২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সিন্ডিকেটের কারসাজি!

খামারিরা ডিমের দাম বাড়ান না

-

ইদানীং, ডিমের মতো প্রাণিজ আমিষের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের আকাশছোঁয়া দাম দেখে সবাই হতবাক! জানা যায়, সারা দেশে একটি সিন্ডিকেটই এর মূল্য নিয়ন্ত্রণ করছে এবং সাধারণ ডিম খামারিদের এতে কোনো হাত নেই। তাদের সিন্ডিকেটকে মেনে চলতে হয় বাধ্যতামূলকভাবে। একটি সহযোগী দৈনিকের গোয়ালন্দ সংবাদদাতা তার পাঠানো এবং সে পত্রিকায় এবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এটি জানান।
উল্লেখ্য, সারা বাংলাদেশের মধ্যে পোলট্রি সেক্টরে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে গোয়ালন্দ। এখানেও ডিমের অগ্নিমূল্য। বিশেষ করে সেই সিন্ডিকেটের বেঁধে দেয়া দামে তারা ডিম বিক্রি করছেন, যা এবার রেকর্ড অতিক্রম করেছে। সুলভ প্রোটিনের উৎসরূপে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ সাধারণত ডিমকে তাদের দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় রেখে থাকেন। তবে দেশে ডিমের বাজার আগে কোনো দিন আজকের মতো এত বেশি অস্থিতিশীল ছিল না। নানা অজুহাত দেখিয়ে ডিমের দাম বাড়ানো হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেট শক্তিশালী বিধায় তাদের কাছে ক্রেতা থেকে খামারি সবাই জিম্মি হয়ে রয়েছে। অভিযোগ আছে, ঢাকা থেকে বার্তা পাঠিয়ে সিন্ডিকেটটি বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে বিশেষ ভূমিকা একটি বড় ফার্মের। তাদের কথা অন্যথা হওয়ার উপায় নেই। এদিকে, ফিডের দাম আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এর উৎপাদন ব্যয় দিন দিন বাড়ছে। ফলে ডিমের আগুন দাম হলেও খামারিরা বেশি লাভবান হতে পারছেন না বলে দাবি করলেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, গোয়ালন্দের ছোটভাকলা ইউপির মিরাজউদ্দিন ২৫ বছর ধরে মুরগির ডিম উৎপাদনে জড়িত। কিন্তু সিকি শতাব্দীকাল এ ব্যবসায়ে সংশ্লিষ্ট হলেও তিনি নিজের ডিমের দাম নির্ধারণ করতে পারেন না। এদিকে, ডিমের দাম চরমে উঠলেও বহু খামারি লোকসান দিয়ে চলেছেন। কারণ, মুরগির খাবারের দাম বেড়েছে অনেক। ফলে দিনে শুধু ৮-৯ টাকা খরচ হয়ে যায় প্রতিটি মুরগির খাবারের জন্য। আর ডিম খামার থেকে পাইকারি ও খুচরা কারবারি হয়ে তারপর যায় ভোক্তা পর্যায়ে। এখন মানুষকে ডিম কিনতে হয় প্রতিটি ১২ টাকা দামে। কিন্তু খামারিদের তেমন লাভ বা আয় হয় না। অন্য দিকে, মাত্র কয়েক দিনেই ফার্মের মুরগির খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে অনেক। এক বস্তা খাবার এখন কিনতে হচ্ছে এক হাজার ২০০ টাকা দিয়ে। এই দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে বহু পোলট্রি খামার বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। ডিম যারা আমাদের খামার থেকে নিয়ে যায়, তারাও জানে না, এর রেট কত।’ গোয়ালন্দ পৌর এলাকার খামারি নূরে আলম বলেছেন, দীর্ঘকাল আমি পোলট্র্রি খামার করলেও এখন এতে তেমন লাভ পাই না। খাদ্য ও ওষুধসমেত অনেক কিছুর দাম বেড়েছে। এর মধ্যে আমার সব মুরগি অসুস্থ হয়ে মরে গেছে। ফলে ২০ লাখ টাকার লোকসান গুনেছি। কিন্তু পুঁজি না থাকায় ব্যবসায় আর করা যায়নি।’ দৌলতদিয়ার এক পোলট্র্রি খামারি বলেছেন, বছরে ১২ মাসের ৯ মাসই লাভ নেই। এ শিল্পে টিকে থাকাই কঠিন। কয়েক মাস ধরে ডিমের দাম অনেক বেড়েছে। এখন ডিমের উৎপাদন ব্যয় ১০ টাকা এবং ১১ টাকায় বিক্রি করে এক টাকা পাই। গোয়ালন্দ উপজেলা পোলট্র্রি মালিক সমিতি বলেছে, ভ্যাকসিন, ওষুধ ও ফিডের দাম অতিরিক্ত বেড়েছে। এখানে অনেক পোলট্র্রি খামার বন্ধ। অনেকে দাদনের চাপে আছেন; অথচ পরিশোধ করতে পারছেন না। কারণ ডিমের ব্যবসায়ে তাদের বেশি লাভ নেই।
সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা উচিত যেন পোলট্র্রি ফিডের দাম সহনশীল পর্যায়ে নেমে আসে। খামারিদের দুরবস্থা আগে দূর করা উচিত। না হয় এই শিল্প টিকবে না এবং বহু লোক তখন বেকার হয়ে পড়বে।


আরো সংবাদ



premium cement