২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে প্রাণহানি-ফসল বিনষ্ট

ক্ষতি কাটাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিন

-

দেশের দক্ষিণ উপকূল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যভাগ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং তার ক্ষত রেখে গেছে। ঘর চাপাপড়ে, গাছচাপায়, পানিতে ডুবে, নৌযান ডুবে এ পর্যন্ত ৩৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। প্রবল বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে বহু স্থানে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বিদ্যুতের লাইন, উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি। দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েক লাখ মানুষ গত মঙ্গলবার পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন ছিলেন।
সিত্রাং নিয়ে গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণপ্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের ৪১৯টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ইউনিয়নে আনুমানিক ১০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ছয় হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে এবং এক হাজার মাছের ঘের ভেসে গেছে।
প্রশ্ন হলো, তুলনামূলক কম শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে কেন এত ক্ষতি হলো? অনেক আবহাওয়াবিদ মনে করেন, আমাদের আবহাওয়া অধিদফতর এবার সঠিকভাবে সিত্রাংয়ের পূর্বাভাস দিতে পারেনি। শুরু থেকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের পূর্বাভাস নিয়ে দোলাচলে ছিল আবহাওয়া অধিদফতর।
বাংলাদেশের উপকূলের কোন অঞ্চল দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি ঢুকবে, এ নিয়েও ছিল বিভ্রান্তি। আবহাওয়া অধিদফতরের বেলা ২টার বুলেটিনে বলা হয়েছিল, ‘ঘূর্ণিঝড়টি পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে’। সাড়ে চার ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার বুলেটিনে বলা হয়, ‘এটি ভোলার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম শুরু করতে পারে’।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর, ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর, যুক্তরাষ্ট্রের জুম আর্থসহ অন্যান্য সংস্থা মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে সকালের মধ্যে সিত্রাং আঘাত করতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল। এসব পূর্বাভাস, বিশেষ করে আবহাওয়া অধিদফতরের প্রায় সব পূর্বাভাসক ভুল প্রমাণ করে সোমবার রাত ৯টায় বাংলাদেশে আঘাত করে। আর সন্ধ্যা ৬টায় ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ বাংলাদেশের উপকূলে পৌঁছায়।
এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, ‘সিত্রাং বেশ অস্বাভাবিক আচরণ করেছে। বারবার গতিপথ পরিবর্তনের কারণে এটি কোথায় আঘাত করবে, তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না। আর রাত ৯টায় ভোলায় আঘাত হানার পর আবহাওয়া অধিদফতর বুঝতে পারলেও বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ ব্যাহত হওয়ায় তা অধিদফতরের ওয়েবসাইটে তুলে ধরতে দেরি হয়ে যায়।
ঘূর্ণিঝড় আদৌ রাত ৯টায় নাকি তারও আগে বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হেনেছে, তা নিয়েও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি এবং দুর্যোগবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল একটি সহযোগী দৈনিককে বলেন, ‘সিত্রাং আঘাত হানার সময় নিয়ে বিভ্রান্তি ও পূর্বাভাস না মেলার বিষয়ে আমি আবহাওয়া অধিদফতরের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। তাদের সাথে কথা বলে আমার মনে হয়েছে, আবহাওয়াবিদ্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেয়ার আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে দক্ষ জনবল কম আছে। এ ক্ষেত্রে তাদের আরো দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। নইলে ভবিষ্যতে এমন ভুল থেকে আরো বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগের পূর্বাভাস যতটা সম্ভব নির্ভুল ও যথাসময়ে দেয়া উচিত। কোন এলাকায় আঘাত হানতে পারে, সেটিও যতদূর সম্ভব নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এতে ওই অঞ্চলের মানুষ নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পর্যাপ্ত সময় পাবে। এমনিতে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বে বিপদে রয়েছে যে,সব দেশ, এর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম সারিতে। আগামী দিনে প্রাকৃতি দুর্যোগ আমাদের আরো বেশি করে মোকাবেলা করতে হবে।
আমরা মনে করি, প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য আবহাওয়া অধিদফতরের আধুনিকায়ন ও দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে। তবে তার আগে সিত্রাংয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। সেখানে অবশ্যই কৃষি খাতকে রাখতে হবে অগ্রাধিকারের তালিকায় সর্বপ্রথম। কারণ, বিশ্বে খাদ্যসঙ্কট দ্রুত ধেয়ে আসছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল