ব্যবসায়ীরা খাদ্যশস্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।
নয়া দিগন্তে গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সরকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ কমাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় নতুন এলসি স্থাপনের হার একেবারে কমেছে। অনেকে ডলারের অভাবে শতভাগ মার্জিন দিয়ে ব্যাংকে এলসি স্থাপন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে নতুন এলসি ৮.৫৭ শতাংশ কমে ১৮.৫৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। অথচ একই সময়ে এলসি নিষ্পত্তি ৩১.৫৬ শতাংশ বেড়ে ২২.৪৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আমদানি নিষ্পত্তি যেখানে প্রতি মাসে গড়ে সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার হচ্ছে; সেখানে নতুন এলসি হচ্ছে প্রতি মাসে গড়ে ছয় বিলিয়ন ডলার। যতই দিন যাচ্ছে এলসি স্থাপন ও নিষ্পত্তি দুই-ই কমছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, চলতি অর্থবছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চাল আমদানি সাড়ে ৬৭ শতাংশ কমেছে। গম আমদানি কমেছে ২৩ শতাংশ। সার্বিক খাদ্যশস্য আমদানি কমেছে প্রায় ৩৮ শতাংশ। নতুন এলসি স্থাপন আমদানি নিষ্পত্তির তুলনায় আরো বেশি হারে কমছে। ভবিষ্যতে অবস্থার আরো অবনতি ঘটতে পারে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে চাল-গমের পাশাপাশি ডাল ও চিনির আমদানিও কমেছে। ডাল আমদানি কমেছে ১৭ শতাংশ। চিনি আমদানি কমেছে সাড়ে ২৭ শতাংশ। এর মধ্যে উভয় ভোগ্যপণ্যের দাম বাজারে বেড়েছে। দুধ ও শিশুখাদ্যের আমদানি সাড়ে ১৩ শতাংশ কমেছে। বাজারে শিশুখাদ্যের দামও দফায় দফায় বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি হ্রাসের যে তথ্য তা মূল্য ভিত্তিতে করায় পরিমাণের হিসাবে আমদানি কমার হার আরো বেশি হবে বলে জানা গেছে। চাল, গম, চিনি, ডালের দাম বিশ্ববাজারে এক বছরের আগের তুলনায় এখন বেশ বেড়েছে। সাথে যুক্ত হবে টাকার অবমূল্যায়নের হার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে বাজার বিশ্লেষকদের মতো আমরাও মনে করি, যেসব ভোগ্যপণ্যের ব্যাপারে বিদেশনির্ভরতা বেশি সেগুলো আমদানির বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া না হলে খুব দ্রুত এসবের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা আরো গতি পাবে। পরিণতিতে নিত্যপণ্য, বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের দাম সাধারণের ক্রয়ক্ষমতায় রাখা খুব কঠিন হবে। দেশে যাতে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে না পারে সে জন্য আগে থেকেই আমাদের পূর্বপ্রস্তুতি নিতে হবে; যাতে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুদ গড়ে তোলা সহজ হয়।


আরো সংবাদ



premium cement