অর্থের বিনিময়ে সুবিধা প্রদান
- ২৮ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
কেউ অপরাধ বা বেআইনি কাজ করলে তাকে আইনের আওতায় এনে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী, আদালত কাউকে কাউকে জামিন না দিয়ে কারাগারে আটক রাখার নির্দেশ দেন। আর দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কারাগারে সাজা খাটতে হয়। বিচারাধীন মামলায় আদালত অনেক আসামির জামিন নামঞ্জুর করেন; যাতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কেউ যেন অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে না পারে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে- সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশে কারাবিধি ভেঙে অনেক বন্দীকে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আয়েশি জীবনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন কারা কর্তৃপক্ষের কেউ কেউ। অবস্থা এমন হয়েছে, বন্দী থেকেও অনেক অপরাধী বাধাহীনভাবে অপরাধ জগতে নিজেদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ অর্থের বিনিময়ে আয়েশি জীবনযাপন করছেন।
একটি সহযোগী দৈনিকে গতকাল প্রকাশিত প্রধান খবরে উল্লেখ করা হয়, গাজীপুরে অবস্থিত কাশিমপুর কারাগার ও কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কক্ষ সাজিয়ে বাসার আরামে বিলাসী জীবনযাপন করছেন শতাধিক বন্দী। তারা সার্বক্ষণিক মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সুবিধা ব্যবহার করে কারাগারে বসে বাইরের নিজ নিজ অন্ধকার জগৎ চালাচ্ছেন। তাদের মধ্যে আছেন পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী, খুনি, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতা। কারাভ্যন্তরে তারা ‘মর্যাদাবান’ বন্দী হিসেবে পরিচিত। এ সুযোগ তারা নিচ্ছেন অবৈধ অর্থের বিনিময়ে। বন্দীদের আয়েশি জীবনের নিশ্চয়তা দিয়ে মাসে কোটি টাকার বাণিজ্য করছেন কিছু কারা কর্মকর্তা।
সম্প্রতি কারামুক্ত এক বন্দীর অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, টাকা খরচ করতে পারলে সন্ত্রাসী, অপরাধীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা কারাগার। বাইরে প্রতিপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভয় থাকলেও কারাগারে সেটা নেই; বরং কারাগারে বসে সবকিছু নিরাপদে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ আছে। টাকা দিলে বন্দীরা যা চান তা-ই পেয়ে যান। এমনকি গণপূর্ত অধিদফতরের অনুমতি ছাড়াই কারাগারের কক্ষগুলোতে বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ওই বন্দী আরো জানান, টাকা দিতে দেরি হলে সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হয়। আবার তা চালু করতে নেয়া হয় দ্বিগুণ টাকা। এ ছাড়া কারারক্ষী ও নায়েকরা বন্দীদের চাহিদা মতো মাদক সরবরাহ করে থাকেন। এ জন্য মাদকের প্রকারভেদে দিতে হয় আলাদা টাকা। গত ছয় মাসে কাশিমপুর কারাগারে মাদকসহ তিন কারারক্ষী গ্রেফতার হয়েছেন।
কারাগারে অপরাধীদের আটক রাখার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে, নিজেদের সংশোধনের সুযোগ দেয়া। যাতে তারা পরে মুক্ত জীবনে কারো অমঙ্গল না করে কাটাতে পারেন। দ্বিতীয় যে বিবেচনায় অপরাধীদের জামিন না দিয়ে কারাগারে আটক রাখা হয় তা হলো, শক্তিধর আসামির প্রভাবে যাতে ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত না হয়। দুর্বল যেন ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হয়। আর অপরাধ প্রমাণিত হলে তাদের সাজা খাটাই হচ্ছে আইনের বিধান।
কিন্তু অর্থের বিনিময়ে যদি কারাগারে আটক অপরাধীদের অবৈধ সুবিধা দেয়া হয় তা হলে তাদের আটকের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়। যে কারণে আমাদের দেশে কোনো অপরাধী একবার আটক হয়ে আবার মুক্ত জীবনে ফিরে এলে দ্বিগুণ উৎসাহে অপরাধকর্ম করতে থাকে।
এ বাস্তবতায় আমরা মনে করি, কারাগারে যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে আসামি ও কয়েদিদের অবৈধ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আয়েশি জীবনের ব্যবস্থা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, তাদের ব্যাপারে তদন্ত করা হোক। তদন্তে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ক্ষেত্র বিশেষে তাদের আইনের আওতায় নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। তা না হলে দেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা