যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে কি পুলিশ
- ২৯ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
ঢাকার রাস্তায় ছিনতাইকারী চক্র হানা দিচ্ছে। পথচারীদের অর্থকড়ি ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে না তারা; দুর্বৃত্তদের হামলায় প্রাণ হারাচ্ছেন পথচারী। সর্বশেষ রাজধানীর ধানমন্ডির লেকে এক প্রকৌশলী খুন হওয়ার পর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা আরো বেড়ে গেছে। রাজধানীর অভিজাত এলাকায় মানুষ যদি নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে, তাহলে অন্যান্য এলাকার অবস্থার কথা না বলাই ভালো। শুধু ছিনতাই নয়, রাজধানীতে অন্য সব অপরাধ ক্রমেই বাড়ছে। অথচ দেশে পুলিশের সংখ্যা বেড়েছে। তৈরি করা হয়েছে নতুন নতুন বিভাগ। খবরে জানা যাচ্ছে, রাজধানীর ছিনতাই চক্রের অবস্থাও বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বর্ধিত সংখ্যা ও তাদের পেছনে বিপুল ব্যয় জননিরাপত্তায় কতটা কাজে আসছে আমাদের।
সহযোগী একটি দৈনিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বরাতে দেয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে উত্তরা, মিরপুর, ধানমন্ডি, তেজগাঁও ও মতিঝিলে। এর মধ্যে ধানমন্ডিতে সবচেয়ে বেশি। গণপরিবহনে ছিনতাইয়ের ঘটনা পুরনো। আগের মতোই গণহারে তা ঘটছে। কিছু ক্ষেত্রে এমনো দেখা গেছে, ছিনতাইকারীরা এমনই সংঘবদ্ধ, তারা জোট বেঁধে সাধারণ মানুষকে আটকিয়ে নির্যাতন করছে। তাদের দুঃসাহস দেখে মানুষ শঙ্কিত। অন্য দিকে, নির্জন রাস্তা আরেকটি সুযোগ অপরাধী চক্রের জন্য। এ ক্ষেত্রে গভীর রাত কিংবা মানুষের চলাফেরা কমে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকে তারা। ছিনতাই করতে গিয়ে ধারালো ছুরি ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে। কখনো বা বেপরোয়া হয়ে পথচারীকে আক্রমণ করে বসে। এতে অনেকে প্রাণ হারাচ্ছেন।
গত আট মাসে শুধু ছিনতাইকারীদের হাতে ঢাকায় ১৮টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কত খারাপ তা বোঝা যায় বিগত মাসগুলোতে খুনের চিত্র দেখে। পুলিশের প্রতিবেদন মতে- আগস্টে ১৭, জুলাইয়ে ১৩ ও জুনে ২১ জন খুন হয়েছেন। আগের মাসগুলোর চিত্রও একই রকম ছিল। অন্য দিকে, বিভিন্ন অপরাধে আগস্টে দুই হাজার ৬১৮টি, জুলাইয়ে দুই হাজার ২৩৯টি ও জুনে দুই হাজার ৫১৩টি মামলা হয়েছে। এই দুই পরিসংখ্যান থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, রাজধানীতে অপরাধ বিপজ্জনক মাত্রায় রয়েছে। দিন দিন অবনতি হচ্ছে। শুধু কেউ খুন কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কেউ আক্রান্ত হলে এসব খবর প্রকাশ্যে আসে। অন্য সব অপরাধের ঘটনা আড়ালে থেকে যায়। স্বস্তি বোধ না করায় বেশির ভাগ মানুষ অপরাধের শিকার হয়েও থানা পুলিশে অভিযোগ দিতে আসে না। পুলিশের পক্ষ থেকেও বিষয়টি শিকার করা হয়ে থাকে।
আরো আশঙ্কার কথা খোদ পুলিশ সদস্যের কাউকে কাউকে দেখা গেছে নানা অপরাধে জড়িত হতে। বিচ্ছিন্নভাবে এগুলো ঘটলেও এ সংখ্যা কম নয়। ছিনতাই, ধর্ষণ, মানুষের সম্পত্তি দখল নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ আসছে। পুলিশ সদর দফতর জানাচ্ছে, প্রতি মাসে গড়ে দেড় হাজার অভিযোগ জমা পড়ছে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে। এগুলোর বড় একটি অংশ সঙ্ঘটিত হচ্ছে রাজধানীতে। এ ছাড়া পুলিশের নাম দিয়ে অন্যরাও ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়াচ্ছে। কয়েক দিন আগে এক পোশাককর্মী আটক হয়েছেন; যিনি পুলিশের পরিচয়ে ছিনতাই চাঁদাবাজি করছিলেন। বাংলাদেশের নিরাপত্তাবাহিনীর পরিচয় দিয়ে অপরাধ করার হার অনেক বেড়েছে। পোশাক র্যাংক ব্যাজ পরে অপরাধ করতে গিয়ে অনেকে হাতেনাতে ধরা পড়েছে।
সাধারণ অপরাধের মধ্যে ছিনতাই একটি। কোনো একটি দেশ বা শহরের জননিরাপত্তা কোন অবস্থায় রয়েছে অপরাধের এই একটি নির্দেশক দেখে অনুমান করা যায়। বাংলাদেশে সব শহরে ছিনতাইপ্রবণতা রয়েছে। অন্য সব অপরাধও বিপজ্জনক মাত্রায় বিরাজ করছে। এ প্রবণতা রোধ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে নজর দিতে হবে। পুলিশের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে নিজেরা উচ্চহারে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার উল্লেখ থাকলেও বাহিনীর অপরাধী সদস্যদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানা যায় না। পুলিশসহ অন্য সহযোগী বাহিনীর নৈতিক অবস্থান সংহত করতে তাদের কৃত অপরাধের বিচার হওয়া প্রয়োজন।
রাজধানীতে ছিনতাই বন্ধে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সব এলাকা এখন সিসিটিভির আওতায়। রয়েছে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য। প্রয়োজন শুধু এ ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে কার্যকর করা। পুলিশের নৈতিক অবস্থান সংহত করা। তাহলে আশা করা যায়, রাজধানীবাসী রক্ষা পেতে পারে চোর-ছিনতাইকারীদের কবল থেকে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা