২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
আশ্রয়ণের বরাদ্দে অর্থ

অবিলম্বে এ দুর্নীতি বন্ধ করুন

-

সরকারের ‘আশ্রয়ণ’ প্রকল্পে ঘর বরাদ্দের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ হয়নি। সহযোগী একটি দৈনিকের সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি তার পাঠানো প্রতিবেদনে এ তথ্য দিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, ঘরবঞ্চিত ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলোর অভিযোগ- সৈয়দপুরের বোতলাগাড়ী ইউপির জনৈক তহশিলদার, অর্থাৎ ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা অর্থের বিনিময়ে সচ্ছল ব্যক্তিদের আশ্রয়ণের তালিকায় নাম দিয়ে ঘর বরাদ্দের ব্যবস্থা করেছেন। ফলে প্রকৃত ভূমিহীন পরিবারগুলো ঘর বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
এদিকে, গৃহ বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে ঘর থেকে বঞ্চিত দু’জন বিধবা বৃদ্ধা কয়েক দিন যাবত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরেই অনশন পর্যন্ত করেছেন। সে সময়ে সৈয়দপুরের ইউএনওর অফিসের সামনে, ঘর বরাদ্দের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ঘর থেকে বঞ্চিত অর্ধশতাধিক ভূমিহীন নারী-পুরুষ। প্রকল্প সূত্রেই জানা যায়, সৈয়দপুর উপজেলায় বোতলাগাড়ী ইউনিয়ন আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভূমিহীনদের জন্যই ৫৪টি বাড়ি নির্মিত হয়েছে। বাছাই করে ইতোমধ্যে ৫৪টি পরিবারের মধ্যে এসব ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে। এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার কথা স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রীর। বোতলাগাড়ীতে বরাদ্দ পাওয়া লোকজন ঘরে ওঠা শুরু করলেও নানা কথা শোনা যাচ্ছে। বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন ঘর থেকে বঞ্চিত প্রকৃত ভূমিহীনরা। তাই অর্ধশতাধিক নারী ও পুরুষ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দফতরের সামনে জড়ো হয়েছিলেন। তারা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সেই তহশিলদারের উপযুক্ত বিচার ও প্রকৃত ভূমিহীন-গৃহহীনদের মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দের জোর দাবি জানিয়েছেন। এ জন্য সেদিন তারা ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করেন। তাদের বক্তব্য- ওই প্রকল্পের ঘরগুলো প্রকৃত ভূমিহীনদের না দিয়ে টাকা খেয়ে জনৈক তহশিলদার বসতভিটা ও পাকা বাড়ি আছে এমন সচ্ছল পরিবারকে দিয়েছেন। এ জন্য মাথাপিছু ৮ থেকে ৪০ হাজার টাকা ঘুষ নেয়া হয়েছে। এ টাকা অসৎ লোকদের পকেটস্থ হয়েছে। মানববন্ধনে সর্দারপাড়ার বাসিন্দা একজন ভূমিহীন বলেছেন, ‘ওই তহশিলদার আমার নাম তালিকায় থাকলেও ঘুষ চেয়েছে ৩০ হাজার টাকা। আমি তা দেইনি বলে ঘরও পাইনি। অথচ সে টাকা খেয়ে সচ্ছলকে ওই ঘর দিয়েছে। টাকার বিনিময়ে ঘর পেয়েছে যারা, তাদের বেশির ভাগই ভূমিহীন নয়।’
একই গ্রামের আরেক বাসিন্দা, গৃহহীন এক নারী বলেছেন, তালিকায় আমার নাম থাকার পরও আশ্রয়ণের ঘর বরাদ্দ পাইনি। ওই তহশিলদার ৪০ হাজার টাকা চেয়েছিলেন আমার কাছে। তা দিতে না পারায় আমার ঘর জোটেনি। ফলে আমার নাম কেটে জমিজমার একজন মালিককে সেই ঘর দেয়া হয়েছে। তা ছাড়াও ঘর বরাদ্দে অর্থ লেনদেনের একই অভিযোগ করেছেন কয়েক গ্রামের কয়েকজন নারী ও পুরুষ। সরেজমিন ঘর বরাদ্দ এলাকায় গেলে দেখা যায়, ৫৩ ও ৫৪ নং ঘরে দুই বিধবা অনশন করছেন। উভয়ের অভিযোগ- ঘর বরাদ্দের বেলায় তাদের নাম কেটে ঘর অপরকে দেয়া হয়েছে স্রেফ টাকার বিনিময়ে। ঘর বরাদ্দ না পেলে তারা ঘর ছাড়বেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এ বরাদ্দে অনিয়ম ও টাকা লেনদেন হয়েছে। তাই প্রকৃত ব্যক্তিরা ঘর পাননি। প্রতিটি ব্লকে দেখা যায়, অনেকে ঘরে উঠেছেন। তবে অনেক ঘরই এখনো তালা দেয়া। এদিকে, ঘরগুলোতে স্যানিটেশনের কাজ শেষ করা হয়নি। সেখানে নলকূপও বসানো হয়নি। আঙিনা ও রাস্তার মাটি সমান করা হয়নি। প্রবেশের কাঁচা রাস্তা বহু গর্তে ভর্তি। অভিযুক্ত তহশিলদার আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার কোনো মাথাব্যথা নেই, যা খুশি তাই লিখুন।’ বোতলাগাড়ী ইউপি চেয়ারম্যানের বক্তব্য, তালিকায় নাম কাটাকাটিকে অনিয়ম বলা যায় না। বঞ্চিতরা অনিয়মের অভিযোগ আনতে পারে।’ সৈয়দপুরের ইউএনও ফোনে বারবার বলেন, ‘পরে কথা হবে।’ তাই তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।
আমাদের প্রত্যাশা, সর্বপ্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতি দূর করার ব্যবস্থা নেয়া হবে। অন্যথায়, বঞ্চিতরা বঞ্চিতই থেকে যাবেন।


আরো সংবাদ



premium cement